ইস্টবেঙ্গল ৪
(চিডি-পেনাল্টি, বরিসিচ, পেন- ২)
সায়গন এফ সি ১
(আমৌগৌ) |
ইতিহাস গড়েও ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের মুখে হাসি নেই! “ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে ভাল লাগছে। সব কৃতিত্ব ছেলেদের”, বলেই চুপ করে গেলেন ইস্টবেঙ্গলের সাহেব কোচ।
ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন আধ ঘণ্টা আগে। প্রথম কোচ হিসাবে গ্রুপ লিগে অপরাজিত থেকে এ এফ সি কাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছেন দলকে। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস কোথায়? কেমন যেন আনমনা। উদাসীন।
একবার মাত্র তাঁকে মজা করতে দেখা গেল। যখন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন হল, পেন ওরজির নতুন বুমবুম ছাঁট এবং হেডে দু’টো গোল নিয়ে। মাথায় হাত দিয়ে চুলের কাটিং দেখাতে দেখাতে হেসে ফেললেন লাল-হলুদ কোচ, “ও চুলটা এমন ভাবে ছেঁটেছে, যাতে বল মাথায় পড়ে বেশি বাউন্স করে। গোলের সময় তা কাজে লাগিয়েছে।” |
সায়গন রক্ষণ ভাঙছেন পেন। মঙ্গলবার। ছবি: উত্পল সরকার। |
পরের প্রশ্নে তিনি ফের খোলসে। তা হলে কি ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন মর্গ্যান? সে জন্যই কি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটানোর পরও এমন প্রতিক্রিয়াহীন? না কি আই লিগ না পাওয়ার যন্ত্রণা তাঁকে কুরেকুরে খাচ্ছে। তিন বছর ভারতে থেকেও দেশের এক নম্বর টুর্নামেন্ট হয়তো পাননি। সেটা যদি তাঁর ব্যর্থতা হয়, তা হলে যে ‘রেকর্ড’ তিনি মঙ্গলবার করলেন সেটা ছোঁয়া কঠিন। ভারতীয় ক্লাবগুলির মধ্যে ডেম্পোই একমাত্র দল যারা এ এফ সি কাপে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল। ২০০৪-এ সুভাষ ভৌমিকও লাল-হলুদ জার্সিকে তুলেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু ছয় ম্যাচ অপরাজিত থেকে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পরের পর্বে যাওয়ার নজির এ দেশের ফুটবলে নেই।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে সতেরো ধাপ এগিয়ে ভিয়েতনাম। তাই আশা করা গিয়েছিল, ম্যাচটা জমবে। কিন্তু ভিয়েতনামের সায়গন যুয়ান থাং টিমটাই তো এসেছিল ভঙ্গুর অবস্থায়। ম্যাচটা জিতলে সায়গনের পরের পর্বে যাওয়া নিশ্চিত হলেও তাঁরা মোট ১৩ জন ফুটবলার নিয়ে খেলতে এসেছিলেন। রিজার্ভ বেঞ্চে মাত্র দু’জন! অভাবনীয়। কোচ ত্রান তিয়েন দাই যা বললেন শুনে হেসে ফেলবেন এনেকেই। তিনি বললেন, “আজ আমাদের দেশের স্বাধীনতা দিবস। তাই ভাল ফুটবলাররা অনেকে আটকে গিয়েছে দেশে।” ব্যর্থতা ঢাকতে ‘স্বাধীনতা দিবস’-কে হাতিয়ার করলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেল তীব্র আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে ক্লাবটি। তাদের প্রধান স্পনসর এক সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবসায় মন্দা। সে জন্যই এই অবস্থা। খেলাতেও তার প্রভাব পড়েছে।
ইস্টবেঙ্গল এই ম্যাচটা ড্র করলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ পেত। কিন্তু শুরু থেকেই পেন, চিডি, সঞ্জুরা ধ্বংসাত্মক মেজাজে। ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে দল নামিয়েছিলেন মর্গ্যান। প্রতিরোধহীন ভিয়েতনামের হাল দেখে সেটা মাঝেমাঝে ৪-২-৪ হয়ে যাচ্ছিল। লালরিন্দিকার কোনাকুনি দৌড়, উইং দিয়ে সঞ্জু-সৌমিকের ওঠার চেষ্টা, জায়গা বদল করে বিপক্ষকে নাকানি-চোবানি খাওয়ানো সবই চলল। এ সবের মধ্যে ‘হিরে’ পেন ওরজি। ঝকঝকে দু’টো স্মরণীয় গোলের পর নাইজিরিয়ান মিডিও বলে দিলেন, “ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নিজেকে প্রমান করতে পেরে ভাল লাগছে।” প্রমাণ করার এই তাগিদের কারণ, তাঁকে পরের মরসুমে দলে রাখা নিয়ে দ্বিধায় ক্লাব কর্তারা।
শুরুতেই পেনাল্টি থেকে গোল পেয়ে গিয়েছিলেন চিডি। সেটা বিরতির মুখে হল ২-০। পরের অর্ধে পেনের জোড়া গোল। সায়গন ৪-১ করল উগা আর গুরপ্রীতের দোষে। খেলাটা অবশ্য খুব উঁচু মানের হল না। একটা সময় হাঁটি হাঁটি পা পা ফুটবলও হল। ১৫ মে মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গল কার বিরুদ্ধে খেলবে, মলদ্বীপের নিউ র্যাডিয়েন্ট, না মায়ানমারের ইয়াঙ্গন ইউনাইটেড? জানা যাবে বুধবার। যে দলই সামনে আসুক, ইস্টবেঙ্গল যা খেলছে তাতে সেই হার্ডল হয়তো পেরিয়ে যাবেন চিডিরা। তার পর?
মর্গ্যান কিন্তু গাড়িতে ওঠার আগে টা টা বাই বাই করে গেলেন!
|
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, গুরবিন্দার (অর্ণব), উগা, সৌমিক (রবার্ট), সঞ্জু (ইসফাক), পেন, লালরিন্দিকা, লোবো, চিডি, বরিসিচ। |