মালিক-শ্রমিক বিরোধে তিন দিন ধরে বন্ধ শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সুপার বাস পরিষেবা। মালিকপক্ষের অভিযোগ, কাজ পরিচালনা থেকে শুরু করে কর্মী নিয়োগ সব ক্ষেত্রেই শাসক তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের হস্তক্ষেপেই গত শুক্রবার ও শনিবার বাস চালানো বন্ধ রাখেন। রবিবার থেকে তাঁরা বাস চালাতে চাইলেও শ্রমিক সংগঠন রাজি না হওয়ায় চালানো যায়নি। যদিও শ্রমিক সংগঠনের পাল্টা দাবি, বেতন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে শ্রমিকদের প্রাপ্য সুবিধে দিতে রাজি হচ্ছেন না মালিকপক্ষ। রবিবারও মালিকপক্ষই বাস চালায়নি বলে তাঁদের দাবি। এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে সমাধান সূত্র বার হতে পারে বলে দুই পক্ষের আশা।
গত ২৫ এপ্রিল বিকালে, একটি সুপার বাসের অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগকে কেন্দ্র করে মালিক-শ্রমিক বিরোধের সূত্রপাত। তার জেরেই পরদিন, শুক্রবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনদিন ধরে বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন নিত্য যাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরাও। এই রুটে ২৩টি সুপার বাস চলে। সরকারি বাস বা ট্রেনে ঠাসাঠাসি করে যাতায়াতি করতে হচ্ছে যাত্রীদের। কখনও দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকেও বাস না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসক সাগর চক্রবর্তী বলেন, “প্রশাসনের তরফে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত সমাধান সূত্র বার হবে।”
কী নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত? কোনও বাসের স্থায়ী শ্রমিক ছুটিতে থাকলে অস্থায়ী শ্রমিকদের সে দিন কাজে নেওয়া হয়। সম্প্রতি তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁদের বাছাই করা অস্থায়ী শ্রমিকদেরই কাজে নিতে হবে। গত বৃহস্পতিবার একটি বাসে সংগঠনকে না জানিয়ে ইচ্ছামত অস্থায়ী শ্রমিক নেওয়ার অভিযোগ তুলে শ্রমিক সংগঠনের থেকে একটি বাসকে আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তার পরে ক্ষুদ্ধ মালিকপক্ষ বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে অভিযোগ জানানো চিঠির প্রতিলিপি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির কাছেও পাঠিয়েছেন সুপার বাস ওনার্স আ্যসোসিয়েশন। সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ বলেন, “কোন অস্থায়ী কর্মীকে বাসে নেওয়া হবে, তাও শ্রমিক সংগঠন ঠিক করে এটা মানা যায় না। সংগঠনের জুলুমেই বাস বন্ধ রেখেছিলাম। রবিবার থেকে বাস চালাতে চাইলেও শ্রমিক সংগঠনের বাধায় সম্ভব হয়নি।”
যদিও তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি কৃষ্ণেনন্দ মোহন্ত বলেন, “সব অস্থায়ী কর্মী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাতে কাজ পান, তার জন্যই একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। একাংশ মালিক সেটি মানতে না চাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়। পাশাপাশি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির দাবিও জানানো হয়।” তৃণমূলের জলপাইগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “মালিকদের তরফে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বেতন চুক্তি নবীকরণ প্রয়োজন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।” |