রায় সুপ্রিম কোর্টের
রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত রদ, ফাঁসি কমে যাবজ্জীবন
ক রাষ্ট্রপতি তার প্রাণভিক্ষার আবেদন গ্রহণ করে তাকে ‘দয়া’ করেছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির সেই সিদ্ধান্তে খুশি হয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ফের তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে আসামির আবেদন খারিজ করার সুপারিশ করে রিপোর্ট পাঠান। মাঝখানে কেটে গিয়েছে ছ’টি বছর। ফলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সই করা রিপোর্টটি পৌঁছয় পরবর্তী রাষ্ট্রপতির কাছে। আগের রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের কথাও এই রিপোর্টে চেপে যাওয়া হয়। নতুন রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে কেন্দ্র তথা রাষ্ট্রপতির ১২ বছর সময় লাগানোর ‘দীর্ঘসূত্রতার’ উল্লেখ করে শেষে অসমের মহেন্দ্র দাসের ফাঁসির শাস্তি কমিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। কাল শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভি ও এস জে মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জোড়া খুনের মামলার আসামি মহেন্দ্র দাসের শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবনের আদেশ দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করার পরেও সুপ্রিম কোর্ট প্রাণদণ্ড রদ করেছে, এমন নজির নেই তা নয়। এর আগে জনৈক দয়া সিংহের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্রেফ দীর্ঘসূত্রতার কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ রদ করে। ১৯ পাতার রায়ে বিচারপতিরা দয়া সিংহ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন রায়টিরও উল্লেখ করেছেন।
১৯৯০ সালে ‘অসম মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক রঞ্জন দাসকে হত্যা করার অভিযোগে মহেন্দ্র প্রথম বার গ্রেফতার হন। কিন্তু পুলিশ সময় মতো চার্জশিট দিতে না পারায় তাঁর জামিন হয়ে যায়। জামিনে মুক্ত থাকার সময়ে, ১৯৯৬ সালের ২৪ এপ্রিল ফ্যান্সি বাজারে ‘অল অসম ট্রাক ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক হরকান্ত দাসকে প্রকাশ্য দিবালোকে, গলা কেটে হত্যা করে মহেন্দ্র। এর পর এক হাতে দা, অন্য হাতে হরকান্তবাবুর মাথা-সহ সে থানায় হাজির হয়। ১৯৯৭ সালে দায়রা আদালত তাকে ফাঁসির আদেশ শোনায়। ১৯৯৮ সালে গৌহাটি হাইকোর্ট ও ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের সেই আদেশ বহাল রাখে। এর পর মহেন্দ্রবাবুর পরিবার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণনের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। নারায়ণনের পর রাষ্ট্রপতি হন এ পি জে আব্দুল কালাম। ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মহেন্দ্রর প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করার সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি কালামের কাছে রিপোর্ট পাঠায়। কালাম সেই সুপারিশ অগ্রাহ্য করেই মহেন্দ্র দাসের আবেদন গ্রহণ করে তাঁকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের সেই সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতি মহেন্দ্র দাসের যাবজ্জীবন ও পাশাপাশি তাঁর যথাযোগ্য কাউন্সেলিংয়ের কথা বলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কালামের সেই সিদ্ধােন্তের সঙ্গে একমত না হয়ে ফাইল চেপে বসে থাকে। ২০১১ সালে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সই করা ৬ পাতার আরেকটি রিপোর্ট পাঠিয়ে ফের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করার সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই রিপোর্টে রাষ্ট্রপতি কালামের সিদ্ধান্তের কথাটি পুরোপুরি চেপে যাওয়া হয়। ২০১১ সালে প্রতিভা পাটিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সুপারিশ ক্রমে মহেন্দ্রনাথের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দেন।
মহেন্দ্রবাবুর পরিবার হাইকোর্টের রিট পিটিশন দাখিল করে। তাঁর বক্তব্য ছিল ১৬ বছর জেল তাঁর খাটা হয়ে গিয়েছে। একই অপরাধে, দু’রকম সাজা হয় না। তাই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হোক। গত বছর ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ফাঁসির পক্ষেই রায় দেয়। ফের তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যান। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর ফাঁসির আদেশ রদ করল।
রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের পরে সুপ্রিম কোর্ট রায় বদলাবে, এমন আশা করেননি ৫০ বছরের মহেন্দ্র দাস ও তাঁর পরিবার। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, জঙ্গি দেবেন্দ্রপাল সিংহ ভুল্লার একই আবেদন করলেও তাঁর ফাঁসির আদেশ বহাল ছিল। সুপ্রিম কোর্ট তখন বলেছিল, ‘‘ফাঁসি প্রদানে বিলম্ব, অপরাধীর শাস্তি লঘু করার যুক্তি হতে পারে না।’’ কাল সিঙ্ঘভি ও মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আদালতের রায় শোনার পরে বরপেটায় মহেন্দ্রনাথের বাড়িতে খুশির বন্যা। মা কুসুমবালা দাস বলেন, “মা হয়ে ছেলের মৃত্যু দেখতে হবে না এ যে কত বড় শান্তি। ভগবান কথা শুনেছেন। এই বার শান্তিতে মরতে পারব।” নিহত হরকান্ত দাসের ছেলে অমল দাস বলেন, “বাবাকে মেরে মহেন্দ্র আমাদের পরিবারের যে ক্ষতি করেছে, তার জন্য ওকে কখনও ক্ষমা করব না। তবে মহেন্দ্রর বৃদ্ধা মা’কে শেষ জীবনে ছেলের ফাঁসি দেখতে হল না। ফাঁসি না হলেও মৃত্যু অবধি দাসকে কারাগারে কৃতকর্মের যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে এটাই শান্তি।”
আর ফের জীবন ফিরে পাওয়া দাস বলছেন, “কারাগারে ভগবত গীতাই আমার সঙ্গী। ঈশ্বরের করুণাতেই নতুন জীবন পেলাম।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.