লগ্নি ক্রেতার স্বার্থে এ বার প্রচার-যুদ্ধ
সুরক্ষার অস্ত্র শানিয়েও পিছিয়েছিলেন কেন সাধন, প্রশ্ন
সাধু বিক্রেতার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে সদা তৎপর রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষা দফতর। এ ব্যাপারে কাগজে-বেতারে তাদের প্রচার-বিজ্ঞাপন নজর কেড়েছে। একই ভাবে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতিশ্রুতির ফানুসে মানুষ যাতে না ভোলেন, সেই লক্ষ্যে জোরদার সচেতনতা-প্রচারের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ক্রেতা-সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। তা প্রায় মাস চারেক আগের কথা। যে কারণেই হোক, তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে সংস্থাগুলির প্রতারণা-জাল সম্পর্কে সরকার যে তখনই বিলক্ষণ অবহিত ছিল, মন্ত্রীর তখনকার মন্তব্যটি তার জোরালো প্রমাণ বলে প্রশাসনের একাংশ মনে করছে।
কী বলেছিলেন সাধনবাবু? মাস চারেক আগে এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে সাধনবাবু সরব হয়েছিলেন ভুঁইফোঁড় লগ্নিসংস্থার রমরমার বিরুদ্ধে। আক্ষেপ করে বলেছিলেন, এক শ্রেণির আর্থিক সংস্থা মানুষকে প্রতারিত করছে। জানিয়েছিলেন, এই বিপদ সম্পর্কে আমজনতাকে সচেতন করতে তাঁর দফতর সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামবে। বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে, প্রচার চালানো হবে রেডিও-র এফএম চ্যানেলে। কোন কোন সংস্থার দিকে তাঁর আঙুল, তা জানতে চাওয়া হলে সে দিন ক্রেতা-সুরক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ছিল, “এ বড় ভয়ঙ্কর সময়। এখন মুখ খুললেই বিপদ!”
বাস্তবিকই, পরে আর এ প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি সাধনবাবু। তাই তাঁর ঘোষণাও এত দিন ধরে স্রেফ মুখের কথা হয়ে রয়ে গিয়েছে। অথচ অন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রেতারা যাতে না-ঠকেন, সেই উদ্দেশ্যে সংবাদপত্র ও এফএমে ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের দেওয়া বিবিধ বিজ্ঞাপন ইতিমধ্যে দস্তুরমতো জনপ্রিয়। সেগুলোর দৌলতে বহু মানুষ জেনেও গিয়েছেন, পণ্য বা পরিষেবা কেনার সময়ে কী কী বিষয়ে সজাগ থাকা জরুরি। অথবা, কিনে ঠকে গেলে প্রতিকার পেতে কোথায় যেতে হবে। কিন্তু স্বয়ং মন্ত্রী চাওয়া সত্ত্বেও ‘ভুঁইফোঁড়ের বিপদ’ সম্পর্কে এমন সর্বাত্মক সচেতনতা-প্রচার তাঁর দফতর কেন চালাতে পারল না, এখন সেই প্রশ্ন মাথা চাড়া দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, পরিকল্পনায় রাশ টানার জন্য সাধনবাবুর উপরে কি চাপ ছিল?
