তারাবাজি

সিন ১
২০০৮-য়ের মার্চ
কফি হাউস
(দুই মাঝবয়েসি ভদ্রলোক সামনে কফির কাপ নিয়ে বসে)
প্রথম জন: ধুর, ধুর... এ সব আইপিএল-টাইপিএল কয়েক দিনের ব্যাপার। এক বছরও টিকবে না।
দ্বিতীয় জন: হ্যাঁ, হ্যাঁ... আইপিএল হল সার্কাস। উঠল বলে।
সিন ২
২০০৯-য়ের মার্চ
কফি হাউস
(সেই দুই মাঝবয়েসি ভদ্রলোক, চেহারায় দু’জনেরই একটু হুকোমুখো ভাব এসেছে, এখনও সামনে কফির কাপ)
প্রথম জন: টিকবে না। টিকবে না। সবে রক্তের স্বাদ পেয়েছে। একটু খেয়ে নিক। এ বছরটাই শেষ।
দ্বিতীয় জন: তা আর বলতে। আরে গ্রেস সাহেবের ব্যাটিং দেখিনি। কিন্তু জানি কেমন ‘গ্রেস’ফুল ব্যাটিং করতেন। ওঁর ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না এই সব সার্কাস।
(পরের চার বছরের একই ছবি। কথাবার্তাও মোটামুটি একই)
সিন ৩
২০১৩-য়ের মার্চ
কফি হাউস (না, এখনও সিসিডি-বারিস্তায় এদের পায়ের ধুলো পড়েনি)
(সেই দুই মাঝবয়েসি ভদ্রলোক, চেহারা এখন পুরোপুরি হুকোমুখো হ্যাংলা)
প্রথম জন: কী যে সব চলছে!
দ্বিতীয় জন: ঘোর কলি... দেখিস না, ঘি-য়ের গন্ধটা পর্যন্ত আর আগের মতো নেই।
(সারকথা: শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে আইপিএল ওভার বাউন্ডারি মারল। পড়ল ষষ্ঠ সিজিনে)

ব্র্যাভোর ‘গ্যাংনাম’ স্টাইল
আইপিএল-য়ের আগে ছিল বিশ্বকাপ। তখনই টিভি কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ত ঘরে ঘরে টিভি পৌঁছে দেওয়ার উপলক্ষে। ছোট টিভির পরিবর্তে বড় টিভি। সাদা-কালো টিভির বদলে রঙিন টিভি। (বদলে লিখলাম বটে, আসলে কিন্তু পুরোনো টিভির সঙ্গে মালকড়িও দিতে হবে)।
আর আইপিএল পুরো ব্যাবস্থাই বদলে দিল। বাড়িতে তো এখন এমনিতেই দু’টো টিভি। একটা আইপিএল দেখার। অন্যটা মানুমাসির ‘দুলহন...’ (দুলহনের পরে আরও ছ’টা শব্দ আছে। আমার মনে রাখার কোনও ইচ্ছা নেই। মানুমাসির ইচ্ছা থাকলেও মনে নেই) দেখার। সিরিয়াল না ক্রিকেট, এই নিয়ে রিমোট কাড়াকাড়ির প্রি হিস্টোরিক গল্প বললে এখন বাচ্চারাও হাসবে। এতটা অ্যাডজাস্টমেন্ট করেছে বাঙালি। সাধে কি আর ডারউইন সাহেব বলেছিলেন, ‘সারভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেস্ট’।
বিজ্ঞাপনও দিব্যি ফিট করে নিয়েছে আইপিএল-উত্তর জীবনে। এখন তো সবাই কোল্ডড্রিংকসের ছিপি খুলে পিঠ চুলকে (গরমকাল, ঘামাচি হওয়াটা স্বাভাবিক), ছিপি উলটে দেখে নিচ্ছে আইপিএল-য়ের টিকিট মিলল কি না। বিস্কুটের প্যাকেট খুলেই প্রথম উঁকি, এবং ঝুঁকি, শাহরুখের কাঁধের ওপর দিয়ে কেকেআর-য়ের ম্যাচ দেখা যাবে তো! ‘ঝুঁকি’টা শাহরুখের সঙ্গে ম্যাচ দেখা না, প্যাকেটে এবং কপালে টিকিট না থাকলে অপছন্দের বিস্কুটও সোনামুখ করে খেতে হবে।
