সারদা গোষ্ঠীর মালিকপক্ষের কেনা শিলিগুড়ির খাপরাইলের ফ্ল্যাটটি ‘সিল’ করে দিল পুলিশ। রবিবার দুপুরে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অফিসাররা ফ্ল্যাটটি ‘সিল’ করেন। পাশাপাশি, অ্যানেক্স সংস্থার শিলিগুড়ির অফিসেও ফের তল্লাশি চালাল পুলিশ। তল্লাশির সময়ে এজেন্ট ও আমানতকারীদের ভিড় উপচে পড়ে। তাঁদের একাংশের তরফে পুলিশের কাছে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, অ্যানেক্সের অন্যতম কর্ণধার প্রসেনজিৎ মজুমদারকে গ্রেফতারের সময়ে যে ৭২ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে তা সংস্থার কেনা কোনও জমি রাতারাতি বিক্রি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অফিস থেকে একাধিক কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করে ও কয়েকজনকে জেরার পরে পুলিশের সন্দেহও দৃঢ় হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে, অ্যানেক্সের নামে কেনা একাধিক ফ্ল্যাট, জমি সম্প্রতি তুলনামূলক ভাবে কম দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যাপারে একাধিক ব্যবসায়ীর নাম পুলিশ পেয়েছে। প্রসেনজিৎবাবুর বাড়ি শিলিগুড়ির যে এলাকায়, সেই এনজেপি-র বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীর নামও পুলিশ পেয়েছে। শিলিগুড়ির এডিসিপি এ রবীন্দ্রনাথ বলেন, “তদন্তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। একাধিক নাম উঠে আসছে। সব দেখে পদক্ষেপ করা হবে।” |
অ্যানেক্স-দফতরে তল্লাশি।—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন অ্যানেক্স, আইকোর, রোজভ্যালী, ভারত কৃষি সমৃদ্ধি, ড্রিমওয়ে, প্রয়াগ, সুরাহা-সহ বিভিন্ন সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীদের একাংশ মিলে একটি সংগঠন গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েট ফোরাম’ নামে ওই সংগঠনের ন’জনের কমিটি তৈরি করা হয়। তাতে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত হন প্রয়াগ ও ভারত কৃষি সমৃদ্ধির এজেন্ট কানাই সূত্রধর। তিনি বলেন, “আগামী ৫ মে বাঘাযতীন পার্কেই সমাবেশের আয়োজন হয়েছে। সেই সমাবেশেই ঠিক করা হবে আগামী কর্মসূচি।” রাজ্যপালের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। আমানতকারীর পাশে দাঁড়িয়েছেন এসইউসি নেতা রবি ঘোষও। উত্তরবঙ্গের সমস্ত আমানতকারীদের একটা তালিকা তৈরি করে তা উচ্চ আদালতে পাঠানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। সারদার এক এক কর্মী অভিজিৎ চৌধুরি আশা প্রকাশ করে বলেন, “আশা করছি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ আমানতকারীর তালিকা হাইকোর্টে পাঠাতে পারব।”
শনিবার রাতে জলপাইগুড়ি শহরে একটি আর্থিক সংস্থার অফিস সিল করে পুলিশ। সংস্থাটির নাম ভারত কৃষি সমৃদ্ধি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “সংস্থাটির কাজকর্ম সম্বন্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে অফিস সিল করে দেওয়া হয়েছে। আমরা যতদূর খবর পেয়েছি সংস্থাটির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ময়নাগুড়ির বাসিন্দা। তাঁর খোঁজ চলছে।” পুলিশ জানায়, শনিবার ভোরে জলপাইগুড়ির অফিস বন্ধ করে সংস্থার কর্মীরা পালিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকরা এসে অফিস বন্ধ দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কোতোয়ালি থানায় অভিযোগও জানান। ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, মালবাজার, চালসা, বানারহাট এবং আলিপুরদুয়ারে সংস্থাটির অফিস আছে। কালিম্পং-এ অতিথি নিবাস আছে। কলকাতার তিলজলা রোডে সংস্থায় সদর দফতর।
ফালাকাটায় ১৫ দিনে টাকা দ্বিগুণ করার চক্রের মূল পাণ্ডা বঙ্কিম দেবনাথের নামে কতগুলি আ্যকাউন্ট রয়েছে তার খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে চিঠি দিয়ে বঙ্কিম দেবনাথের নামে অ্যাকাউন্ট রয়েছে কিনা জানতে চেয়েছে পুলিশ, আ্যকাউন্ট থাকলে সেগুলির লেনদেন আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যদের নামেও অ্যাকাউন্ট আছে কি না খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে জেলা পুলিশ। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “শীঘ্রই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট গুলি বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” অভিযুক্ত বঙ্কিম দেবনাথের সঙ্গে তাঁর বাবা বিজয়বাবু, স্ত্রী সোমাদেবীও পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁর ছোট ভাই বলাই দেবনাথও সম্প্রতি গা ঢাকা দিয়েছে বলে আমানতকারীদের অভিযোগ।
এ দিকে, মালদহ থেকে ভিজিল ইন্টারন্যাশনাল এনবিএফসি লিমিটেড -এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর প্রায় ২২ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। তা জানাজানি হতে শতাধিক আমানতকারী ও এজেন্ট ওই সংস্থার এক অধিকর্তার বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। রবিবার সকালে ইংরেজবাজার থানার মালদহ শহরে স্টেশন রোডে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ গিয়ে যূথিকা রায় নামের ওই মহিলাকে আটক করেন। তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় আমানতকারী, এজেন্টরা শুধু ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাই নয়, মহিলাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক আমানতকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় ১৯ এপ্রিল একটি মামলা হয়। মামলাটি সিআইডি দেখছে। এদিন সংস্থার এক মহিলা আধিকারিককে আটক করা হয়েছে। তাঁকে সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হবে।” |