হুল্লোড়
কান-এ যাচ্ছেন কলকাতার মেয়ে
কটি মেয়ের গল্প। সে নিজের যৌবনকে টিকিয়ে রাখতে চায়। যৌবনের প্রতি ভীষণ অবসেস্ড সেই মেয়ে একদিন নিজেকে হঠাৎই আবিষ্কার করল অন্য ভাবে। এমন একটি গল্প নিয়েই লন্ডনে বসে ১২ মিনিটের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করে ফেলেন এক বাঙালি কন্যা। আর তাঁর তৈরি প্রথম ছবিটিই স্থান করে নিয়েছে বিশ্ববিখ্যাত কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ৮৮টি দেশের কয়েকশো এন্ট্রির মধ্যে থেকে কলকাতার মেয়ে শ্রীময়ী ভট্টাচার্যের সেই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘শ্যাডোস’ মনোনীত হয়েছে উৎসবের ‘শর্ট ফিল্ম কর্নার’-এ। এর আগে বার্লিনের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল কৌশিক মুখোপাধ্যায়ের (কিউ) ছবি ‘গান্ডু’। বাঙালি কন্যার এই সাফল্যের খবরে কিউ-র প্রতিক্রিয়া, “সাংঘাতিক ব্যাপার। খুবই ইন্সপায়ারিং। বাংলার ছেলেমেয়েরা ফাটিয়ে দিচ্ছে!”
আদতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী শ্রীময়ী ২০০৮ সালে পাশ করার পরে চাকরি নিয়েছিলেন টিসিএস-এ। চাকরির সুবাদেই কয়েক বছরের জন্য চলে আসতে হয়েছিল লন্ডনের কাছে নরউইচ শহরে। চাকরি করতে করতেই ভর্তি হন লন্ডনের রেনডান্স ফিল্ম স্কুলে দু’বছরের ফিল্ম ডিরেকশনের উইক এন্ড কোর্সে। তাঁর কথায়, “একটু বড় হওয়ার পর থেকে ছবি-টবির দিকে আগ্রহ জন্মেছিল। তবে তা নিয়ে কখনও সিরিয়াস কাজ করব, ভাবিনি। লন্ডনে সেই সুযোগটা চলে এল।” বিদেশে গিয়ে মেয়ে যে এমন কিছু করে বসবে তা কখনও ভাবেননি শ্রীময়ীর বাবা-মাও। যাদবপুরের বাসিন্দা বাবা দিলীপ ভট্টাচার্য ও মা শিবানী ভট্টাচার্য বললেন, “গোড়ার দিকে আমরাও ভাবিনি। তবে কোর্সে ভর্তি হওয়ার পর যে ভাবে কষ্ট করে ক্লাস করতে যেত, তাতে বুঝতে পারছিলাম মেয়ে একটা বড় কিছু করবে। তা ছাড়া কোয়েল (শ্রীময়ীর ডাকনাম) যাতেই পা রেখেছে, একটা কিছু করে ছেড়েছে।” ক্যামেরার পাশাপাশি কলম-ও ধরেন শ্রীময়ী। লাইফ ইন আ মেট্রো নামে একটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে শ্রীময়ীর।
‘শ্যাডো’-এর শ্যুটিংয়ের একটি দৃশ্য।
গত ডিসেম্বর থেকেই অবশ্য ছবির গল্পটা শ্রীময়ীর মাথায় ঘুরছিল। এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে একটি ব্রিটিশ প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। স্ক্রিপ্ট পড়ে তারাও ছবিটা করতে রাজি হয়ে যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় শ্যুটিং। ছবির কাজ শেষ হয় সাত দিনে। “ক্যাননের ফাইভ-ডি ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা রাশটা ছিল ৬০ মিনিটেরও বেশি। এডিটিংয়ের পরে সেটাই ১২ মিনিটে দাঁড়ায়।” বলছেন শ্রীময়ী। মজার বিষয় হল, ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ শেষ হয়েছিল ৭ মার্চ। আর ৮ মার্চ ছিল কান-এর ‘শর্ট ফিল্ম কর্নার’-এ ছবি পাঠানোর শেষ দিন। শ্রীময়ী জানালেন, “আমার টিম দ্রুত কাজটা শেষ করে। যার জন্যই ছবিটা শেষ পর্যন্ত সাবমিট করতে পেরেছিলাম। আর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই আমাদের কাছে সিলেক্ট হওয়ার খবরটা আসে!”
‘টিম’ই বটে!
নিজের শর্ট ফিল্মের শ্যুটে পরিচালক শ্রীময়ী

একমাত্র সঙ্গীত পরিচালক অভীক মিত্র ছাড়া শ্রীময়ীর টিমে সকলেই বিদেশি। কলকাতাবাসী অভীকের ছবির সঙ্গীত তৈরির কাজেও সেতু বেঁধেছে প্রযুক্তি। স্কাইপ-এ শ্রীময়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কলকাতা থেকেই ছবির সঙ্গীত তৈরি করেছেন। এ ছাড়া মোটামুটি ‘আন্তর্জাতিক’ ফিল্ম ইউনিট নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘শ্যাডোস’। তাৎপর্যের বিষয় হল এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফার লন্ডনের বাসিন্দা পাকিস্তানি তরুণ উসমান ফারুক। মুম্বই হামলার পরে দু’দেশের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হয়েছে। খেলাধুলোও বন্ধ হয়েছে অনেক দিন। কিন্তু সেই খারাপ সম্পর্কের ছায়ায় ঢাকা পড়েনি ‘শ্যাডোস’। উসমানের কথায়, “শিল্পের আদানপ্রদান কোনও সীমানা মানে না। ছোটবেলা থেকেই দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন দেখে আসছি। কিন্তু তার বাইরেও তো একটা দুনিয়া আছে! আমি বা শ্রীময়ীর মতো আজকের প্রজন্মেরা সেখানেই বাস করি।”
শুধু শ্রীময়ীই নন, এ বার একই বিভাগে কলকাতার ছেলে অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘সতী’ও জায়গা করে নিয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তথা ‘স্থানীয় সংবাদ’ ছবির পরিচালক মৈনাক বিশ্বাসের মত, “খুবই আনন্দের খবর। এখন প্রচুর অল্পবয়সি নতুন ছেলেমেয়ে ছবি তৈরি করছে। ডিজিটাল টেকনোলজি আসায় কাজটা অনেক সহজ হয়েছে। একটা নতুন ধরনের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। বেঙ্গালুরুতে এখনও সেই পেশার চাকরিতেই আছেন শ্রীময়ী। ফিল্মি দুনিয়ার সঙ্গে কখনওই তেমন কোনও সম্পর্কই ছিল না। তবে অভিষেকেই এই সাফল্যের পর শ্রীময়ী ভাবতে শুরু করেছেন ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে ছবি তৈরির দুনিয়ায় আসার কথা। তার আগে একরাশ স্বপ্ন চোখে আগামী ১৫ মে নিজের ছবি নিয়ে ফিল্মের মক্কায় পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় শ্রীময়ী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.