|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিও না |
অ্যাঙ্করদের তারাবাজি |
এঁরা না থাকলে আইপিএল-এর জৌলুস কমে যেত। স্মার্ট, ঝকঝকে উপস্থিতিতে
শো মাতিয়ে রাখেন এই টিভি অ্যাঙ্করেরা। তাঁদের নিয়ে লিখছেন রেশমি বাগচি |
এঁরা ঠিক আপনার স্বপ্নে দেখা, রুপোলি দুনিয়ার কেউ নন। সিরিয়ালের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মতো প্রতিদিনের সঙ্গীও নন। কিন্তু বছরের এই সময়টা এঁরা আপনার প্রতিটা বিকেল ও সন্ধ্যা জমিয়ে রাখেন হাসি, ঠাট্টা, গল্প, আড্ডা এবং অবশ্যই গ্ল্যামার দিয়ে। তাঁরা কবে কী পোশাক পরলেন, কখন বলতে বলতে হড়কালেন বা ভুল করলেন, ফেসবুক, টুইটার অ্যাকাউন্টে কে কী পোস্ট করলেন, কোনও কিছুই আপনার নজর এড়ায় না। “আগে তারকাদের ক্রিকেট ম্যাচে যখন অমিতাভ বচ্চন, বিশ্বজিৎ, উত্তমকুমাররা মাঠে নামতেন, তখন ধারাভাষ্য করতেন রবি ঘোষ, আসরানিরা,” বললেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। চূড়ান্ত গ্ল্যামারাস কাণ্ডকারখানা। তাঁর মতে, গ্ল্যামারের সেই বিচ্ছুরণই দর্শক উপভোগ করেন আইপিএল-এ।
|
কাজটা মোটেও সোজা নয় |
চার দিকে টানটান উত্তেজনা, হাই ভোল্টেজ আলো, হাজার হাজার দর্শকের চিৎকার। এক জন অ্যাঙ্করের কেরামতি দেখানো চাট্টিখানি কথা নয়। সময় কম তাই অল্প কথায়, মুহূর্তের চটকে নিজেকে চিনিয়ে দেওয়া। কী বলছেন শহরের বিশিষ্ট অ্যাঙ্কররা...
মীর: এই হুল্লোড়ে গা ভাসাতেই হবে অ্যাঙ্করকে। না হলেই বেমানান লাগবে। শুধু মাত্র খেলা তো নয়, চেঁচামেচি করা, দর্শকের সঙ্গে ইন্টার্যাক্ট করা, পোড়খাওয়া ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব সারা, স্পনসরদের কথা মাথায় রেখে চার-ছয়ের ঘোষণা করা, ও দিকে কানে টক-ব্যাকে কম্যান্ড ঠিক ঠিক খেয়াল রাখা, আর অবশ্যই সবটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করা। কখনওই সোজা নয়।
মধুমন্তী মৈত্র: আমার মনে হয় আইপিএল অ্যাঙ্কররা নিজেদের লক্ষ্যে সফল। খেলা শুরুর আগে বা পরে দর্শক যাতে অন্য চ্যানেলে রিমোট না ঘোরান, তার যাবতীয় উপকরণ নিয়েই পর্দায় হাজির হন আইপিএল অ্যাঙ্কররা। মনে রাখতে হবে আইপিএল-এর দর্শক সব ধাঁচের, সব বয়সের মানুষ। তাঁরা ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের দেখতে চান। তাই অ্যাঙ্করিং হওয়া উচিত নির্মেদ, মজাদার এবং চমকপ্রদ। বাড়তি কথা অ্যাঙ্করিং-এর ধার যেন কমিয়ে না দেয়।
