|
|
|
|
প্যারোলে বেরিয়ে নাটক, আবার ‘তাণ্ডব’ও
অত্রি মিত্র ও শুভাশিস ঘটক |
জেলে বসে ইংরেজি শিখে যে বন্দি প্যারোলে ছাড়া পেয়ে ইংরেজি নাটক করে, বাড়ি যাওয়ার জন্য প্যারোলে ছাড়া পেয়ে সে-ই তাণ্ডব চালায় এলাকায়। এমনই অভিযোগ উঠেছে মোঘল হত্যায় দোষী সাব্যস্ত, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি দারেন এহসানের বিরুদ্ধে। জেলকর্তাদের অভিজ্ঞতাতেও প্যারোলে ছাড়া পাওয়া বন্দিদের এমন আচরণ বিরল।
পুলিশ সূত্রে খবর, চার দিন আগে আলিপুর জেল থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে গার্ডেনরিচের আয়রনগেট রোডে, নিজের বাড়িতে এসেছে দারেন। তার পর থেকেই এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে শাসানি ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। গার্ডেনরিচ থানার পুলিশ জানিয়েছে, আয়রনগেট রোডের প্রায় এক হাজার বাসিন্দার তরফে দারেনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জানানো হয়েছে।
কোনও কাজে যোগদানের উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণের জন্য প্যারোলে মুক্তি পেলে বন্দির সঙ্গে রক্ষী থাকেন। স্থানীয় থানাও নজরদারি চালায়। কিন্তু যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের ক্ষেত্রে জেলে অনেক বছর কেটে যাওয়ার পরে যদি দেখা যায় বন্দির আচরণ ভাল, সে ক্ষেত্রে কিছুদিন বাড়িতে কাটিয়ে আসার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। তখন বন্দির সঙ্গে রক্ষী থাকেন না। বাড়ির লোকের সঙ্গে সময় কাটিয়ে নির্দিষ্ট দিনে সেই বন্দি জেলে ফিরে আসে। জেলকর্তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, কিছুদিনের জন্য ছাড়া পেয়ে বন্দিরা ওই সময়ে কোনও দুষ্কর্মেও লিপ্ত হয় না। দারেনের আচরণ সে দিক থেকে বিরল। আলিপুর জেলের কর্মীরাও দারেনের এই ব্যবহারে অবাক। এক কর্মীর কথায়, “দারেন সম্প্রতি ইংরেজি নাটক ‘বেগম সুমরু’-তে অভিনয় করেছে। জেলে ওর ব্যবহারও অত্যন্ত ভাল। হঠাৎ জেল থেকে বেরিয়ে এমন কাণ্ড কেন ঘটাল, বোঝা যাচ্ছে না।”
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০০১-এর ফেব্রুয়ারিতে গার্ডেনরিচের ত্রাস মহম্মদ জাহাঙ্গির ওরফে মোঘল আয়রনগেট রোড এলাকায় বাড়ির সামনে খুন হন। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আয়রনগেট রোডের বাসিন্দা দারেন গ্রেফতার হয় ওই বছরেরই ডিসেম্বরে। তার পর থেকেই জেল হেফাজতে আছে সে। আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজা হয় দারেনের। এখন সে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি।
সম্প্রতি ছাত্র নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়াকে ঘিরে গার্ডেনরিচ এলাকায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষে তাপস চৌধুরী নামে এক পুলিশকর্মী খুন হন। ওই ঘটনায় মোঘলের দাদা, বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোঘল ও মুন্নার বাড়িও আয়রনগেট এলাকায়।
তৃণমূল নেতা মুন্না ওরফে মহম্মদ ইকবাল ও মোক্তার গ্রেফতার হওয়ায় আয়রনগেট এলাকা এখন কার্যত অভিভাবকহীন। তাই প্যারোলে মুক্তি পেয়ে এলাকা দখলের উদ্দেশ্যেই দারেন ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলের এক কর্মীর দাবি, “বর্তমানে মুন্নার শত্রু মোক্তার আলিপুর জেলে বন্দি। দারেন তার পূর্ব পরিচিত। আলিপুরে দারেনকে পেয়ে ভালই ভাব জমিয়ে নেয় মোক্তার। ক’দিন তার সঙ্গে জেলের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিল।” ওই কর্মীর দাবি, মোক্তারের নির্দেশ পেয়েই এলাকায় গিয়ে পরিকল্পিত ভাবেই ত্রাস তৈরি করছে দারেন।
জেল-কর্মীর অনুমানের আঁচ মিলেছে মুন্নার পরিবারের অভিযোগেও। মুন্নার মেয়ে সাবাতাজ বলেন, “বাবার নামে শাসানি দেওয়া হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশকে সব পরিস্থিতি জানানো হয়েছে।” দারেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সে অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, “মোঘল খুনে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। এখনও মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।” কোনও উত্তেজনামূল আচরণ সে করেনি বলেই তার দাবি।
|
|
|
|
|
|