|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে আমানতি কারবার চলার অভিযোগ
অত্রি মিত্র |
তিন বছরের টাকা দ্বিগুণ। অর্থাৎ, সুদের হার বছরে ৩৩%-রও বেশি। শুধু জেলা বা গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষের মধ্যে নয়, মহাকরণে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেই বেনামে এ রকম সর্বনেশে আমানতের কারবার চলছে বলে অভিযোগ। বাড়তি সুদের লোভে সরকারি কর্মীদের একাংশই ওই সব জায়গায় লগ্নি করেন বিপুল টাকা।
লোভের ফাঁদটা কী রকম? সরকারের বিভিন্ন দফতরে দু’তিন জনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ছোট ছোট আমানতি কারবার। মহাকরণের এক কর্তা বলেন, “দফতরের কর্মীদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ হয়। পুরো লেনদেনটাই হয় সাদা কাগজে।” ওই কর্তা বলেন, “সারদার মতো ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির ধাঁচেই কর্মীদের কাছ থেকে ফি মাসে দু’শো থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা হয়। টাকা জমা দিয়ে কর্মীরা খাতায় নিজের নামের পাশে সই করে দেন। সাদা কাগজেই রসিদ দেওয়া হয়। আশ্বাস দেওয়া হয়, বছর তিনেক পরে টাকা দ্বিগুণ করে ফেরত দেওয়া হবে।”
কিন্তু কী করে এত কম সময়ে টাকা দ্বিগুণ হবে? মহাকরণের কর্মীরা বলছেন, কর্মীদের কাছ থেকে টাকা তুলে তা ফের কর্মীদেরই অত্যন্ত চড়া সুদে ধার দেওয়া হয়। অর্থ দফতরের এক কর্মীর কথায়, বছরে ৩৬% (মাসে ৩%) সুদে টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ, পুরো টাকা ঋণ দেওয়া হলে তিন বছরে ১০০ টাকা থেকে মেলে ২০৮ টাকা। এর মধ্যে ফেরত দেওয়ার কথা ২০০ টাকা।
এই অল্প লাভেই আটকে থাকছেন না ওই সব কারবারের সঙ্গে যুক্তরা। কৃষি দফতরের এক কর্মী বলেন, “এ রকম কারবার চালানো কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রেই পকেট ভারি করতে ফাটকাবাজিতে নেমে পড়েন। এতে কিছু ক্ষেত্রে লাভ ভালই হয়। আবার ভুল ফাটকায় ওই কারবার ডুবেও যায়। তখন মার যায় আমানত।” বাম আমলে এ ভাবে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের কর্মীদের নিয়ে তৈরি ‘তৃণমূল এমপ্লয়িজ ফেডারেশন ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ ফান্ড’ নামের একটি তহবিলের বিরুদ্ধে। তাতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের সরকারি কর্মী সংগঠনের তিন নেতা সঞ্জীব পাল, অরুণ পাল এবং অমিতাভ মাইতি-র বিরুদ্ধে। ক্যানসারে আক্রান্ত সরকারি কর্মী আরতি সাহার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ চার্জশিট পেশ করে তাঁদের নামে। এর পরেই ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। অভিযোগ, শাসক দলের কর্মী সংগঠনের নেতা হওয়ায় চার্জশিট থাকা সত্ত্বেও তাঁদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় সম্প্রতি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন তাঁরা।
কল্লোল বালা নামে অর্থ দফতরের এক কর্মীর বিরুদ্ধেও এ রকমই একটি আমানতি কারবার চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। বিভাগীয় তদন্তের পরে ওই কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়। কল্লোলবাবুর কোনও রাজনৈতিক রং নেই বলেই জানিয়েছেন কর্মীরা।
এই ঘটনাগুলি সামনে আসার পরেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলিকে নিষিদ্ধ করে তদানীন্তন বাম সরকারের অর্থ দফতর। ২০১০ সালের ২৫ জুনের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহাকরণে এ ধরনের কোনও আমানত সংগ্রহ গোচরে এলেই কর্মীরা যেন ইকনমিক অফেন্স সেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তার পরে এ সব সংগঠন প্রকাশ্যে কাজ করা বন্ধ করেছে। কিন্তু বেনামে রমরমিয়ে চলছে আমানত সংগ্রহ। তার মধ্যে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরও। সম্প্রতি আইএনটিইউসি অনুমোদিত কর্মী সংগঠন ‘কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ’ মুখ্যসচিবকে বিষয়টি জানিয়ে অবিলম্বে এই ধরনের আমানত সংগ্রহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। কিন্তু কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিয়ে ধন্দে প্রশাসনের কর্তারা। এক কর্তার কথায়, “পুরো বিষয়টিই সাদা কাগজে চলায় কিছু করা কঠিন। কর্মচারীরা পুলিশে অভিযোগ জানালে তদন্ত শুরু করা যেতে পারে।” |
|
|
|
|
|