পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের রেল কর্মচারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনে জিতল বামেদের সংগঠন ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়ন। নির্বাচনে কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত ইস্টার্ন রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ওর্য়াকার্স কংগ্রেস। ইআরএমইউয়ের সঙ্গে প্রায় গায়ে গায়ে লড়াই করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইর্স্টান রেলওয়ে মেনস্ কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনে বিজয় মিছিল বের করেন বামেরা। ফলাফলে সন্তুষ্ট মেনস্ কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দও।
এ বার নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার। তার মধ্যে ১৩ হাজারের কিছু বেশি সংখ্যক ভোট পড়েছে। ২৫, ২৬ ও ২৭ এপ্রিল সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপন ব্যালটে শ্রমিক কর্মীরা ভোট দিয়েছেন। এ দিন সকাল আটটা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। সকাল থেকেই ডিভিশনাল কার্যালয়ে টানটান উত্তেজনা ছিল। তবে ভোটের ফলাফল অনুকূলে যাবে, এমনটাই আশা করেছিল বামেরা। বিজয় মিছিলের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পোস্টার, ফেস্টুন, পতাকায় ডিভিশনাল কার্যালয় ও স্টেশন চত্বর মুড়ে রাখা হয়েছিল। বিকাল নাগাদ ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, মেনস ইউনিয়ন পেয়েছে ৫৯৬৬টি ভোট। মেনস কংগ্রেসের দখলে গিয়েছে ৫৪৫১টি ভোট। সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছে তৃণমূল অনুমোদিত ওর্য়াকার্স কংগ্রেস। তাদের প্রাপ্ত ভোট ৪১৬টি। ফলাফল ঘোষণার পরই বাম কর্মী সংগঠনের সদস্য সমর্থকেরা বাঁধভাঙা উছ্বাসে রাস্তায় নেমে আসেন। ডিভিশনাল কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় মিছিল শুরু হয়ে যায়। আর সকাল থেকে তৎপরতা থাকলেও বেলা বাড়তেই রণে ভঙ্গ দেন তৃণমূল প্রভাবিত ওয়ার্কাস কংগ্রেসের সদস্য সমর্থকদের।
২০০৭ সালে প্রথম রেল কর্মচারী প্রতিনিধিত্বের নির্বাচনে গোপন ব্যালটে ভোট গ্রহন শুরু হয়। সে বছর আসানসোল ডিভিশনে প্রথম হয়েছিল পূর্ব রেলওয়ে কর্মচারী সঙ্ঘ, দ্বিতীয় স্থানে ছিল বামেরা আর তৃতীয় স্থান দখল করেছিল মেনস কংগ্রেস। তবে এ বারের নির্বাচনে ১১২৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে পূর্ব রেলওয়ে কর্মচারী সঙ্ঘ। মেনস ইউনিয়নের শাখা সম্পাদক সুধীর রায় জানান, সর্বভারতীয় স্তরে রেল শ্রমিক কর্মীদের দাবিদাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রণী ভূমিকা দেখেই শ্রমিক কর্মীরা বিপুল মাত্রায় তাঁদের জিতিয়েছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূলের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে বলেই ওদের ভুঁইফোড় সংগঠনকে শ্রমিক কর্মীরা সমর্থন করেননি।” প্রায় একইরকম মন্তব্য করেছেন মেনস কংগ্রেসের আসানসোল ডিভিশনের কার্যকরী সভাপতি পিএল মিত্র। তিনি বলেন, “সর্বভারতীয় স্তরে দাবিদাওয়া আদায় করতে গেলে সর্বভারতীয় সংগঠনকেই পাশে রাখতে হবে একথা বুঝেছেন শ্রমিক কর্মীরা।” তিনি আরও জানান, এই জন্যই দু’টি সর্বভারতীয় সংগঠনই বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়েছে। সদ্য গজিয়ে ওঠা তৃণমূলের সংগঠনে যাননি শ্রমিক কর্মীরা। তবে এই তত্ত্ব মানতে নারাজ তৃণমূল প্রভাবিত ওয়াকার্স কংগ্রেসের আসানসোল ডিভিশনের নেতা সোনু যাদব। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কার্যত উহ্য রেখেই তাঁর দাবি, অল্প দিন গড়ে ওঠা এই সংগঠন তেমন প্রচার পায়নি বলেই আশানুরূপ ফল হয়নি।
|