রায়া ভট্টাচার্য: এই ধরনের অ্যাঙ্করিং-এ এনার্জি লেভেল খুব বেশি রাখা জরুরি। ইডেনে অ্যাঙ্করিং করার সময় নিজে বুঝতে পেরেছি, কতটা কনফিডেন্স এবং নার্ভ শক্ত রাখা প্রয়োজন। কোনও অডিটোরিয়াম বা স্টুডিয়ো অ্যাঙ্করিং-এর সঙ্গে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। খুব ফোকাসড থাকতে হয়। শুধু তাই নয়, অ্যাঙ্করদের নিজের মেক আপ, ড্রেস, অ্যাক্সেসরিস, হেয়ার ডু সব দিকে নজর রাখতে হয়। দর্শক সব সময় স্মার্ট, ওয়েল ড্রেসড অ্যাঙ্করকেই দেখতে পছন্দ করেন।
|
করিশমা কোটাক |
শিবানী দান্দেকর |
সমীর কোচার |
|
সমীরের কণ্ঠ, গৌরবের উইট |
সমীর কোচার আর গৌরব কপূর, আইপিএল অ্যাঙ্করিং-এর দুই স্তম্ভ। আরও অনেক অ্যাঙ্করকেই দেখা গিয়েছে, কিন্তু এদের বিকল্প কেউই হয়ে উঠতে পারেনি। চ্যাং বা আয়ুষ্মান খুরানার মতো জেন-এক্স অ্যাঙ্করদেরও দর্শক দেখেছেন আইপিএল-এ। বাকিরা পরিবর্তিত হলেও সমীর, গৌরব রয়ে গিয়েছেন। আর যত দিন গেছে, ততই এঁদের অ্যাঙ্করিং ধারালো হয়েছে।
গৌরব কপূর: পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতে, গৌরবের সেন্স অফ হিউমার দারুণ। ক্রিকেটের পাশাপাশি, সিধুর সঙ্গে গৌরবের খুনসুটি, একে অপরের লেগ পুল পুরো পরিবেশটাই বদলে দেয়। এই তো সে দিন ভিভ রিচার্ডস আর সুনীল গাওস্করের স্মৃতি উস্কে বেরিয়ে পড়ল কোটলা ম্যাচের কথা। ভিভের ব্যাটের কানায় বল ছুঁয়েছিল কি না, তা নিয়ে চেপে ধরলেন গাওস্কর। এই গল্পগুলি সামনে আনতে পারেন একজন অ্যাঙ্করই। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ম্যাচ দেখতে গিয়েও খেয়াল করেছেন, কী ভীষণ ইন্টার্যাক্টিভ গৌরব। মজা করে কথা বলার ধরনই গৌরবের ইউএসপি।
সমীর কোচার: “অ্যাঙ্করিং সবাই করতে পারে না, ইশ্বর কোনও কোনও মানুষকে এই বিশেষ ক্ষমতা দেন,” বললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। প্রসেনজিতের পছন্দের অ্যাঙ্কর সমীর। মীর আবার সমীরের ভরাট গলার ফ্যান। মীরের মতে, গৌরবও বেশ রসিক মানুষ। রাইমার কথায়, “সমীর বেশ সুপুরুষ, ভাল দেখতে আর আকর্ষণীয়। ওর কথা বলার ধরন, গম্ভীর গলার আওয়াজ বেশ লাগে শুনতে খুবই প্রেজেন্টেবল।” রায়া ভট্টাচার্য মনে করেন, সমীরের কৃতিত্ব ওঁর সাবলীল হাবভাব, চাউনি, বডি ল্যাঙ্গোয়েজে। গৌরবের মতো জাম্পিং ঝপাং না
করেও সমীর নিজের ব্যক্তিত্বের বিচ্ছুরণেই সবার নজর কাড়েন। একই মত মধুমন্তী মৈত্ররও। অনেক ক্রিকেট বোদ্ধার থেকেও ওর ক্রিকেট ব্যাখ্যা শুনতে ভাল লাগে।
|
মহিলা অ্যাঙ্কর |
