টানা এগারো দিন স্কুলে আসেননি খোদ প্রধান শিক্ষকই। স্কুলের চাবিও দিয়ে যাননি কাউকে। ফলে সেই ক’দিন বন্ধ হয়ে যায় মিড-ডে মিল। এমনকী স্কুল চালাতে হয় লাগোয়া গাছতলাতে। রামপুরহাট থানার আয়াষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সহকারি শিক্ষকদের আনা এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকও। বৃহস্পতিবার স্কুলে পৌঁছলে প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ চক্রবর্তীকে তিন ঘণ্টা তালা বন্ধ করে রাখলেন ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ। ঘটনায় আটকা পড়েন স্কুলের অন্য শিক্ষকেরাও। পরে খবর পেয়ে গ্রামে পৌঁছে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। ভোলানাথবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকারই করেছেন।
এ দিনের অন্দোলনকারীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক নানা বেনিয়মের কাজ করছেন। তাঁর জন্যই স্কুলের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। এলাকায় অনেকের কাছে নানা কারণে তিনি ধারও রেখেছেন বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। স্কুলের সহকারি শিক্ষক সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়, শ্রমনা মণ্ডল-সহ অন্য শিক্ষকরাও বলেন, “প্রধান শিক্ষক আমাদের কাউকে চাবি না দিয়ে এগারো দিন স্কুলে আসেননি। ওই পরিস্থিতিতে আমরা পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের কথা মাথায় রেখে গাছতলাতে স্কুল চালাই। সংশ্লিষ্ট অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের নির্দেশে অস্থায়ী ভাবে শিক্ষকদের হাজিরা নথিভুক্ত করার জন্য নতুন খাতাও কেনা হয়।” ওই ক’দিন অবশ্য পড়ুয়াদের উপস্থিতির কোনও নথি রাখা যায়নি, মিড-ডে মিলও চালু রাখা যায়নি বলে তাঁরা জানিয়েছেন। রামপুরহাট পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অনঙ্গমোহন আলিপাত্র বলেন, “ওই প্রধান শিক্ষক কাউকে কিছু না জানিয়েই স্কুলে যাননি। গত সোমবার এ নিয়ে স্কুলের সহকারি শিক্ষকেরা আমার কাছে অভিযোগ করেন।” তাঁর দাবি, “আমি ওই দিনই প্রধান শিক্ষককে অফিসে ডেকে পাঠাই। তাঁকে শো-কজও করি। পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন।”
এ দিকে স্কুলের গ্রাম শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান বিপিন মণ্ডল, শিক্ষাবন্ধু লোকনাথ মণ্ডল বলেন, “এলাকাবাসীর কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা বেনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নার জন্য তিনি এলাকার একটি মুদিখানা থেকে ধার করেছেন। টাকা ধার রেখেছেন জ্বালানির দোকানেও। এমনকী মিড-ডে মিল রাঁধুনিদের গত দু’ মাসের বেতনও দেননি। প্রধান শিক্ষকের কাছে টাকা পাবেন স্কুলের প্রাচীর নির্মাণকারী রাজমিস্ত্রিরাও।” তাঁদের দাবি, এই ভাবেই এলাকাবাসীর প্রায় ২০ হাজার টাকা তিনি ধার মেটাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে অভিভাবক, পাওনাদার ও বাসিন্দাদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষককে আটকে রাখেন।
এ দিন স্কুলে গিয়েই গ্রামবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়েন ওই প্রধান শিক্ষক। যদিও তাঁর দাবি, “আমি ওই ক’দিন অসুস্থ ছিলাম বলেই স্কুলে যেতে পারিনি। স্কুল চালু রাখার জন্য চাবি দিতে চাইলে অন্য শিক্ষকেরাই তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন।” তাঁর ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অনঙ্গমোহনবাবু বলেন, “অসুস্থ থাকলে বিধিবদ্ধ নিয়ম মেনে ছুটি নেওয়া যায়। ভোলানাথবাবু কিন্তু তা করেননি।” অন্য দিকে, এলাকায় টাকা ধার রাখার অভিযোগ প্রসঙ্গে ভোলানাথবাবু বলেন, “পাওনাদারেরা কিছু টাকা পাবেন। খুব শীঘ্রই তা মিটিয়ে দেওয়া হবে।” এ দিনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনঙ্গমোহনবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ পেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |