সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে জানতেন না বলে দাবি করেছেন। কিন্তু আয়কর দফতরের বক্তব্য, ২০১১ সালেই রাজ্য সরকারকে ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল।
এর আগে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও দাবি করেছে, আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি নিয়ে তারা লিখিত ভাবে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছিল। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে রাজ্যের সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ তলানিতে ঠেকার পরে সরকারকে ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির রমরমা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন অর্থ দফতরের কর্তারাও। কেন্দ্রীয় সরকারের কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকেরও দাবি, ২০১০ সালের অগস্ট মাস থেকে বেশ কয়েক বার রাজ্য সরকারের আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখাকে (ইকনমিক অফেন্স উইং) সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল। এ বার আয়কর দফতর দাবি করছে, রাজনৈতিক পালাবদলের পরপরই ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে রাজ্যকে সতর্ক করেছিল তারা। সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা না হলে ভবিষ্যতে তার ফল মারাত্মক হতে পারে বলে সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল।
আয়কর দফতরের প্রাথমিক হিসেবে, রাজ্যে এখন ১১০-এর কাছাকাছি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বাজার থেকে ওই সব সংস্থা প্রায় ২২-২৩ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। কলকাতার আয়কর দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা রবিবার বলেন, “২০১১ সালের জুলাই মাসে ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রথম একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। পরে দফায় দফায় আরও নথি সরকারকে দেওয়া হয়। ওই সব রিপোর্টের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক, সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছেও।”
ওই কর্তার আশঙ্কা, সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির পরিধি যা জানা গিয়েছে, বাস্তবে তা আরও অনেক বেশি। তাঁর কথায়, “এখনও পর্যন্ত সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টিই প্রকাশ্যে এসেছে। একাধিক ব্যাঙ্কের কাছ থেকেও ওই সংস্থা ঋণ নিয়েছিল। সেই টাকার পরিমাণ এখনও স্পষ্ট হয়নি।” প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘গ্লোবাল অটোমোবাইল’ সংস্থার নামে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়েছিলেন সুদীপ্তবাবু। কয়েকটি ব্যাঙ্ক সম্মিলিত ভাবে ওই ঋণ দেয়। সেই টাকা ফেরত আসেনি।
কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও ব্যাঙ্কে ৩ কোটি টাকার বেশি প্রতারণার অভিযোগ উঠলে তা সিবিআই-এর দুর্নীতিদমন শাখা বা আর্থিক অপরাধ দমন শাখায় (ইকনমিক অফেন্স উইং) জানাতে হয়। টাকার অঙ্ক ১৫ কোটির বেশি হলে অভিযোগ করতে হবে সিবিআইয়ের ব্যাঙ্কিং সিকিউরিটিজ বা প্রতারণা শাখায়। সারদা গোষ্ঠীর মালিক সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধেও তাই নিয়ম মোতাবেক সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের। শুধু সারদা নয়, আয়কর দফতর এখন বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছ থেকে কোন সংস্থাকে কত ঋণ দেওয়া হয়েছে তার হিসেব চাইতে পারে। আয়কর কর্তাদের আশঙ্কা, বেশির ভাগ ভুঁইফোঁড় সংস্থা স্থাবর সম্পত্তির বাজারদর (ভ্যালুয়েশন) অনেকটা বেশি দেখিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছে।
এখন আয়কর দফতর সূত্রের খবর, সারদা গোষ্ঠী একই বছরে এক-এক রকম লাভের অঙ্ক দেখিয়ে আয়কর, রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছে পৃথক পৃথক ব্যালান্সশিট পাঠিয়েছিল। এই কারণে তাই এ বার আঙুল উঠছে ওই গোষ্ঠীর অডিট সংস্থার দিকেও। আয়কর দফতরের এক অফিসার বললেন, “কী কারণে একই বছরের জন্য আলাদা-আলাদা ব্যালান্সশিট তৈরি করা হয়েছিল, খতিয়ে দেখা হবে।” |