মন্দিরা বেদি যে কাজটা শুরু করেছিলেন, আজ থেকে প্রায় বছর নয় আগে। সেই কাজটাই আরও জোরালো ভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন অর্চনা বিজয়, শিবানী দান্দেকর, রোসেল মারিয়া রাও বা করিশমা কোটাকরা। মন্দিরার নুডল স্ক্র্যাপ যে ভাবে পুরুষ হৃদয়কে তোলপাড় করেছিল, ঠিক সে ভাবেই করিশমার শর্ট ড্রেস, অর্চনার চমৎকার ফিগার হাগিং ব্যান্ডেজ ড্রেস বা শিবানীর অফ শোলডার টপ আইপিএল এক্সট্রা ইনিংসের টিআরপি বাড়িয়ে তোলে।
“আমার তো মনে হয় আইপিএল অ্যাঙ্করিং একদিন মহিলা অ্যাঙ্কররাই লিড করবেন,” বললেন মধুমন্তী। ঋতুপর্ণা মনে করেন মেয়েরা ক্রিকেট বোঝে না, এই মানসিকতা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন এই নারীরাই। আর এ ব্যাপারে যিনি পথপ্রদর্শক, তিনি হলেন মন্দিরা বেদি, আমার খুব পছন্দের” বললেন ঋতুপর্ণা। একমত প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। মন্দিরা ট্রেন্ড সেটার। আজকের প্রজন্ম এই যে আইপিএল অ্যাঙ্করদের নিয়ে এত মাতামাতি করে, তার পেছনে ওঁর বিশাল অবদান। বোল্ড ’এন বিউটিফুল। ওঁকে নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি।
মীরের মতে, অর্চনা বিজয় গত দু’টো সিজন খুব ভাল অ্যাঙ্করিং করেছিলেন। অর্চনা আবার রাইমার ভাল বন্ধু। তিনি বললেন, “অর্চনার অ্যাঙ্করিং, ওর ড্রেস-সেন্স প্রশংসাযোগ্য। ও ক্রিকেট ভালবাসে, মজা করতে ভালবাসে আর এই সব কিছুই ও আইপিএল-এ পেয়েছে। এত দিন ধরে এত ভাল কাজ করছে ও। আইপিএল ওকে পরিচিতি দিয়েছে, অনেক বন্ধু দিয়েছে আর অবশ্যই ওকে ধনী করেছে।”
|
অর্চনা বিজয় |
মন্দিরা বেদি |
গৌরব কপূর |
|
এ বছর নতুন যাঁরা |
মীরের মতে, “নতুন দুই মহিলা অ্যাঙ্কর বেশ কাঁচা। বোঝাই যাচ্ছে, স্ক্রিপ্ট থাকা সত্ত্বেও এঁরা ঠিক মতো ডেলিভার করতে পারছেন না। মাঝে মধ্যে দেখছি কপিল, সানি গাওস্কররা নিজেরাই প্রশ্ন ধরিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের। আরও পড়াশোনা করা দরকার।” “এর আগের বছরগুলিতে যাঁরা অ্যাঙ্করিং করেছেন তাঁরাই প্রত্যাশার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাই নতুনদের জন্য কাজটা কঠিন,” এমনটাই মনে করেন রায়া ভট্টাচার্য। মধুমন্তী মৈত্র আশা করছেন, আরও কিছু দিন গেলে, ধীরে ধীরে মহিলা অ্যাঙ্কররা আইপিএল-এর সঙ্গে আরও একাত্ম হবে এবং উন্নতি করবে। তবে নতুনদের মধ্যে সৃজিতের ভাল লাগে, করিশমা কোটাককে। “মুখখানা ভারি সুন্দর। বেশ সাবলীল ভাবে কথা বলেন, কথায় কোনও জড়তা নেই। কনটেন্ট কতটা ভাল তা ঠিক জানি না। তবে অসম্ভব সুন্দর দেখতে।”
|
কেরিয়ার গড়ে দেয় আইপিএল |
