|
|
|
|
|
|
স্বপ্নময় চক্রবর্তী |
রীতার মা আমাদের বাড়িতে কাজ করেছে বহু দিন। রীতাকে কোলে নিয়ে এসে বারান্দায় শুইয়ে দিয়ে কাজ করত। সেই রীতা বড় হল, রীতাকে বিয়ে দিল। বেনারসি আর কানের গয়নাটা আমরাই দিলাম। ওর বিয়েতে যাইনি।
রীতার মা বলেছিল, জামাই ভালই। অনেক রকমের বিজনেস। অনেক রকম বলতে? ‘শিশি বোতল, কৌটো, পেলাস্টিক, তার পর ধরো কাপড়, কাগজ... কাগজেরও কত রকম। খবর কাগজ, কুড়োনো কাগজ...। জামাইয়ের বাপ মহাজন। ওর ঘরের সামনে পেল্লায় দাঁড়িপাল্লা। ওখানে মালপত্র ওজন হচ্ছে। মেয়ে ভালই আছে আপনাদের আশীর্বাদে। ছট পুজোয় একশো কাঁদি কলাকে গঙ্গায় চ্যান করিয়ে আনল।’
ওরা হিন্দুস্থানি বুঝি? আমার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করেছিল।
রীতার মা বলল, না না, ওরা এখন বাঙালি, শুধু ছট পুজো করে, আর মেয়েকে বকাঝকা করার সময় হিন্দিতে খিস্তি দেয়। আর একটু হনুমান হনুমান করে।
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
তার পর বলল, বেয়াইমশাইটা কেমন যেন! মুসকো। মোটা গোঁপ, দারোয়ানদের মতো। আর চোখ দু’টো লাল। কেমন কেমন যেন কথা কয়। তা ছাড়া সব ভাল।
রীতার মা হঠাৎই মারা গিয়েছিল। সম্ভবত ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া। প্রকৃতি শূন্যতা পরিহার করে। রীতার মায়ের জায়গায় ঠিকই কোনও গীতার মা এসে যায়।
রীতাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল খুব, এক দিন খুঁজে খুঁজে ওর ডেরায় গেলাম। কোন এলাকা বলব না, রিস্ক আছে। রীতা খুব ছুটোছুটি করতে লাগল আনন্দে। বলল, তোমার জামাই বাড়ি নেই জেঠু। মাল নিয়ে বেরিয়েছে। শ্বশুর আছে। ঘরে নিয়ে গিয়ে খটখটে কাঠের চৌকিটার উপর একটা চাদর বিছিয়ে দিল। চাদর তো নয়, ফ্লেক্স। প্লাস্টিক জাতীয় কিছু একটা। চৌকির উপর তখন লম্বালম্বি আলখাল্লা গায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তলায় লেখা ‘ঐ মহামানব আসে চারিদিকে রোমাঞ্চ জাগে। সৌজন্যে দীপক কুমার গুঁই (গচ্চা)। কাউন্সিলর— নম্বর ওয়ার্ড।’ আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। রবীন্দ্রনাথের উপর বসা যায়? রীতার শ্বশুরমশাই রাস্তায় একটা খাটিয়ায় বসে কাজের তদারকি করছিলেন। বস্তার ভিতর থেকে একটি ছেলে বোতল বার করছিল। অধিকাংশই মদের বোতল। রীতা আমার সঙ্গে ওর শ্বশুরের পরিচয় করিয়ে দিল। ওঁর নাম ভজন দাস। আমি প্রথমেই বললাম, আপনার মোচটা দেখার মতো। উনি হাসলেন। বললেন, আমার বাপ-ঠাকুরদা মোচ রাখতে পারত না। আমরা চামার কিনা, নিচু জাতের মোচ রাখতে নেই আমাদের বালিয়া জেলায়।