যত সোনা মুখ করে বিস্কুট খেতে খেতে আইপিএল দেখুন। অফিস থেকে ফেরার সময় ফিশ ফ্রাই-য়ের সঙ্গে ‘সব্বোনাশ করে দিল আইপিএল’ মার্কা মুখ নিয়ে অফিস থেকে বাড়ি ফিরছে সবাই। ছেলে-মেয়ের পড়াশুনো নষ্ট করে দিল নচ্ছার আইপিএল। কিন্তু ঘড়ির কাটা যেই না আটটা ছুলো, ওমনি গম্ভীর গলায়, “টিভিটা একটু ছাড় তো... কারা ব্যাট করছে দেখি।” সাড়ে আটটায়, “ফার্স্ট ইনিংসটাই খালি দেখব।” টিভি কিন্তু বন্ধ হবে রাত বারোটায়।
মুখে যাই বলুক, সার্কাসটা দেখতেই হবে।
আর এ তো শুধু সার্কাস দেখা নয়। সার্কাসে শামিলও তো হতে হবে। স্বনামধন্য ক্রিকেটার-প্রশিক্ষকদের কাছে শুনেছি, ছেলেকে কোচিং ক্যাম্পে দিয়ে যাওয়ার সময় বাবা বলে যেতেন, “আচ্ছা, ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে হয়ে যাবে, না? বাজারে দেখলাম মাছটা আজ বেশ ভালই উঠেছে। বাজার করে ফেরার পথে ওকে নিয়ে যাব, তাহলে।” এখন কিন্তু বাবাই কিটস-টিটস বয়ে আনছে ক্যাম্পে। একটু গলা খাকারি দিয়ে, “একটু দেখবেন। দেশের হয়ে খেলার দরকার নেই। কেকেআর-য়ে যেন একটু খেলতে পারে। শুনেছি এখন নাকি লোকাল ছেলেদের নিতে হবে। আসলে বাড়ির জন্য চার লাখ লোন নেওয়া ছিল। সোনাপিসির সার্জারিতেও লাখখানেক গেল। ছেলে যদি একটু তুলে দিতে পারে। হেঁ হেঁ।”
জাম্পিং ঝপাং চিয়ার লিডার্স
আইপিএলের গায়ে থুতু ছেটাবেন না। আপনি কিন্তু আসলে একদম নীচের গ্যালারিতে। সুতরাং থুতু...।
নিজের গায়ে পড়ুক বা ডজ করুন। সবাই জাম্পিং ঝপাং করছে। আপনিও শুরু করে দিন। সাই, ব্র্যাভো বা গেইলের মতো ‘গ্যাংনাম’ও করতে পারেন। গঙ্গার পাশে ইডেন গার্ডেন্সে গঙ্গা নাম করে ‘গ্যাংনাম’ই করুন। এমনিতেই যেখানে আর্ন্তজাতিক টেস্ট ম্যাচ দেখার জন্য এক পা সরিয়েও টিকিট কাটতে যায় না লোকে, সেখানে এখন দিব্যি হাত পা ছুড়ে ‘করব... লড়ব... জিতব... রে’ করছে। আইপিএল শরীরচর্চা তো করাচ্ছে। বাঙালি সব সময় ভবিষ্যতের চিন্তা করে। করব, লড়ব, জিতব। হবে কিনা জানি না। তবে আশা আছে।
ভবিষ্যতের প্রসঙ্গে মনে পড়ল আমাদের আবহাওয়া দপ্তরের কথা। রেডিয়োর ওয়েদার আপডেটের জন্য যখনই ফোনে জিজ্ঞেস করি, “আজ কালবৈশাখী আসবে?” উল্টো দিক থেকে গম্ভীর গলায় উত্তর আসে, “‘কাল’বৈশাখী আজ কী করে আসবে? কাল আসবে। কালবৈশাখী, হেল স্টর্ম-য়ের খবর জানি না। গেইল স্টর্ম-য়ের খবর জানি। রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু-র ম্যাচ থাকলে গেইল স্টর্ম নিশ্চিত। ওইটা দেখুন।”
লোকে অবশ্য চিয়ার লিডারদেরও রেডারে রেখেছে। ওদের পোশাকের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সারদা স্ক্যামে টাকা ফেরত পাওয়ার আশার চেয়েও ক্ষীণ। চিয়ার লিডিংয়ে কলকাতার গন্ধ না থাক, রাশিয়ার গন্ধ তো আছে। রাশিয়া-ভারত তো ভাই ভাই। আজ না হয় রাশিয়া একটু চাপে। তাতে কী? অতিথি দেব ভব।
সুতরাং, ওই যে প্রথমে বলেছিলাম, এই গরমে আইপিএল-য়ের খুঁত ধরতে গিয়ে একদম মাথা গরম করবেন না। বরং জাম্পিং ঝপাং করুন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.