সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে ৫০০ কোটি টাকার ত্রাণ তহবিল ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় থানায় অভিযোগ জানানোর হিড়িক পড়েছে বালুরঘাটে। গত কয়েকদিনে বালুরঘাট থানায় একাধিক অভিযোগ জমা পড়ছে সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরের দিনই আমানতকারীদের ২৫টি অভিযোগ জমা পড়ে। তার পর থেকে প্রতিদিনই গড়ে সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ১০-১২টি করে অভিযোগ জমা পড়ছে। অন্য তিনটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধেও থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছেন শতাধিক এজেন্ট। অভিযোগকারীদের মধ্যে একটা বড় অংশ সারদার আমানতকারী দরিদ্র বস্তির বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে থানায় আলাদা বিভাগ চালুর কথা ভাবছেন পুলিশ কর্তারা। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জ্যাকলিন দর্জি বলেন, “রবিবার পর্যন্ত বালুরঘাট থানায় ৪৫ আমানতকারী অভিযোগ করেছেন। রোজই অভিযোগকারীদের ভিড় বাড়ছে। অভিযোগগুলি আলাদা নথিভুক্ত করে তদন্তের কথা ভাবা হচ্ছে।” |
বালুরঘাটের শান্তিকলোনী এলাকা থেকে ১৫ জন বস্তিবাসী সারদার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এলাকার বাসিন্দা পেশায় পরিচারিকা অলোকা দাস সারদায় ১৫ মাসের মেয়াদে মাসে ২০০ টাকা রাখতেন। সাড়ে ১০ মাস পর্যন্ত জমিয়েছি।” পরিচারিকার কাজের সামান্য রোজগার থেকে জমিয়ে লক্ষ্মী দাস ১৫ হাজার টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেন। তাঁদের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী ফেরতের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই প্রমাণ রাখতে থানায় অভিযোগ করলাম।” শহরের কয়েকটি বস্তি এলাকার বাসিন্দারাও থানায় অভিযোগ জানানোর কথা ভাবছেন।
আমানতকারীদের অভিযোগ, এজেন্টরা সহজেই ওই বাসিন্দাদের বাড়ি গিয়ে বেশি লাভের টোপ দেখিয়ে দেদার টাকা ‘লুঠ করে’ নিয়েছেন। বালুরঘাটের এ কে গোপালন কলোণীর বস্তি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে যুবশ্রী মোড়ে সারদার প্রধান জেলা অফিস। চোখের সামনে সারদার অফিস ও পরিচিত মুখ দেখে ভরসা করেছিলেন বস্তিবাসী। বর্তমানে সেই অফিসটি পুলিশ ‘সিল’ করে দিয়েছে। কষ্টার্জিত টাকা খুইয়ে তাই গোপালন কলোনির শতাধিক গরিব বস্তিবাসী এখন হন্যে হয়ে খুঁজছেন এজেন্টদের। তাঁদের খোঁজ অবশ্য মিলছে না। |
বালুরঘাটে একটি সংস্থায় টাকা তোলার আবেদন করতে ভিড়। |
সরকার স্বীকৃত ওই বস্তির প্রায় সকলেরই পেশা দিনমজুরি। কেউ রিকশা চালিয়ে, কেউ বা হকারি করে সংসার চালান। সামান্য রোজগারের টাকা সারদা গোষ্ঠীতে রেখে সর্বস্বান্ত হয়ে এখন তাঁরা দিশেহারা ও ক্ষুব্ধ। মেয়ের বিয়ের জন্য সারদায় ১ বছরের চুক্তিতে রোজ ৪০ টাকা করে জমিয়েছিলেন চপ, ঘুগনি বিক্রেতা অশোক মোহান্ত। বছরের শেষে ২০,০০০ টাকা ফেরতের আশা করে এখন তাঁর গোটা পরিবার তাকিয়ে ত্রাণ তহবিলের আশ্বাসের দিকে। মাসে ৩০০ টাকা করে জমিয়ে পরিচারিকা কাকলি দাস, অনুশ্রী দাসেদের মতো আরও শতাধিক বাসিন্দা ওই আশ্বাসকে সম্বল করেই একজোট হয়ে অভিযোগ জানাতে তৈরি হচ্ছেন।
|
সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |