অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা না থাকায় দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম সাতজনকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ, ভাঙচুরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। রবিবার রাতে ওই ঘটনায় এসডিপিও রূপান্তর সেনগুপ্ত, বনগাঁ থানার আইসি চন্দ্রশেখর দাস হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আইসি-র গাড়িতে একজনকে এবং অন্যদের কলকাতায় পাঠাতে বিধায়ক অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার রাত এগারোটা নাগাদ গাইঘাটা থানার বকচরা এলাকায় যশোহর রোডে এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক যুবকের। আহত হন ২৪ জন। তারকেশ্বর থেকে একটি মিনি ট্রাকে করে ফিরছিলেন তাঁরা। বকচরার কাছে উল্টোদিক থেকে আসা একটি ট্রেলারকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মিনিট্রাকটি রাস্তার ধারে গাছে ধাক্কা মারে। মারা যান বনগাঁয় শক্তিগড় এলাকার বাসিন্দা শম্ভু দাস (২৪)। |
আহতেরাও সকলেই বনগাঁর বাসিন্দা। দুর্ঘটনার পর রাত ১২টা নাগাদ পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় আহতদের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সমস্যার শুরু, যখন হাসপাতালের চিকিত্সকেরা আহতদের মধ্যে সাতজনকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করতে বলেন। দেখা যায়, রোগীদের জন্য হাসপাতালের কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নেই। এতে সমস্যায় পড়ে যান আহতদের বাড়ির লোকজন। মহকুমা হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স না থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। হাসপাতালের মধ্যেই থাকা পড়ে থাকা একটি অ্যাম্বুল্যান্স (রোগী বহনের অনুপযুক্ত) ভাঙচুর করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, হাসপাতালের নিজস্ব দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। তবে তা রোগীদের কোনও কাজে লাগে না। হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, “যে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে তা রোগীদের আনা নেওয়ার উপযুক্ত নয়। সেগুলি বারাসত বা কলকাতা থেকে ওষুধপত্র আনার বা র্কতদান শিবিরের কাজে ব্যবহার করা হয়।” কিন্তু একটা মহকুমা হাসপাতালে কেন রোগীদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা রাখা হয়নি সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি সুপার।
তবে রোগীদের জন্য হাসপাতালের কোনও অ্যাম্বুল্যান্স না থাকলেও হাসপাতাল চত্বরেই সব সময় হাজির থাকে কয়েকটি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। রোগীদের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স না থাকার সুযোগ নিয়ে ওই সব অ্যাম্বুল্যান্সে বেশি ভাড়া দিয়ে রোগী নিয়ে যেতে হয়। সম্প্রতি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে ওই সব বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের কলকাতা, রানাঘাট ও বারাসত যাওয়ার ভাড়া ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু তা অ্যাম্বল্যান্সের মালিক বা চালকেরা মানতে চাননি। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রবিবার রাতে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা বন্ধ ছিল। ফলে চরম সমস্যায় পড়েন দুর্ঘটনায় আহতদের বাড়ির লোকজন।
এদিকে বেসরকারি ওই সব অ্যাম্বুল্যান্সগুলির পরিষেবা বন্ধ রাখা নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিত্ দাস ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ওই সব অ্যাম্বল্যান্সকে আর চলতে দেওয়টা হবে কি না তা ভেবে দেখা হবে।” পাশাপাশি তিনি জানান, বিধায়ক ও সাংসদ তহবিলের টাকায় কিছু অ্যাম্বুল্যান্স কেনার ব্যবস্থা হচ্ছে। তিনি নিজেও তাঁর বিধায়ক তববিল থেকে হাসপাতালকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দেবেন।
উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় কুমার আচার্য বলেন, “জেলার কয়েকটি হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ হয়ে পড়ে থাকার খবর পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।” |