সারদা-ক্ষোভের আঁচে এখনও পুড়ছে রাজ্য। জেলার নানা প্রান্তে এজেন্ট-আমানতকারীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছেই। পাশাপাশি সারদা এবং বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। একাধিক সংস্থার দফতরে তালাও ঝুলছে জেলায় জেলায়।
উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম চৌমাথার কাছে সারদা গোষ্ঠীর নির্মীয়মাণ শপিং মলে রবিবার দুপুরে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারী ও এজেন্টরা। এতদিন নির্মাণ কাজ চলায় ভিতরে ঢোকা নিষেধ ছিল। এ দিন আমানতকারী ও এজেন্টরা দল বেঁধে ভিতরে ঢুকে দেখেন, বাইরেটা সাজানো হলেও ভিতরে কিছুই কাজ হয়নি। এরপরই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের জেরে যানজট হয় যশোহর রোডে। পরে বিকেল নাগাদ পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামালায়। আর্থিক সংস্থার কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে এ দিন দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে কংগ্রেসও।
সারদা-কাণ্ডের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সঙ্ঘবদ্ধ হতেও শুরু করেছেন বিভিন্ন সংস্থার এজেন্ট ও লগ্নিকারীরা। রবিবার শিলিগুড়িতে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েট ফোরাম’ নামে এক সংগঠন গড়েছেন অ্যানেক্স, আইকোর, রোজ ভ্যালী, ভারত কৃষি সমৃদ্ধি, ড্রিমওয়ে, প্রয়াগ, সুরাহা-সহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার উত্তরবঙ্গ শাখার এজেন্ট ও আমানতকারীরা। সংগঠনের সভাপতি, প্রয়াগ ও ভারত কৃষি সমৃদ্ধির এজেন্ট কানাই সূত্রধর বলেন, “আগামী ৫ মে বাঘাযতীন পার্কে সমাবেশ হবে। সেখানেই ঠিক করা হবে পরবর্তী কর্মসূচি।” প্রয়োজনে রাজ্যপালের কাছেও যাবেন তাঁরা। |
তল্লাশি: কাটোয়ায় একটি ভুঁইফোঁড় সংস্থার অফিসে ঢুকে জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র। |
ক্ষোভ-বিক্ষোভের সঙ্গেই জেলায় জেলায় ছড়িয়ে থাকা সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা শুরু করেছে পুলিশ। এ দিন শিলিগুড়ি লাগোয়া মাটিগাড়ায় সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের ফ্ল্যাট সিল করে দেওয়া হয়। সেবক রোডে সংস্থার অফিস থেকে বেশ কিছু জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। শিলিগুড়িতে আর এক ভুঁইফোড় সংস্থা ‘অ্যানেক্স’-এর প্রধান অফিসেও অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার ও কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। বর্ধমানের কাটোয়ায় ওই সংস্থারই অফিস থেকে জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। সংস্থার কর্ণধার প্রসেনজিৎ মজুমদার ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন।
এ দিনই মেদিনীপুর থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছে আর এক ভুঁইফোঁড় সংস্থা ‘ড্রিমলাইফ অ্যাগ্রো প্রোজেক্টস্ লিমিটেড’। দুপুরে মেদিনীপুর শহরের সুভাষনগরে সংস্থার অফিস থেকে আসবাবপত্র সরানো শুরু হলে শোরগোল পড়ে যায়। এত দিন ওই ভাড়া বাড়িতে চলছিল সংস্থার অফিস। বাড়ির মালিক সুশান্ত শিকদার বলেন, “ওরা ছ’মাস ভাড়া দিতে পারেনি। তাই জিনিসপত্র বেচে টাকা নিতে বলেছে।” এ দিন সুশান্তবাবুই ঘর খালি করে দেন। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামসুল হক বলেন, “ছ’মাস আগে অফিস বন্ধ হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার টাকা বকেয়া ছিল। তাই বাড়ি মালিককে ওই সব সরঞ্জাম সরানোর অনুমতি দিই।”
লগ্নিকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে পাততাড়ি গোটানোর অভিযোগ উঠেছে বাঁকুড়ার একটি ভুঁইফোঁড় সংস্থার বিরুদ্ধেও। ‘ভিশন অ্যাগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড’ নামের ওই সংস্থার কর্ণধার, হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা তপন ধাড়ার বিরুদ্ধে রবিবার বাঁকুড়া সদর থানায় এক এজেন্ট প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তাঁর খোঁজ শুরু করেছে। বাঁকুড়া, শিলিগুড়ি, জয়নগর, গঙ্গাসাগর-সহ আরও কিছু জায়গায় এই সংস্থার অফিস ছিল। শনিবার রাতে জলপাইগুড়িতে ‘ভারত কৃষি সমৃদ্ধি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’-র অফিস সিল করে দেয় পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “সংস্থাটির কাজকর্ম সম্বন্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে অফিস সিল করে দেওয়া হয়েছে।” পালিয়েছেন সংস্থার সব কর্মী। এ ছাড়াও ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, মালবাজার, চালসা, বানারহাট ও আলিপুরদুয়ারে সংস্থার অফিস আছে। কালিম্পংয়ে রয়েছে অতিথি নিবাস।
আমানতকারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মালদহের একটি অর্থলগ্নি সংস্থা ‘ভিজিল ইন্টারন্যাশনাল এনবিএফসি লিমিটেড’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর যূথিকা রায়কে এ দিন আটক করে পুলিশ। তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় আমানতকারী ও এজেন্টরা তাঁকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে মারধর করেন বলে অভিযোগ।
|
মিছিল তখন সিঁথির মোড়ে। রবিবার দুপুরে।—নিজস্ব চিত্র। |
সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিতে এবং রাজ্য জুড়ে তৃণমূল-সিপিএম হানাহানির প্রতিবাদে রবিবার ব্যারাকপুরের চিড়িয়া মোড় থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মোটরবাইক মিছিল করল বিজেপি। তাদের হাজরা মোড় পর্যন্ত ওই মিছিল করার কথা ছিল। কিন্তু সিঁথির মোড়ে পুলিশ মিছিল আটকায়। সেখানে আন্দোলনকারীরা কিছু ক্ষণ পথ অবরোধ করার পরে পুলিশ তাঁদের ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করার অনুমতি দেয়। গত ১৪ এপ্রিল বিজেপি দলের রাজ্য দফতর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে ‘বাংলা বাঁচাও অভিযান’-এর সূচনা করেছিল। তার পর থেকে জেলায় জেলায় প্রচার আন্দোলন চলেছে। এ দিন মোটরবাইক মিছিলের মধ্য দিয়ে ওই অভিযান শেষ হল। মোটরবাইক মিছিলের শুরুতে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “সিপিএম ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার জন্ম দিয়েছিল। তৃণমূল তা পালন করেছে।” |