বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। মাস আটেক আলাদা থাকছেন স্বামী-স্ত্রী। রবিবার তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী স্ত্রীকে স্বামীর বাড়িতে ঢোকাতে গিয়ে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধ ও ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দাম্পত্য সমস্যায় নাক গলাচ্ছে তৃণমূল। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
রবিবার দুপুরে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার বাগতবাড়ি গ্রামের ওই ঘটনার পরে থানায় একাধিক অভিযোগ হয়েছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর করে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। কয়েক জন গ্রামবাসী তথা স্থানীয় সিপিএম কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে পাল্টা অভিযোগ করেছেন মহিলা তৃণমূলের রঘুনাথপুরের নেত্রী পূর্ণিমা কুম্ভকার। স্ত্রী ও স্বামীও পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়েছেন স্বামী গুরুপদ মাজি। সোমবার রঘুনাথপুর আদালত তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের খবর, বাগতবাড়ির বাসিন্দা, পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষক গুরুপদবাবুর সঙ্গে কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়েছিল রঘুনাথপুরের মিঠু মাজির। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা গুরুপদবাবুর কাছে থাকে। দাম্পত্য বিবাদের জেরে মাস আটেক ধরে আলাদা থাকছেন ওই দম্পতি। সম্প্রতি পুরুলিয়া আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছেন গুরুপদবাবু। রবিবার তৃণমূলের শতাধিক কর্মী-সমর্থক মিঠুদেবীকে নিয়ে বাগতবাড়ি যান। নেতৃত্বে ছিলেন রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ মাজি এবং দলের মহিলা শাখার নেত্রী পূর্ণিমা কুম্ভকার।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, ওই দুই নেতা-নেত্রী খান কুড়ি অটো ভাড়া করে ও মোটরবাইকে বাইরে থেকে দলের কর্মী-সমর্থকদের গ্রামে নিয়ে আসেন। তাঁরা গুরুপদবাবুর বাড়ির তালা ভেঙে মিঠুদেবীকে শ্বশুরবাড়িতে ঢোকানোর চেষ্টা করেছিলেন। তখন বাড়িতে ছিলেন না গুরুপদবাবু বা পরিবারের অন্য সদস্যেরা। গ্রামবাসীদের একাংশ প্রতিবাদ করলে দু’পক্ষের বচসা বাধে। তৃণমূল কর্মীদের ঘেরাও করেন গ্রামবাসীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে দলের নেতারা ফোন করে পুলিশের সাহায্য চান। রঘুনাথপুর ও পাড়া থানা থেকে পুলিশ গ্রামে গিয়ে তৃণমূল কর্মীদের ঘেরাও মুক্ত করে মিঠুদেবীকে নিয়ে গ্রাম থেকে ফিরে আসে।
প্রদীপবাবু, পূর্ণিমাদেবী-সহ কয়েক জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের মধ্যে মানিক মণ্ডল, সনাতন দাস, শ্যামাপ্রসাদ ঘটকদের বক্তব্য, “নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে নিতে পারবেন ওই দম্পতি। এর মধ্যে তৃণমূল কেন ঢুকবে?” তৃণমূল নেতা প্রদীপবাবুর যুক্তি, “বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা হওয়ার কথা আমরা জানতাম না। মানবিকতার খাতিরে আমরা ওই মহিলাকে (মিঠুদেবী) সাহায্য করতে গিয়েছিলাম। তালা ভাঙার অভিযোগ মিথ্যা।” তৃণমূল ও সিপিএম, দু’দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণের দোষারোপ করেন।
রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় একাধিক অভিযোগ দায়ের হওয়ার কথা জানিয়েছেন। মিঠুদেবী অবশ্য বলেন “আমরা নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নিচ্ছি।” পুলিশ সূত্রে এ-ও জানা যাচ্ছে, স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে চাইছেন ওই মহিলা। |