কে ভেবেছিল বলুন তো, আইপিএল শুধু ক্রিকেটারদের কেরিয়ারই গড়ে দেবে না, অ্যাঙ্করদের জন্যও হয়ে উঠবে দারুণ কেরিয়ার অপশন। আইপিএল-এর পরিচিতির পর সমীর কোচার সম্প্রতি হাই টিআরপি সিরিয়াল ‘বড়ে আচ্ছে লাগতে হ্যায়’তে দারুণ অভিনয় করলেন। মডেল এবং স্ট্রাগলিং অ্যাক্টর হিসেবে পথ চলা শুরু সেই ২০০৫ সালে। সাফল্যর স্বাদ পেলেন ২০০৮ এ-আইপিএল অ্যাঙ্করিং করে। এরই মধ্যে করে ফেলেছেন কয়েকটি ফিল্মও। গৌরব চানেল ভি-র ভিজে অনেক দিন। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু ফিল্মেও, কিন্তু সেই ভাবে দাগ কাটতে পারেননি। আইপিএল-এ নতুন ভাবে দর্শকরা দেখলেন তাঁকে, যা নিঃসন্দেহে তাঁর কেরিয়ারে বাড়তি নম্বর যোগ করল। সুন্দরী করিশমা কোটাকদের ভারতে আগমন ২০০৫-এ। এর আগে তিনি লন্ডনে মডেলিং, অ্যাঙ্করিং করেছেন। এই দেশে এসে কাজের অভাব হয়নি তাঁর, কিংফিশার ক্যালেন্ডার গার্ল মডেলিং-এর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণী ফিল্মেও অভিনয় করেছেন। পরিচিতি পান বিগ বস-৬ এ গিয়ে। ৬ সংখ্যাটা মনে হয় খুব লাকি তাঁর। বিগ বসের পরই আইপিএল ৬-এও তাঁর অন্তর্ভুক্তি। শোনা যায়, এক সময় ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহের সঙ্গে তাঁর বেশ গভীর বন্ধুত্ব ছিল। আরও শোনা যায়, সোহেল খানের প্রযোজনায় সলমনের বিপরীতে তিনি নাকি এই বছরই একটা ফিল্ম করছেন। জনি ডেপের ভক্ত রোসেল, মিস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল হন। ভারতসুন্দরী তো অনেকেই হন, কিন্ত এমন সুযোগ সবাই পান না। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন রোসেল। দেখা যাক তিনি এই কাজে সফল হন কি না।
তবে এর পর থেকে যখন আইপিএল শো দেখতে বসবেন, খেয়াল করবেন, অ্যাঙ্কররা কী ভাবে প্রতি মুহূর্তে নিজেদের নতুন ভাবে পরিবেশন করার চেষ্টা করেন আপনার সামনে, আপনাকে এন্টারটেইন করবেন বলে। নিজে অ্যাঙ্কর হিসেবে ওদের প্রত্যেককে তাই বলতে ইচ্ছে করছে, চক দে...আইপিএল অ্যাঙ্কর...চক দে...
|
জাম্পিং ঝপাং কার সঙ্গে |
ফারহা খানের জাম্পিং ঝপাং স্টেপ কার সঙ্গে করতে চান সেলিব্রিটিরা?
নিজেরাই বেছে নিলেন তাদের পার্টনারকে। |
• প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়: মন্দিরা বেদি |
• সৃজিত মুখোপাধ্যায়: সুনীল গাওস্কর (কোনও অ্যাঙ্কর না) |
• মীর: মন্দিরা বেদি |
• ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: সেই সময় যাকে ভাল লাগবে |
• রায়া ভট্টাচার্য: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (কোনও অ্যাঙ্কর না) |
• মধুমন্তী মৈত্র: সমীর কোচার |
• রাইমা সেন: অর্চনা বিজয় |
|
|
|
|
|
|