আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবিতে এ বার পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন সারদা সংস্থার জেলার এজেন্টরা।
মঙ্গলবার ওই এজেন্টদের পক্ষে কৃষ্ণপদ মাহাতো বলেন, “যে সংস্থা আমানতকারীদের টাকা আত্মসাত্ করেছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেও যেন আমানতকারীদের মূলধনটুকু অন্তত ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, প্রশাসনের কাছে এটাই আমাদের আবেদন। আবেদন নিয়ে আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।” এজেন্টদের আরও বক্তব্য, “সারদার বিপর্যয়ের পর কিছু জায়গায় আমরাও আক্রমণের শিকার হয়েছি। এজেন্টরা বেকার হিসেবে দুটো পয়সার জন্য সংস্থায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা তো জানতেন না সংস্থা এ ভাবে আত্মসাত্ করবে।” শুধু সারদা নয়, পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আরও একাধিক অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসগুলিতে হানা দেওয়াও শুরু করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার হুড়া থানা এলাকায় এ ধরনের একাধিক সংস্থার অফিসে হানা দেয় পুলিশ। হুড়া থানার বেশিরভাগ অফিসই রয়েছে লালপুরে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে প্রায় ১৭-১৮টি লগ্নি সংস্থার অফিস রয়েছে। পুলিশ কর্মীরা এ দিন বিভিন্ন অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার মালিকের নাম কী, কোথায় সেই সংস্থার সদর দফতর, অফিসে কত জন কর্মী রয়েছেন, তাঁদের বাসস্থান, কত জন এজেন্ট কাজ করছেন, কত টাকার লেনদেন হয়এ সমস্ত তথ্য জানার চেষ্টা করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। এই অভিযান আপাতত চলবে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “আমরা বিভিন্ন থানা এলাকায় থাকা লগ্নি সংস্থার অফিসগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি।” |
অন্য দিকে, বাঁকুড়ায় নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলায় ওই সংস্থার দফতরে মঙ্গলবার দুপুরে বেশ কিছু এজেন্ট ও আমানতকারীরা বিক্ষোভ দেখান। অফিস খোলা থাকলেও সংস্থার কোনও আধিকারিক বা কর্মী অবশ্য ছিলেন না।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংস্থাটির এজেন্ট, বাঁকুড়ার বাসিন্দা প্রণব কর, বিশ্বজিত্ মুখোপাধ্যায়, চন্দন মুখোপাধ্যায়রা জানান, গত ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে যে সমস্ত আমানতকারীর মেয়াদ শেষ হয়েছে, মঙ্গলবার থেকে আগামী রবিবারের মধ্যে তাঁদের টাকা চেকের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু, মঙ্গলবার দফতরে কর্তাব্যক্তিরা আসেননি। এজেন্টদের দাবি, দেড় বছর আগে মাচানতলায় এই সংস্থার অফিস চালু হয়। এখনও পর্যন্ত এই সংস্থা প্রায় ২০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে বাঁকুড়ায়। জেলা জুড়ে প্রায় ১০ হাজার এজেন্ট আছেন।
এজেন্টদের বক্তব্য, “এই সংস্থার মিনারেল ওয়াটার, মোটরবাইকের কারখানা-সহ বেশ কিছু ব্যবসা ছিল বলে আমাদের বলা হয়েছিল।” সংস্থার আমানতকারী, বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ার বাসিন্দা গৌরাঙ্গ কর বলেন, “আমি এক বছর ধরে এই সংস্থায় ৬০ হাজার টাকা জমিয়েছি। মেয়াদ পার হয়ে গেলেও এখনও টাকা পাইনি।” আর এক আমানতকারী গোপাল সিদ্ধান্ত বলেন, “২০ হাজার টাকা রেখেছি। মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু আমি টাকা তুলে নিতে চাই।” সংস্থাটির বাঁকুড়া শাখার ম্যানেজার কৌশিক পালের মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। বিক্ষোভকারী এজেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া সংস্থার অন্য দুই কর্মকর্তার নম্বরেও যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। বাঁকুড়ার এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই সংস্থার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত হবে।” |