সিআইডিকে ফের তদন্তের নির্দেশ আদালতের
রিজওয়ানুর রহমানের অপমৃত্যুর প্রথম তদন্তকারী অফিসার অরিন্দম মান্নার মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডি-কে ফের তদন্তের নির্দেশ দিল শ্রীরামপুর আদালত।
২০০৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব রেলের হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখার মানকুণ্ডু স্টেশনের কাছে রেললাইনে দেহ মেলে অরিন্দমের। শরীর থেকে মুণ্ডু ছিন্ন হয়ে অনেকটা দূরে পড়েছিল। খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্ত করে সিআইডি জানায়, হত্যার প্রমাণ মেলেনি। ওই রিপোর্ট ‘চ্যালেঞ্জ’ করেন অরিন্দমের আত্মীয়েরা। তার প্রেক্ষিতেই আদালত পুনর্তদন্তের নির্দেশ দেয়।
হাওড়ার দাশনগরের বাসিন্দা অরিন্দম সে সময়ে দমদম রেল পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে রেল পুলিশ জানায়, ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন। তাঁর পরিবারের লোকেরা অবশ্য রিজওয়ানুর-মৃত্যুর ঘটনায় যে পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদের এবং দমদম জিআরপি-র তৎকালীন ওসি মানব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত শেষে সিআইডি আদালতকে জানায়, ওই অভিযোগ ঠিক নয়। মান্না পরিবার সেই রায়কে ‘চ্যালেঞ্জ’ করায় ফের তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সিআইডি একই রিপোর্ট দেয় আদালতকে।

অরিন্দম মান্না মৃত্যু-রহস্য
পরিবারের অভিযোগ
• দুই হাসপাতালের ময়না-তদন্তের রিপোর্টে অসঙ্গতি।
• অরিন্দমের সঙ্গে সহকর্মীদের একাংশের সম্পর্ক খারাপ ছিল। মৃত্যুর এক দিন আগেও খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
ফের ওই রায়কে ‘চ্যালেঞ্জ’ জানিয়ে অরিন্দমের আত্মীয়েরা গত ২১ মার্চ শ্রীরামপুরের এসিজেএম আদালতে পুনর্তদন্তের আবেদন জানান। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতেই গত বুধবার এসিজেএম রতন দাস ফের সিআইডি-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ প্রসঙ্গে সিআইডির স্পেশাল আইজি বিনীত গোয়েল বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। আদালতের নির্দেশ হাতে পেলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অরিন্দমের মামা তথা পরিবারের আইনজীবী জিতেন পাল বলেন, “দোষীদের আড়াল করার জন্য সাজানো রিপোর্ট দিচ্ছে সিআইডি।”
সিআইডি তদন্তকে কেন ‘সাজানো’ বলছে মান্না পরিবার?
তাঁদের বক্তব্য, রেল পুলিশের নথি অনুযায়ী ঘটনার দিন সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে মৃতের পরিচয়পত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স উদ্ধার হয়। অথচ, বেলা সওয়া ২টোয় শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ময়না-তদন্ত হয় ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ হিসেবে। দ্বিতীয়ত, পরিবারের দাবিতে পরের দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফের ময়না-তদন্ত হয় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে। দু’টি হাসপাতালের রিপোর্টে বিস্তর ফারাক রয়েছে। শ্রীরামপুরের হাসপাতালটিতে দেহে মাত্র ৪টি আঘাতের উল্লেখ রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের রিপোর্টে আঘাতের সংখ্যা ৩৯টি। সরাসরি ‘আত্মহত্যা’র কথা সেখানে বলা হয়নি। বরং আঘাতজনিত কারণ থেকেই মৃত্যু বলে রিপোর্টে প্রকাশ। সিআইডি তদন্তে অবশ্য হত্যার বিষয়টিতে পুর্নচ্ছেদ পড়ে যায়।
মান্না পরিবারের অভিযোগ, শুরু থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছে পুলিশ। অরিন্দমের বাবা অশোকবাবু বলেন, “দমদম রেল পুলিশের পরিচারিকার বয়ান অনুযায়ী, ছেলের সঙ্গে কয়েক জন সহকর্মীর সম্পর্ক খারাপ ছিল। মৃত্যুর এক দিন আগে ছেলেকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।” মৃত্যুর আগের দিন বেশ কয়েক বার বাড়িতে ফোন করে খুন হয়ে যেতে পারেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন অরিন্দম।
অরিন্দমের মৃত্যু ঘিরে সে সময় রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়েছিল। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরিন্দমের বাড়িতে গিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় মুকুল রায় একই দাবিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে চিঠি লেখেন। অশোকবাবুর আক্ষেপ, “ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল নেতারা আর যোগাযোগ রাখেননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে ২০১১ সালের জুলাই মাসে তাঁর দফতরে চিঠিও দিই। ছোট ছেলে অনিমেষের জন্য একটা চাকরিরও আর্জি ছিল চিঠিতে। কিন্তু জবাব আজও আসেনি।” জিতেনবাবু জানান, সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে আছে মান্না পরিবার।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.