সারদা কাণ্ড
৫ মন্ত্রকের জবাবদিহি চান মনমোহন
শ্চিমবঙ্গে লগ্নি সংস্থাগুলিকে ঘিরে সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে এক তরফা দায়ী করতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
এবং সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী মোট পাঁচটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছেন, গত কয়েক দশক ধরে এই লগ্নি সংস্থাগুলি কী ভাবে এ রকম বেপরোয়া হয়ে দৌরাত্ম্য চালিয়ে যেতে পেরেছে। এই পাঁচটি মন্ত্রক হল অর্থ, স্বরাষ্ট্র, টেলিযোগাযোগ, তথ্যসম্প্রচার এবং কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক। এই লগ্নি সংস্থাগুলি সাধারণ মানুষের থেকে সংগৃহীত অর্থেই বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেল বা সংবাদপত্র চালু করেছে এবং সে জন্য এই পাঁচটি মন্ত্রকের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিরাপত্তা জনিত ছাড়পত্র বা অর্থ মন্ত্রকের ছাড়পত্র কী ভাবে সারদা গোষ্ঠীকে দেওয়া হয়েছিল, সে প্রশ্নও উঠছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও নির্দেশ দিয়েছেন, এখন থেকে চ্যানেল খোলার অনুমতি দেওয়ার আগে সেই সংস্থার মালিকানা, অংশীদারিত্বের চরিত্র এমনকী পুরনো কাজকর্মও খতিয়ে দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রী মনীশ তিওয়ারি শুক্রবার চিঠি পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, এখন থেকে এই সব তথ্য বিশদে জানাতে না পারলে লাইসেন্স দেওয়া হবে না। দেশে এখন ৮২৫টি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল রয়েছে। এগুলিতে কী ধরনের মালিকানা ও লগ্নি রয়েছে, তার রিপোর্ট চেয়েছেন মনীশ। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রার অফ নিউজপেপারস ফর ইন্ডিয়া (আরএনআই)-কে সতর্ক করা হয়েছে। অনেকেই রসিকতা করে বলছেন, চোর পালানোর পরে এখন বুদ্ধি খুলেছে কেন্দ্রের! সারদা গোষ্ঠীর আওতায় চ্যানেল টেন, তারা নিউজ, তারা মিউজিক, সাউথ এশিয়া টিভি, সকালবেলা, প্রভাত বার্তা, বেঙ্গল পোস্ট, সেভেন সিস্টার্স পোস্ট, কলম, আজাদ হিন্দ, পরমা এতগুলি সংবাদমাধ্যম সঙ্কটে পড়েছে। লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রিত এই মিডিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ায় পরে নতুন চ্যানেলের ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র বলছে, মনমোহন এ বিষয়ে পারস্পরিক দোষারোপে জোর দিতে চাইছেন না। তিনি দেশে এই ধরনের লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকর্ম সম্পর্কে বিশেষ সরকারি পথনির্দেশিকা তৈরি করতে চাইছেন। এ ধরনের সংস্থা তৈরি করা এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় আইনে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু এই সংস্থাগুলির অবৈধ কার্যকলাপের উপর নজরদারি রাখার ব্যাপারে সেবি, বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা এবং রাজ্য পুলিশের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সেবি-র চেয়ারম্যান ইউ কে সিনহা এবং গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। কলকাতায় সেবি-র দল যাবে। শ্যামল সেন কমিশন যে রিপোর্ট দেবে, তার ভিত্তিতেও কেন্দ্র কিছু ব্যবস্থা নেবে।
সাতাত্তর সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র সঞ্চয়িতা বন্ধ করেছিলেন। তার পরে দীর্ঘ বাম শাসনে ব্যাঙের ছাতার মতো এই ধরনের সংস্থা গজিয়ে ওঠে। রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত সম্প্রতি এই ধরনের সংস্থার রমরমার জন্য কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন। প্রকাশ কারাটও মমতা-সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। কেরল, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, পঞ্জাব, অসম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কয়েক দশক ধরে এই ধরনের ব্যবসা চলছে। সেখানেও প্রশ্ন উঠছে, এদের দৌরাত্ম্য দমনে কেন্দ্র কী করেছে। সহারা-র সুব্রত রায়ের কাজকর্মের বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। কেরলে অন্তত শ’দুয়েক সংস্থা চুটিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে। সুদীপ্ত সেনের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সূত্রেই জানা যাচ্ছে, অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সুদীপ্ত সিবিআইকে লেখা চিঠিতে যে খরচের কথা বলেছেন তার পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। তা হলে বাকি অর্থ কোথায় গেল? সেটা খুঁজে বের করা যথেষ্ট বড় মাপের তদন্ত এবং তা কি সিবিআই-কে ছাড়া করা যাবে?
মমতা নিজেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের সংস্থা মোট কত রয়েছে এবং তার আর্থিক অবস্থা কী, সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য রাজ্যের কাছে নেই। মমতা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সক্রিয় হয়ে ৭৩টি সংস্থার তালিকা পেয়েছে। এখন অমিত মিত্র কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাইছেন, কেন্দ্রের কাছে কতগুলি সংস্থার ব্যাপারে কী তথ্য রয়েছে।
অসমে সারদা-কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই আজ গুয়াহাটি পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, সারদা-সহ ১১টি সংস্থার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্তের দায়িত্ব রাজ্যই সিবিআইকে দিচ্ছে। রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে জেরা করতে চাইলে তাতেও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন গগৈ। পশ্চিমবঙ্গে একই ভাবে তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়া হবে কি না, সেটা এখনও জানা যায়নি। তবে সিবিআই-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া তাঁরা তদন্ত করতে যাবেন না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.