প্যান কার্ড দূরের কথা। রেশন কার্ড কিংবা সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রও নেই। তাই ইচ্ছে থাকলেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে কিংবা ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা জমাতে পারেন না ছিটমহলের বাসিন্দারা। সেই সুযোগই নিয়েছিল বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। তাঁদের কথায় ভরসা করে লগ্নি সংস্থাগুলিতে কেউ স্থায়ী আমানত করেছিলেন, কেউ আবার মাসে মাসে টাকা রেখেছেন। এই ভাবেই এই এলাকা থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা বিভিন্ন লগ্নি সংস্থাগুলি তুলেছে বলে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির এক প্রাথমিক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে সারদা-র আমানতকারীরাও রয়েছেন। |
বাংলাদেশ ভূখন্ড ঘেরা ভারতের ১১১টি ও ভারত ভূখন্ড ঘেরা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নেই। এই সমস্যা বহু দিনের।” ছিটমহল সমন্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ছিটমহলের বাসিন্দারা ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে টাকা জমাতে পারেন না। তাই ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের ছিটমহলের বাসিন্দারাই সারদা-সহ একাধিক সংস্থায় টাকা জমিয়েছিলেন। দু’হাজার পরিবার চিহ্নিত হয়েছে। তাঁরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে অন্তত ১ কোটি টাকা বিভিন্ন সময়ে তোলা হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।” তিনি অভিযোগ করেন, “বেআইনি ভাবেই ওই এজেন্টরা ছিটমহলগুলিতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।”
এলাকার মানুষের বক্তব্য, বাড়িতে বসে টাকা জমানোর সুযোগ পেয়ে অনেকেই স্বস্তি পেয়েছিলেন। পোয়াতেরকুঠি ছিটমহলের বাসিন্দা শাহাজাদা হোসেন বলেন, “এজেন্ট এসে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে যেত। প্রায় ৮ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। সারদা কাণ্ডের পর আর এজেন্টের খোঁজ পাচ্ছি না।” নলগ্রামের বাসিন্দা সুধীর বর্মন জানান, মাসে ৪০০ টাকা করে একটি সংস্থায় টাকা জমা দিতেন। ১৮ মাস টাকাও দিয়েছেন। তিন বছরের মেয়াদ শেষের আগে টাকা তোলা যাবে না বলে এজেন্ট এখন বলছেন। তাঁর কথায়, “নাগরিকত্ব ঠিক না থাকায় সরকারি সাহায্য পাব কি না, বুঝতে পারছি না।” জেলাশাসকের পরামর্শ, “ওই বাসিন্দারা আগে পুলিশে অভিযোগ জানান। তার পরে দেখা যাক কী করতে পারি আমরা।” |