সেই একই রকম তো আছেন। উইকেটের সামনে সেই একটু ঝুঁকে স্টান্স, ব্যাকফুটে গিয়ে চকিত স্কোয়্যার কাট, চল্লিশের শরীরেও সেই পুরনো রিফ্লেক্স। তাঁর আশেপাশে যাঁরা, অর্ধেক হয়তো স্কুলছাত্র ছিলেন লর্ডসে ধ্রুপদী কর্নাটকীর অভিষেকের দিন।
আজ কেউ পঁচিশ, কেউ আঠাশ। রাহুল দ্রাবিড় চল্লিশ। তবু পাঁচতলা উঁচু ক্যাচগুলোর একটাও ফসকায় না। অসহ্য গরমে দরদর করে ঘামতে ঘামতে গোটা ইডেন চক্কর দিয়ে শ্রীবৎস-রাহানেদের ব্যাটিং যখন মন দিয়ে দেখেন, এক বারও মনে হয় না তিনি ক্লান্ত।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আজ অবসরের দুনিয়ায়। সচিন তেন্ডুলকর আজ ক্রিকেট-সায়াহ্নে। তিনি রাহুল শরদ দ্রাবিড় কখনও শিক্ষক। কখনও শিক্ষার্থী। কখনও টিমের ‘বড়দা’। সহজ বাংলায়, জীবনের শেষ আইপিএলেও ক্রিকেট-পাঠে মগ্ন।
একটু বেপরোয়াও নন কি? যে ইডেন তাঁকে ক্রিকেট কেরিয়ারের বেশ কয়েকটা স্মরণীয় ইনিংস উপহার দিয়েছে, যেখানে ভারতের জার্সিতে তিনি ব্যাট করতে নামা মানে ছিল অবিরাম ‘দ্রাবিড়-দ্রাবিড়’ শব্দব্রহ্ম আর অবধারিত মেক্সিকান ওয়েভ, সেই ইডেনেই আজ তিনি এক অভূতপূর্ব সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি। |
আজ দ্রাবিড়ের জয় মানে কেকেআরের বিদায়। শহরের ‘প্রিয়’ ক্রিকেটারের হাতেই শহরের হৃদয় ভেঙে যাওয়া। দিল্লির কাছে জঘন্য হারের পর কেকেআরকে প্লে অফে উঠতে হলে বাকি ছ’টা ম্যাচের ছ’টাতেই জিততে হবে। দ্রাবিড় জানেন সেটা?
বৃহস্পতিবার সকালে টিম হোটেলে এক অনুষ্ঠানে দ্রাবিড় যে ভঙ্গিমায় উত্তরটা দিলেন, তা অপরিচিত। প্রচারবিমুখ, বরাবরের অন্তর্মুখী চরিত্রটা যেন উধাও। বরং বেপরোয়া জবাব এল, “সত্যি কথা বলতে, আমরা অন্য টিম নিয়ে ভাবছিই না। প্লে-অফের চারটে টিমের মধ্যে যদি আমার টিম থাকে, তা হলে বাকি তিনটে টিম কারা হল, কে কোথায় ছিটকে গেল, কিছু যায় আসে না।”
শুনলে রাজস্থান অধিনায়ককে অসম্ভব স্পিরিটেড মনে হবে। স্বাভাবিক। মহাতারকা ছাড়াও টিমের পারফরম্যান্স গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী, টিমে টেনশনের ‘ট’-ও নেই। যাকে খুশি বেছে নিন, ঘুরেফিরে সেই একই কথা শুনবেন।
জেমস ফকনার: ম্যাচের আগের দিন রসগোল্লায় কামড় বসাচ্ছেন! রাজস্থান রয়্যালস ছাড়া আইপিএলের আর কোন টিমে খেলতে চান জিজ্ঞেস করলে তৎক্ষণাৎ জবাব, “রাজস্থান রয়্যালস!”
ব্র্যাড হজ: প্রাক্তন নাইট। হিন্দি বলার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন!
