|
|
|
|
৩০টি ব্লকের দায়িত্বে মাত্র ৬ আধিকারিক |
পূর্বে ধুঁকছে স্বল্প সঞ্চয় দফতর |
সুব্রত গুহ • কাঁথি |
জেলার সবর্ত্র ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলি যখন চড়া সুদের লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে, তখন চরম অবহেলা আর উদাসীনতায় কার্যত ধুঁকছে পূর্ব মেদিনীপুরের ডাকঘর স্বল্প সঞ্চয় দফতর। বিশেষ করে রাজ্যে পালাবদলের পর এই প্রকল্প একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২০১০-১১ আর্থিক বছরে জেলায় স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পে ৩৯০.৯৭ কোটি টাকা সংগৃহীত হলেও ২০১১-১২ আর্থিক বছরে তা এক ধাক্কায় নেমে যায় ৯৫.৬৭ কোটি টাকায়। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১৮৬.১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ পরিবর্তনের সরকারে প্রথম দু’বছরে মোট যে টাকা সংগ্রহ হয়েছে, বিগত বাম সরকারের শেষ বছরে তার চেয়েও বেশি টাকা উঠেছিল।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার স্বল্প সঞ্চয় দফতরটির হালও খুবই খারাপ। এই দফতরের আওতায় রয়েছে জেলার চারটি মহকুমার ২৫টি ব্লক আর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার ৫টি ব্লক (মোট ৩০টি)। দফতরে একজন উপ-অধিকর্তা, একজন জেলা স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিক-সহ মোট সাত জন কর্মী থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরেই উপ-অধিকর্তা, করণিক, টাইপিস্ট ও নাইট গার্ড পদে কোন লোক নেই। জেলাশাসক দফতরের একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট উপ-অধিকর্তা পদে অস্থায়ী ভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলালেও অন্য পদগুলি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। ৩০টি ব্লকের প্রতিটি অফিসে একজন করে ব্লক স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিক থাকার কথা। বাস্তবে শুধু কাঁথি-১, খেজুরি-২, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, ঘাটাল ও দাসপুর-২ ব্লকে স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিক রয়েছেন। এই ৬ জন আধিকারিকই বাকি ২৪টি ব্লকের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। স্বল্প সঞ্চয় নিয়ে গ্রামাঞ্চলে নেই কোনও প্রচারও। ফলে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির চড়া সুদের আকর্ষণে ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
জেলা স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিক পার্থসারথি মোহান্ত কর্মী সঙ্কটের কথা স্বীকার করলেও প্রচারের অভাব রয়েছে বলে মানতে নারাজ। পার্থসারথিবাবু বলেন, “৬ জন ব্লক আধিকারিকই বতর্মানে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে বাকি ২৪টি ব্লক সামলাচ্ছেন। তবে, জেলার কাঁথি, হলদিয়া ঘাটাল-সহ বিভিন্ন স্থানে স্বল্প সঞ্চয় নিয়ে আলোচনা, সেমিনার এমনকী ট্যাবলো-সহ প্রচার চালানো হয়েছে। রাজ্যের মধ্যে আমাদের জেলা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রথম দিকেই রয়েছে।”
শুধু কর্মীর অভাবই নয়, এজেন্ট সংখ্যাও কমছে জেলায়। এজেন্টদের বক্তব্য, ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলি এজেন্টদের হাতে-হাতে শতকরা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা কমিশন দেয়। তাই তাঁদের আমানতকারী খোঁজার তাগিদটাও বেশি। সেখানে আমানতে সুদের হার কমানোয় সাধারণ মানুষ যেমন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখতে উৎসাহ হারাচ্ছেন, তেমনই মাত্র ০.৫ শতাংশ কমিশন পেয়ে এজেন্টরাও এই প্রকল্প থেকে সরে যাচ্ছেন। অল্পবয়সীরাও আসছেন না এই পেশায়। কাঁথি ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পের দীর্ঘ দিনের এজেন্ট বিশ্বরঞ্জন দাসের কথায়, ‘‘এমনিতেই সংগৃহীত আমানতের উপর মাত্র ০.৫ শতাংশ হারে কমিশন দেওয়া হয় এজেন্টদের। সিনিয়র সিটিজেন ও পিপিএফ প্রকল্পে আবার কোনও কমিশন নেই। আগে এজেন্টদের রাজ্য সরকার ইনসেন্টিভ (অনুদান) দিলেও এখন আর তা দেয় না। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ইনসেন্টিভ ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ হয়েছিল। নতুন সরকার এসে তা-ও তুলে দিয়েছে।” |
|
|
|
|
|