দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
মোহনবাগান-২ (ওডাফা, কুইনটন)
পৈলান অ্যারোজ-০ |
কথা রাখলেন তিনি। যেমন কথা, ঠিক তেমন কাজ। আর প্রখর গ্রীষ্মে ঘাম ঝরিয়ে তাঁর ফুটবল মস্তিষ্কের সৌজন্যেই অবনমনের জাল কেটে অবশেষে বেরিয়ে এল মোহনবাগান।
কে তিনি? তিনি মোহনবাগান কোচ করিম বেঞ্চারিফা। তিন মাস আগে নির্বাসনের জট কাটিয়ে বেরিয়ে আসার পর তো তিনিই বলেছিলেন, “অবনমন বাঁচানোর অঙ্ক জানা আছে। শেষ দু’ম্যাচের আগেই সেই ফাঁড়া থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।” রবিবার কল্যাণীতে করিমের সেই অঙ্ক যে পুরো একশোয় একশো পেয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ। যার জেরে উধাও অবনমনের রক্তচক্ষু। গ্যালারিতে একসঙ্গে ভরা গ্রীষ্মেই হাজির অকাল দীপাবলী এবং হোলি।
|
স্বস্তির চুম্বন। কল্যাণীতে ওডাফা-টোলগেদের উচ্ছ্বাস। ছবি :শঙ্কর নাগ দাস |
জ্যোতিষীর মতো এ রকম ভবিষ্যদ্বাণী করে ও মিলিয়ে দিয়ে মোহন কোচ অদ্ভুত ভাবে নিস্পৃহ। বললেন, “পরপর চার্চিল এবং পুণে ম্যাচ হেরে কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছিল। আজ জিতে সেই চাপ কাটল সঙ্গে অমূল্য তিন পয়েন্টও এল।” শুধু এ টুকুই! অবনমনের ভূত ঘাড় থেকে নামানোর পাহাড় প্রমাণ চাপ সরানোর জন্য কোনও স্বস্তি নেই? করিম বলছেন, “পেশাদারদের আবার কীসের স্বস্তি? এখনও কলকাতা লিগ বাকি আছে যে!”
করিম যখন এ কথা বলছেন তখন গ্যালারিতে জেগে ওঠা ফেস্টুন বলছে, “দুঃস্বপ্নের রাত কেটেছে ওডাফার দাপটে। বাঁচিয়ে আমরা রেলিগেশন জবাব দিলাম সপাটে। ইচে তোমায় স্যালুট। করিম তোমায় শ্রদ্ধা। নবি-কুইনটন-টোলগেও হিরো। প্রিয় সবুজ-মেরুন যোদ্ধা।” গত চার মাস ধরে এই মুখগুলোই ছিল চিন্তাক্লিষ্ট। আজ তা উধাও। বদলে মুখে খুশির ঝিলিক। সমর্থকদের স্বস্তির দিনে কোচ নিরাসক্ত থাকলেও অধিনায়ক ওডাফা যদিও আবেগমুক্ত হতে পারলেন না। ম্যাচ শেষে ক্লান্তির জন্য মাঠেই শুয়ে পড়েছিলেন। পরে বাড়ি ফেরার সময় বলে গেলেন, “হাসপাতাল থেকে উঠে এসে ক্লান্ত শরীরেও মাঠে নামলাম। জয়টা দরকার ছিল। জীবনের অন্যতম কঠিন সময় পেরিয়ে এলাম।” |
আর্থার পাপাসের দলের বিরুদ্ধে একমাস চার দিন আগেই তিন গোলে এগিয়ে গিয়েও দু’গোল হজম করতে হয়েছিল করিমের বাগানকে। এদিন প্রথম এবং দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ওডাফা এবং কুইনটন গোল করার পর তাই আর ঝুঁকি নেননি করিম। টোলগেকে তুলে নামিয়ে দিলেন ইচেকে। উদ্দেশ্য, কোনওমতেই যেন তিন পয়েন্ট হাতছাড়া না হয়। শেষ পর্যন্ত মরক্কান কোচ সফল তাঁর লক্ষ্যে। পুণে এফসি-র কাছে এয়ার ইন্ডিয়া ৪-০ হারায় ২৪ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান অবনমন সীমার বাইরে। টোলগে বলছেন, “মুম্বই এফসি ম্যাচটাই টার্নিং পয়েন্ট। তবে দ্বিতীয় পর্বে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের পরেই বুঝে গিয়েছিলাম আমরা আই লিগে থাকবই।” আর মাঝমাঠে বৈচিত্র্য এনে দেওয়া কুইনটন! এ দিন দর্শনীর ফ্রি-কিক থেকে গোল করে যিনি ম্যাচের সেরা। আগামী মরসুমে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে তাঁকে দেখার সম্ভাবনা নেই। বাগান জিতে অবনমন বাঁচালেও তাঁর ভবিষ্যৎ কী? নামিবিয়ার মিডফিল্ডারের সাফ জবাব, “সমর্থকরা তো আনন্দ করছে। ওটাই আমার প্রাপ্তি।”
বাগানের ‘সেভিং রেলিগেশন’ ছবিতে এই দায়বদ্ধতাটাই ইউএসপি। যার সৌজন্যে আগামী মরসুমের আই লিগেও রয়ে গেল মোহনবাগান।
|
রবিবার পৈলান অ্যারোজকে হারিয়ে অবনমন আশঙ্কার মুক্তি ঘটল মোহনবাগানে। ২৪ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট পেয়ে করিমের দল এই মুহূর্তে লিগ টেবলে দশম স্থানে। বাগানের খেলা বাকি চার্চিল ব্রাদার্স (৭ মে) এবং ইউনাইটেড সিকিম (১২ মে)-এর বিরুদ্ধে। এই দুই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেলেই দশম স্থানেই লিগ শেষ করবে করিমের দল। অবনমন নিশ্চিত ইউনাইটেড সিকিম (২৪ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট) এবং এয়ার ইন্ডিয়ার (২৫ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট)। |
|
মোহনবাগান: শিল্টন, নির্মল, আইবর, মেহরাজ (স্নেহাশিস), বিশ্বজিৎ, ডেনসন, নবি, কুইনটন, সাবিথ, টোলগে (ইচে), ওডাফা। |