মন্ত্রী অবশ্য কোনও চাপের কথা মানছেন না। তবে স্বীকার করে নিচ্ছেন, প্রচারে যথেষ্ট খামতি ছিল। এবং এ-ও জানাচ্ছেন, সারদা-কাণ্ডের পরে সেই খামতি মেটাতে তাঁর দফতর কসুর করবে না। দফতর এ বার ঠিক করেছে, ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থা সম্পর্কে মানুষকে হুঁশিয়ার করতে তারা লিফলেট বিলি কিংবা সংবাদপত্র-রেডিওয় বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে, এমনকী ছোটখাটো স্টেশনেও নিয়মিত সচেতনতা-অভিযান চালাবে। প্রয়োজনে পথ-নাটিকার আয়োজন হবে। এখন যে মুখ খুললে আর বিপদ নেই, তা-ও জানিয়েছেন সাধনবাবু। “পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে।” রবিবার মন্তব্য করেন তিনি।
পরিস্থিতি এই ক’দিনে কী রকম বদলে গেল? তার ব্যাখ্যা অবশ্য দেননি ক্রেতা-সুরক্ষামন্ত্রী। যদিও ওঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি: তৃণমূলের এমন কিছু মন্ত্রী ও সাংসদ সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন, দলে প্রভাব-প্রতিপত্তির নিরিখে যাঁরা সাধনবাবুর চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাঁদের বিরুদ্ধে গেলে আখেরে নিজের ক্ষতি হবে বুঝেই পিছিয়ে এসেছিলেন সাধনবাবু। সূত্রটির মতে, সারদা-কাণ্ডের জেরে ওই সব মন্ত্রী-সাংসদ ইদানীং দলে কিছুটা কোণঠাসা। পরিস্থিতির এ হেন পরিবর্তনকে হাতিয়ার করেই সাধনবাবু ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রচার-যুদ্ধে নামার তোড়জোড় করছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের অভিমত।
বস্তুত এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে পাশে পাওয়ার ইঙ্গিতও মিলেছে। দফতরের খবর: ২২ এপ্রিল সারদা-কাণ্ড ও ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার কাজকর্ম নিয়ে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকেই উঠে এসেছে এই ‘বিশেষ’ প্রচারের প্রসঙ্গ। কোনও ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাকে মানুষের থেকে টাকা তুলতে নিষেধ করার আইনি ক্ষমতা এখন রাজ্যের হাতে নেই। যত দিন না নতুন আইন আসছে, তত দিন সচেতনতা প্রসারে জোর দিচ্ছে মহাকরণ।
উপরন্তু প্রশাসনের কাছে খবর রয়েছে, আইন না-থাকার সুযোগে বেশ কয়েকটি ভুঁইফোঁড় লগ্নিসংস্থা এখনও গ্রামে-গঞ্জে সক্রিয়। সংস্থাগুলি এজেন্টরা এখন বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বলছেন, তাঁদের কোম্পানি সারদার মতো ‘অসাধু’ নয়। ওখানে টাকা রাখলে দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে তাঁরা মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বিশ্বাস করে অনেকে টাকা রাখছেনও। ফলে সার্বিক ভাবে টাকা তোলার বহর কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পুলিশে এখনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বটে, তবু তাদের কার্যকলাপকে প্রশাসন যথেষ্ট সন্দেহের চোখেই দেখছে। সেই সন্দেহ নিরসনেও ক্রেতা-সুরক্ষা দফতর উদ্যোগী হবে। কী ভাবে?
দফতর স্থির করেছে, রাজ্যে সক্রিয় বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় লগ্নিসংস্থার তালিকা বানাবে। তালিকা ধরে ধরে তাদের কাজ-কারবারের ‘বিশেষ বিবরণ’ তলব করা হবে। সঙ্গে চলবে সচেতনতাবৃদ্ধির অভিযান। গ্রামে-গঞ্জে যাঁদের থেকে সংস্থাগুলো টাকা তোলে, তাঁদের বৃহদংশ নিরক্ষর। লিফলেট বা ফেস্টুন-ব্যানার পড়ার সাধ্য ওঁদের নেই। এফএম চ্যানেলও সর্বত্র সব সময়ে শোনা যায় না, কিংবা শোনার অবকাশ সকলের হয় না। এই তথ্য মাথায় রেখে অভিযানের ধরনে বৈচিত্র্য আনা হবে। প্রচারপত্র বিলি ও বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি অটোরিকশা, সাইকেল-ভ্যান, এমনকী মোটরবাইকে করে গ্রামাঞ্চলে সতকর্তার বার্তা ছড়াবেন ক্রেতা-সুরক্ষাকর্মীরা। সাধনবাবুর কথায়, “নির্দিষ্ট কোনও সংস্থার নাম করে আমরা কিছু বলব না। শুধু মানুষকে জানাব, পোস্ট অফিস বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নথিভুক্ত ব্যাঙ্কের বাইরে কোথাও টাকা রাখলে ঠকতে হতে পারে। অনেকে যে ঠকছেন, তা-ও জানাব। প্রয়োজনে পথ-নাট্যেরও সাহায্য নেওয়া হবে।”
অর্থ দফতরের অধীনস্থ স্বল্প-সঞ্চয় বিভাগেরও তো এ নিয়ে প্রচার চালানোর কথা! তা হচ্ছে কোথায়?
ওই বিভাগের এক কর্তার জবাব, “প্রচার খাতে আমাদের বরাদ্দ সাকুল্যে দশ লক্ষ টাকা! তা দিয়ে লিফলেট ছাপানো, দেওয়ালে লেখা বা গোটা কয়েক ফেস্টুন ঝোলানো ছাড়া তেমন কিছু করে উঠতে পারিনি। বাড়তি কিছু করার সুযোগও আপাতত নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.