কর্মচারী ছেলেটা মদের বোতলের ছিপিগুলি খুলছিল। প্রত্যেকটা বোতলের তলায় দশ-বারো ফোঁটা তলানি থেকেই যায়। ছেলেটা বোতলগুলো উপুড় করে একটা বোতলের মধ্যে জড়ো করছিল। ছোটবেলার শেখা পদ্যটা মনে পড়ে গেল ছোট ছোট বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল। সত্যিই দেখলাম কিছু ক্ষণের মধ্যে একটা বোতল ক্রমশ ভরে উঠল এক আশ্চর্য ককটেল-এ। বললাম, এর মধ্যে তো সব রকম মদই আছে, তাই না? ভজন দাস বলল হ্যাঁ স্যর, সব কুছ মিলিজুলি হয়েই তো ভগোয়ান। দেখিয়ে না, ‘হুইস্কি মে বিষ্ণুজি হ্যায়/ রাম মে তো খুদ রাম/ জিন মে জানকী হ্যায়/ সব মে হ্যায় ভগোয়ান।’ ঠেলাওলা রিকশাওলারা এই বিলিতি মাল লিয়ে যায়। আসেন, ভিত্রে বসেন।
তক্তপোশে টানটান রবীন্দ্রনাথ। রীতাকে বলি, ‘পালটে দে।’ এ বার স্বামী বিবেকানন্দ পেতে দেয়। দেখলাম, ডাঁই করা ফ্লেক্স। ওখানে সের দরে মনীষী কিনেছে ভজন দাস! কুড়ুনিরা ওগুলো নিয়ে আসে। হাত জোড় করা সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ সব।
বলি, রীতা, এমনি চৌকিতেই বসছি, এটা সরিয়ে দে।
রীতা বলে, হ্যাঁ, একটু নোংরা লেগেছে এটায়। একটা টাটকা মনীষী বিছিয়ে দিল রীতা। হাত জোড় করা মনীষী। ‘নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন গ্রহণ করুন। উন্নয়নের জোয়ারে আপনাদের বিশ্বস্ত সারথী তোচন দাস (কালু)’। এই মনীষীর পদতলে বসলাম।
কোথায় বিক্রি করেন এ সব?
ভজন দাস বলল, প্লাস্টিকওলারা এগুলো লিয়ে যায়। গলায় না কী করে জানি না, আর ঝুপড়িওলারা লিয়ে যায়। সস্তার তেরপল। রীতাকে বললাম, তোর ছেলেটাকে দেখা।
ভিতরের ঘরে নিয়ে গেল। ওখানে একটা চৌকিতে শুয়ে আছে ছ’মাসের শিশু। অয়েল ক্লথ নয়, যেখানে শুয়ে আছে, দেখে শিউরে উঠলাম। ভাঁজ করা ফ্লেক্স-টায় একটা হাওয়াই চটি পরা পা, আর ‘পূণ্য হউক পূণ্য হউক’ ছিল, বাকি সব ভাঁজের ভিতরে, আর অবোধ শিশুটি পা ছুড়ছিল।
বললাম, রীতা, মনীষীদের এ ভাবে ব্যবহার করিস না।
ক’দিন পর আমার স্ত্রীকে নিয়ে গেলাম ও-বাড়ি। দেখলাম ভজন দাসের শখের মোচ নেই। বলল কেটে ফেলতে হয়েছে। নেতার ছবিকে অপমান করার শাস্তি।
সেই চৌকিতে বসতে দিল রীতা। পেতে দিল পাজামা পাঞ্জাবি পরা কবন্ধ শরীর।
ভজন দাস বলল, বেওসা বন্ধ করব নাকি? সব হাত জোড় করা তস্বিরগুলোর গলাটা কাঁচি দিয়ে কেটে লি। বলুন, আর কোনও পুরুফ্ রইল? ওই কোণে মাথাগুলো রাখা আছে। পরে একটু কম দরে বেচে দিব। মাছের মাথা যেমন। |
|
সুমিত্র বসাক |
|
• অফিস কেটে ‘গয়নার বাক্স’-য় ঢুকে দেখেন, আঁ! তামিল সিনেমা! হতচ্ছাড়া হল টিকিটে
বা কাগজে শো চেঞ্জের কথা ছাপেনি। সামনের সিটে ওরা। আপনার সঙ্গে ছারপোকা। |
|
|
• রাতে পড়বেন বলে রগরগে পর্নোগ্রাফি এনেছেন।
বইটা মোক্ষম
জায়গায় লুকিয়ে রাখলেন। তার পর বিছানায় এসে, এত যত্ন করে
