সারদা গোষ্ঠীর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জেলার বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংস্থাগুলিতে টাকা ফেরত ও কর্তাদের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। এরমধ্যে অশোকনগর, গাইঘাটা থেকে একটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার চারকর্তা ও ডায়মন্ডহারবার থেকে একজন এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত অশোকনগর ও গাইঘাটায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম চয়ন রায়চৌধুরী, তুষার ঘোষ, বাপ্পাদিত্য সাহা ও গৌতম সাহা। তাঁরা ইএম ব্যাঙ্ক নামে একটি ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার কর্তা। ধৃতদের রবিবার বারাসত জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের চারদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ধৃতদের থেকে পুলিশ ৮টি কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও প্রচুর নথিপত্র আটক করেছে। ধৃতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হাবরার বিধায়ক ও রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘হাবরার সব ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রতারিত এজেন্ট ও আমানতকারীদের বিক্ষোভ অবশ্য থামছে না।
সোমবার সকালে সহারা ইন্ডিয়া নামে এক ভুঁইফোঁড় সংস্থার দফতরে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা। তাঁরা সংস্থার ডায়মন্ড হারবার শাখার আধিকারিক পরিতোষ প্রধানকে মারধর করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ এজেন্ট ও পরিতোষবাবুর সঙ্গে মধ্যস্থতা করে পরিতোষবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখনকার মত সমস্যা মিটে যায়। বিকেলে একটি বৈদ্যুতিক সংবাদমাধ্যমের চিত্র সাংবাদিক ওই অফিসের ছবি তুলতে গেলে এজেন্টেরা তাঁকে হেনস্তা করে বলে অভিযোগ। পুলিশে অভিযোগ জানান ওই চিত্র সাংবাদিক। সন্ধ্যায় মনোরঞ্জন রক্ষিত নামে এক এজেন্টকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজ তাঁকে ডায়মন্ড হারবার আদালতে তোলা হবে।
বসিরহাট থানার সামনে সোমবার
দুপুরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সানমার্গ ও সেল্ফ ট্রাস্ট নামে দুটি ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার এজেন্টরা। অবরোধ করা হয় ইটিন্ডা রোড। বসিরহাট থানার আইসি শুভাশিস বণিক বলেন, “ইতিমধ্যেই সেল্ফ ট্রাস্টের এক কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দফতর সিল করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ওই সংস্থার একটি গাড়ি। বাকি কর্তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটে বর্তমানে প্রায় ৮০টি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা রয়েছে। সম্প্রতি সানমার্গ ও সেল্ফ ট্রাস্ট নামে দুটি সংস্থার বিরুদ্ধে আমানতকারীদের টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভকারী এজেন্টদের দাবি, সানমার্গ সংস্থাটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে আমানতকারীদের টাকা ফেরতের কথা বললেও এখনও টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, বসিরহাটের ৭২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি শপিং মলকে সামনে রেখে তৈরি হয় সেল্ফ ট্রাস্ট নামে একটি ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থা। এক মাস আগে সান্তা প্রসাদ গোলদার, রাধারমণ মণ্ডল, চিন্ময় গোলদার-সহ সংস্থার কর্তারা আত্মগোপন করেন। এরপর একদল ক্ষুদ্ধ জনতা শপিং মলে লুঠপাট চালায়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সংস্থাটি গত দেড় বছরে বাজার থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা তুলেছিল। ওই সংস্থার এজেন্ট রেজাউল সর্দার, আনন্দ সরকার, সমরেশ মণ্ডলেরা বলেন, “প্রশাসনের সর্বত্র বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু মালিক পর্যায়ের কেউ গ্রেফতার হয়নি। আমানতকারীদের টাকা ফেরত না দেওয়া হলে আমরা বাড়ি ফিরতে পারব না।” বিক্ষোভকারীদের অন্যতম সানমার্গের এজেন্ট দেবদাস বালা, পাপিয়া মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে কোম্পানীর দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আমানতকারীরা ভয় দেখিয়ে আমাদের সম্পত্তি লিখিয়ে নিচ্ছে। মারধরও করছে।” এ দিন বসিরহাট থানায় এজেন্টদের পক্ষ থেকে ওই দুই ভুঁইফোঁড় সংস্থার মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। |