|
|
|
|
হোম ছেড়ে নতুন জীবন শুরু মামনির |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সকাল থেকে সাউন্ড বক্সে সানাইয়ের সুর। চলছে সাজগোজ। ফুল, চন্দন, আলপনা—কিছুই বাদ নেই। সঙ্গে অতিথি আপ্যায়নের আয়োজন। আবাসিক থেকে হোমের কর্মী, কারও দম ফেলার ফুরসত নেই। হোম সুপারও মাঝেমধ্যেই খোঁজ নিচ্ছিলেন, ‘‘সব ঠিকঠাক হচ্ছে তো? রান্না কতদূর এগোল? দই-মিষ্টি সব এসেছে?’’ তিনিই তো কনে-কর্তা!
মঙ্গলবার মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর হোমে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন আবাসিক মামনি হালদার। অনাথ মামনির পরিজন সবই হোমের কর্মী-আবাসিকেরা। আগে কলকাতার হোমে ছিলেন মামনি। ২০০৫ সালের ২৩ নভেম্বর তাঁকে মেদিনীপুরে পাঠানো হয়। এখানে থেকেই পড়াশোনা। বিয়েও হল এখান থেকেই। পাত্র বিজয়কুমার ঘাইয়ের বাড়ি খড়্গপুরের খরিদায়। ব্যবসা করেন। পাত্র-পাত্রীকে আশীর্বাদ করতে এসেছিলেন মেদিনীপুরের মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্ত। হোম সূত্রে খবর, পাত্রের পরিবারের তরফেই হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। |
|
বিয়ের সময়। —নিজস্ব চিত্র। |
গত অগস্টে প্রথম হোমে আসেন পাত্রের পরিজনেরা। মামনিকে দেখে পছন্দ হয়। শুরু হয় বিয়ের প্রস্তুতি। সেই মতোই সব আয়োজন হয়েছিল। সকাল এগারোটা নাগাদ বর পরিজনদের সঙ্গে পৌঁছয় হোমে। বিজয়েরা তিন ভাই। তিনি মেজো। পাঞ্জাবি পরিবার। পাত্রের কাকা নরেন্দ্রকুমার ঘাই বলছিলেন, “দাদু রেলে চাকরি করতেন। সেই সূত্রেই তিনি খড়্গপুরে এসেছিলেন। সেটা ১৯০৯ সাল। তারপর থেকে এ খানেই বসবাস শুরু।” তাঁর কথায়, “বিজয়ই হোমের মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। পরিবারের কেউ আপত্তি করেননি।” এ দিন সকাল থেকেই হোমে উৎসবের পরিবেশ। সকাল সকালই পৌঁছে যায় পাত্র। হোমের আবাসিক এক কিশোরীর কথায়, “দিদির বিয়ে হচ্ছে। ভাল লাগছে।” দুপুরে মেনুতে ছিল লুচি, ছোলার ডাল, এঁচোড়ের তরকারি, পনির, চাটনি, দই, মিষ্টি। হোম সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “যতটুকু পেরেছি, চেষ্টা করেছি।” তাঁর কথায়, “পাত্রের পরিবারের তরফেই শুরুতে যোগাযোগ করেছিল। তারপর সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়।” বিয়ের আসরে এসেছিলেন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির জেলা চেয়ারপার্সন উত্তরা সিংহ। তাঁর কথায়, “আজকের দিনটা সত্যিই অন্য রকম।” আর নববধূ মামনির বক্তব্য, “পুরনো দিনের কথা আর মনে রাখতে চাই না। নতুন জীবন শুরু করতে চাই।” |
|
|
|
|
|