শ্রীবৎস গোস্বামী: প্রথম এগারোয় থাকছেন না। শুক্রবারও হয়তো নেই। তবু বলে ফেলছেন, “টিম কম্বিনেশনের পক্ষে কোনটা ভাল, কোনটা নয়, আমাকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হচ্ছে। ভাসা ভাসা কোনও ব্যাপার নেই আমাদের টিমে। তাই রাগ বা হতাশার জায়গাও নেই।” |
শান্তাকুমারন শ্রীসন্থ: ক্রিকেটজীবন শেষ হতে বসেছিল। আইপিএল যাঁর প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ। দুপুরে বলেও দিলেন, “জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখি। আর ফিরে আসার ব্যাপারে রাহুল ভাই যে ভাবে ব্যাক করছে, ভুলব না।”
অজিঙ্ক রাহানে: “রাহুল ভাই টিমে সিনিয়র, জুনিয়র দেখে না। টিমটাকে দারুণ সামলাচ্ছে।”
সুখী পরিবারের মন ভাল করে দেওয়া ছবি। যেখানে ক্যাপ্টেনের ফাটকা খেটে গিয়ে অনামী সঞ্জু স্যামসন রাতারাতি তারকা, আঠারো বছরের প্রাক্তন নাইট সঞ্জুর ছবি তুলতে ক্যামেরার শাটারে অগুন্তি হাত, যেখানে টিমের ‘মেন্টর কাম ক্যাপ্টেন’ দেশ ঘুরে প্রতিভা তুলে আনেন, ‘তারকা নয়, টিম’ মন্ত্রে বিশ্বাসী থেকে। কোন জাদুমন্ত্রে এ জিনিস সম্ভব? রাহুল দ্রাবিড় বলবেন, “অ্যাডাপ্টেবিলিটি। জীবনের সব ক্ষেত্রেই জিনিসটা দরকার। দরকার অন্যদের সাফল্যে সমান খুশি হওয়া।”
ঘরের টিমে আবার কোনও মন ভাল করে দেওয়া ফ্রেম খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। দিল্লির কাছে সাত উইকেটে হারের হ্যাংওভার পুরোদস্তুর বিদ্যমান। অশান্তি অন্দরমহলে। কোচ ট্রেভর বেলিস আর অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরের দর্শন মিলছে না, কথাবার্তাও প্রায় বন্ধ। চেন্নাই ম্যাচে কালিসের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে লেগে থাকলে দিল্লি ম্যাচে বিতর্কের কেন্দ্রে সুমিত নারওয়ালের অন্তর্ভুক্তি। দিল্লির হয়ে রঞ্জিতে বোলিং ওপেন করা নারওয়াল রায়পুরে বলই পাননি। টিমের মধ্যেই প্রশ্ন, তা হলে নারওয়ালকে খেলানো হল কেন? কারও কারও আবার বক্তব্য, সামি আহমেদের মতো জাতীয় দলের পেসার থাকতে নারওয়ালের খেলারই কথা নয়। টিমে বিভাজনের ইঙ্গিত আরও স্পষ্ট। কারও কারও মনে হচ্ছে, সামনের বছর থিঙ্কট্যাঙ্কে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বেলিস আবার একহাত নিচ্ছেন ব্যাটসম্যানদের। বলে রাখছেন, “খারাপ ব্যাটিংয়ের জন্য বেশির ভাগ ম্যাচেই ডুবতে হয়েছে। চাপ পড়ছে বোলার আর ফিল্ডারদের উপর।”
চাপের নমুনা, দিল্লি ম্যাচে তিনটে সহজ ক্যাচ ফসকানো। ফসকেছেন গম্ভীর, ফসকেছেন নারওয়াল।
চাপের নমুনা, রাতারাতি শাহরুখ খানের কলকাতা উড়ে আসা। এক মাস পর আবার শুক্রবার সকালে শহরে ঢুকছেন শাহরুখ। মাঠে তো বটেই, টিম মিটিংয়েও থাকছেন।
ভাল। বলিউডের বক্স অফিসে অগুন্তি শুক্রবার বাদশা থেকেছেন তিনি। ভাগ্যের বক্স অফিসে মে মাসের প্রথম শুক্রবার তাঁর কেমন যায়, সাক্ষী থাকবে পঁয়ষট্টি হাজারের ইডেন। |