অসুস্থ বা আহত ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব ভবিষ্যতে যাঁদের উপরে বর্তাবে, সেই ভাবী চিকিৎসকেরাই চোর সন্দেহে এক যুবককে বেধড়ক পিটিয়ে আধমরা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্তেরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেন হস্টেলের বাসিন্দা। তাঁদের নাম বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জানা না গেলেও বৌবাজার থানার পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, যে যুবককে বেধড়ক পেটানো হয়েছে, তাঁর নাম মহম্মদ আসিফ (২২)। তাঁর বাড়ি এন্টালি থানা এলাকার কাপালি বাগান লেনে। আসিফের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের সুপার দিব্যেন্দু গৌতম বলেন, “যত দূর জানি চুরির ঘটনায় ওই যুবক ধরা পড়েন। তার পরে হস্টেলের ছেলেরা তাঁকে মারধর করে। এখন যুবকের অবস্থা স্থিতিশীল। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।” যদিও পুলিশ জানায়, এ দিন রাত পর্যন্ত ওই যুবকের বিরুদ্ধে কোনও আবাসিক চুরির অভিযোগ দায়ের করেননি।
পুলিশ এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মীরা জানান, বুধবার সকাল ৬টা নাগাদ আসিফ ২১৭ বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মেন হস্টেলে ঢোকেন। হস্টেলের কয়েক জন পড়ুয়াকে তিনি বলেন, শম্ভুনাথ সাহু নামে হস্টেলের এক চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। হস্টেলের আবাসিকেরা আসিফকে জানান, ওই নামের কোনও চিকিৎসক হস্টেলে থাকেন বলে তাঁদের জানা নেই। |
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে, তার পরেও আসিফকে হস্টেলের ভিতরে ঘোরাফেরা করতে দেখে কয়েক জন আবাসিকের সন্দেহ হয়। আসিফ ল্যাপটপ চুরি করতে হস্টেলে ঢুকেছেন, এই সন্দেহে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন হস্টেলের আবাসিকেরা।
হাসপাতালের ভিতরের কর্মী আবাসনের বাসিন্দারা জানান, সকাল দশটা নাগাদ তাঁরা দেখেন, আবাসনের চত্বরে এক যুবক পড়ে রয়েছেন। তাঁর সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন, মুখে ঘন কালশিটের দাগ। খোঁজ নিয়ে কর্মী আবাসনের কয়েক জন আবাসিক জানতে পারেন, ওই যুবককে চোর সন্দেহে পেটানোর পরে তাঁদের আবাসন চত্বরে ফেলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্মী ওই আবাসনে থাকেন। তিনি হস্টেলের কয়েক জন আবাসিকের কাছে জানতে চান, কী কারণে ওই যুবককে এ ভাবে মারা হল। তিনি এও জানতে চান, যদি ওই যুবককে চোর বলে সন্দেহ করা হয়, সে ক্ষেত্রে পুলিশ ডেকে তাদের হাতে তাঁকে তুলে দেওয়া হল না কেন। পুলিশের কাছে ওই যুবক জানান, আবাসিকেরা তাঁকে জানিয়ে দেন, এই ব্যাপারে তাঁকে নাক গলাতে হবে না। বৌবাজার থানার পুলিশ ওই দিন দুপুরে আসিফকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করায়।
অভিযুক্তদের এখনও কেন গ্রেফতার করেনি পুলিশ? পুলিশের দাবি, থানায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে জানতে পেরে মূল অভিযুক্তেরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। স্রেফ সন্দেহের বশে এমন একটি কাজ করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি ওই মেডিক্যাল পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবেন? কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তেমন কোনও ভাবনা তাঁদের নেই। |