ব্যাঙের ছাতার মতো একের পর এক গজিয়ে উঠেছে নানা সংস্থা। চলতি বছরেই পাততাড়ি গুটিয়েছে তিনটি। একটি সংস্থার অফিস রবিবারই ‘সিল’ করেছে পুলিশ। সারদা-কাণ্ডের পরে কাটোয়ায় ছোট ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগও কমতে শুরু করেছে। লগ্নিকারীরা মেয়াদ ফুরনোর আগেই টাকা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন নানা সংস্থাকে। নতুন করে আর ওই সব সংস্থায় বিনিয়োগও হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশের হিসেবে, কাটোয়ায় মোট ৮৩টি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস রয়েছে। এক একটি বাণিজ্যিক ভবনে তিন-চারটি করে সংস্থার শাখা। বেশির ভাগ ছোট সংস্থার অফিসে গিয়েই এ দিন ম্যানেজারের দেখা মেলেনি। বসে রয়েছেন এজেন্টরা। তাঁদের সঙ্গেই কথা বলছেন লগ্নিকারীরা। শহরের সার্কাস ময়দান-স্টেশন রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের পাশেই রয়েছে ‘অ্যাস্প্রেন প্রজেক্ট (ইন্ডিয়া) লিমিটেড’ নামে এক সংস্থার অফিস। এ দিনই কাটোয়ার তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা দেবানন্দ মিত্র মেয়াদ শেষের আগে কী ভাবে টাকা পাওয়া যাবে তার খোঁজ নিতে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, “আমার স্ত্রীর নামে পলিসি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে টাকা রাখা ঠিক কাজ হবে বলে মনে করছি না।” কিন্তু ওই অফিসেও ম্যানেজার ছিলেন না। এজেন্টরা তাঁকে জানান, মেয়াদ শেষের আগে টাকা ফেরতের কোনও ব্যবস্থা তাঁদের সংস্থায় নেই।
|
মাধবীতলায় একটি ভবনে রয়েছে ‘বাস্তব রিয়েলকন (ইন্ডিয়া) লিমিটেড’-এর অফিস। সেখানে দেখা মিলল এক জন মাত্র কর্মীর। আর ছিলেন কয়েক জন এজেন্ট। কেতুগ্রামের রাউন্দি গ্রামের মহম্মদ নূর আলম বলেন, “আমি এই সংস্থার এজেন্ট। ব্যবসা ভালই চলছে। তবে এখন আর কোনও টাকা জমা পড়ছে না।” একই বক্তব্য শোনা গেল ‘ইউনাইটেড মেডিসিন সার্জিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর এজেন্টদের গলাতেও। কাটোয়ার মূলগ্রামের বিকাশ ঘোষের কথায়, “রিনিউয়াল টাকা তোলাও দায়।”
হাওড়ার বালির ‘এটিএম’ সংস্থার কাটোয়া দফতর সামলাচ্ছেন এজেন্টরাই। দিলীপ মণ্ডল নামে এক এজেন্ট বলেন, “এখন তো আর আমাদের কেউ টাকা দেবে না। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যই বসে রয়েছি।” একই রকম পরিস্থিতি গাঁধী মার্কেটের ‘র্যামেল’ বা ‘ইউনিভার্সাল কো-অপারেটিভ’-এর অফিসেও।
কাটোয়া স্টেশনের কাছে রয়েছে রোজভ্যালীর শাখা। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু কাটোয়া নয়, মুর্শিদাবাদেরও অনেক মানুষ যুক্ত রয়েছেন। এজেন্টের সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশি। ওই শাখার ম্যানেজার সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মেয়াদ পূর্ণ হলে নিয়ম মেনে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। আবার মেয়াদ পূর্তির আগেই অনেকে কাগজপত্র জমা দিয়ে টাকা তুলে নিতে চাইছেন। আমরা তাঁদের আবেদন মেনে নিচ্ছি।” সোমবার ওই সংস্থার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ম্যানেজারের ঘরে বসে রয়েছেন কয়েক জন এজেন্ট। মেয়াদ শেষের আগে যে সব লগ্নিকারী টাকা তুলে নিতে চাইছেন, তাঁদের তা না করার জন্য ‘অনুরোধ’ করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থার অন্য কয়েক জন এজেন্টের দাবি, “আমাদের নিজেদের টাকাও লগ্নি করা আছে। কিন্তু ওই সব এজেন্টদের চাপে মেয়াদ ফুরনোর আগে টাকা তুলতে পারছি না।” কাটোয়া শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আমসুমান বিবি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অমিতকুমার ঘোষেরা বলেন, “আমরা মেয়াদ পূর্তির আগেই কাগজপত্র জমা দিয়েছি। সামনের সপ্তাহে চেক দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।”
বর্ধমান জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, “ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সতর্ক রয়েছি।” |