|
|
|
|
কপালে গুলি চালিয়ে ব্যবসায়ী ‘আত্মঘাতী’ মানিকতলায়
নিজস্ব সংবাদদাতা |
কপালের গভীর ক্ষত থেকে গলগলিয়ে বেরোচ্ছে রক্ত। ঘরের এককোণে ‘বসে’ থাকা রক্তাক্ত ব্যবসায়ীর পাশে তখন পড়ে একটি ৯ এমএম পিস্তল। রবিবার সকালে নিজের ঘর থেকে এ ভাবেই উদ্ধার করা হয় মানিকতলা মেন রোডের একটি বহুতলের এক বাসিন্দাকে। হাসপাতালে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন প্রদীপ সাহা (৪০) নামে ওই ব্যবসায়ী। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে রাত পর্যন্ত কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার রাতে কয়েক জন বন্ধুকে এসএমএস করে প্রদীপবাবু লেখেন, ‘কখনও কোনও ভুল হয়ে থাকলে, আমাকে ক্ষমা করে দিস।’
প্রদীপবাবুর পাড়ায় ফুটপাথে চায়ের দোকান রাধেশ্যামের। শনিবার রাতে স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে ওই ব্যবসায়ীকে কিছু কিনতে দেখেছিলেন তিনি। এ দিন সকালে বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙে প্রদীপবাবুর দেহ উদ্ধারের সময়ে সেখানেই কাশির ওষুধের দু’টি খালি শিশিও পান তদন্তকারীরা। পুলিশের বক্তব্য, ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় ‘নেশাগ্রস্ত’ হয়েই সম্ভবত গুলি চালান ওই ব্যক্তি। |
|
পুলিশ মর্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রদীপ সাহার দেহ। —নিজস্ব চিত্র |
হাত কেঁপে যাওয়ায় একটি গুলি ফস্কে গিয়ে লাগে ঘরের দেওয়ালে। পরের গুলিটি অবশ্য ‘লক্ষ্যভ্রষ্ট’ হয়নি। প্রদীপবাবুর বাঁ হাতে ধারালো কোনও জিনিসে কেটে যাওয়ার দাগও ছিল। ঘটনাস্থলে মিলেছে একটি নতুন ব্লেড।
জনবহুল এলাকার ওই বহুতলে পরপর দু’বার গুলি চললেও কেউ আওয়াজ পেলেন না কেন, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পিস্তলে ‘সাইলেন্সার’ ব্যবহার হয়েছিল কি না। রাত পর্যন্ত পিস্তলটির লাইসেন্স-সহ অন্য কোনও নথি মেলেনি। কী ভাবে ওই আগ্নেয়াস্ত্র প্রদীপবাবুর হাতে পৌঁছল, কেন তিনি নিজের কাছে পিস্তল রেখেছিলেন, দেখছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইএসডি) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে সব কিছু স্পষ্ট হবে।”
পুলিশ জানায়, স্ত্রী মুনমুন, দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন প্রদীপবাবু। শনিবার তাঁদের বাগুইআটিতে মুনমুনদেবীর বাপের বাড়িতে রেখে ফিরে এসে এলাকার বন্ধুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্পও করেন। তার পর চলে যান নিজের ফ্ল্যাটে। এ দিন বেলা বাড়লেও দরজা না খোলায় পড়শিরা ডাকাডাকি করেন। ফোনও বেজে যায়। শেষমেশ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে প্রদীপবাবুর রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান সকলে। ওই ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বলেন, “গতকালই ওঁকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিল। কারণ জানতে চাইলেও কিছু বলেনি।” স্থানীয় সূত্রে খবর, মাসখানেক আগেই নিউ টাউনে একটি জমি কেনেন প্রদীপবাবু। বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা ছিল। এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা দেখছে পুলিশ। ডিসি (ইএসডি) জানান, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে।
|
|
|
|
|
|