কোথায় বইটা তুলে রেখেছেন, কিছুতেই মনে করতে পারলেন না। |
• কী বাতের ব্যথা! ডায়েরি দেখে নম্বর টিপলেন। ‘অ্যাই কাকলি, ধনেশ পাখির
তেলটা দিয়ে যাস।’ ও-পারে তুলকালাম। কারণ, আপনি মালিশ-কাকলি
ভেবে নাতনির দোর্দণ্ডপ্রতাপ ক্লাসটিচার কাকলি মিস’কে ফোন করেছেন। |
|
|
|
|
• উত্তরপ্রদেশের এডিজি-অফিস থেকে সমস্ত পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট-এর কাছে পৌঁছল পাঁচ পাতার সার্কুলার: পুলিশকর্মীদের কাজে উদ্বুদ্ধ ও মনোবল চাঙ্গা করতে অবিলম্বে জেলায় জেলায় চালু করতে হবে দবং-দাওয়াই। ‘দবং’, ‘সিংহম’ ও ‘অব তক ছপ্পন’, এই তিনটি ছবির প্রদর্শন কম্পালসরি, ওয়েটিং লিস্টে ‘গঙ্গাজল’, ‘অর্ধসত্য’, ‘শোলে’। পরদার চুলবুল পাণ্ডের অতিনাটুকে ফিল্মি হাবভাব টুকতে নয়, গণতান্ত্রিক ভারতে পুলিশও যে ফর দ্য পিপ্ল, বাই দ্য পিপ্ল, অফ দ্য পিপ্ল, সেই ইমেজ-দর্শানোই উদ্দেশ্য। কে না জানে, অপরাধপ্রবণ রাজ্যে চুরি-জালিয়াতি থেকে ধর্ষণ-খুনের মতো লক্ষ ঘটনায় জন-মানসে পুলিশ মানেই ঠুঁটো জগন্নাথ কিংবা লোলুপ ভক্ষক, যুগযুগান্ত ধরে সেলুলয়েডেও পুলিশের খল অশান্তিবর্ধক অথবা উর্দিপরা ভাঁড়-স্টিরিয়োটাইপই জ্বলজ্বলে। শুধু এই ছবিগুলোই ব্যতিক্রমী, এখানে পুলিশ ঘুষ-মদ দুইই খায়, আচরণে-কথাবার্তায়-রসিকতায় পরিশীলতার ধার ধারে না কিন্তু পাবলিক ও প্রেমিকা এই দুইকেই কোন চুম্বকে কাছে টানতে হয় বিলক্ষণ জানে, আর গরিবের উদ্ধারে তো মূর্তিমান রবিনহুড। পুলিশ তার কাজ ঠিকঠাক করলেই হল, উপায় অপ্রাসঙ্গিক। সাজেশন মন্দ নয়। হিট-ফিল্মি পুলিশদের সুপারম্যানোচিত কীর্তিকলাপ যদি হাই-তোলা বাস্তব পুলিশকুলের আড়মোড়া ভাঙায়, দায়িত্ব-চনমনে করে তোলে, ক্ষতি কী?
•
জেলবন্দি আল-কায়দা জঙ্গিদের শুধরোতে সৌদি আরব সরকারের ‘হট্কে’ ওষুধ: লাক্সারি রিহ্যাব। রিয়াধে ২৪ একর জমিতে সরকারি খরচে বানানো হয়েছে প্রাসাদোপম পুনর্বাসন কেন্দ্র, তাতে পেল্লায় বিলাসবহুল কামরা, মস্ত ডাইনিং হল, অত্যাধুনিক স্পা-সনা-জিম, অলিম্পিক স্টেডিয়াম সাইজের বিশাল সুইমিং পুল। খাও, পিয়ো, আরামসে জিয়ো, আর ভুলে যাও একে-৪৭, কালাশনিকভ। শোনামাত্র সবাই হাঁ-হাঁ, যাদের নজিরবিহীন হিংসার শিকার দুনিয়াজোড়া লক্ষ মানুষ, তাদেরই জন্য কিনা জনতার ট্যাক্সের পয়সায় অঢেল সুখভোগের বন্দোবস্ত? কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ আসলে কাউন্সেলিং। আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েও যাদের সুমতি হয় না, অপ্রত্যাশিত বিলাসে যদি তাদের মোড় ফেরানো যায়, মাথা থেকে উপড়ে ফেলা যায় উগ্রপন্থার শেকড়। তবে জেহাদিদের যেতে হবে ধর্মশিক্ষার ক্লাসেও, টিচাররা শেখাবেন ইসলাম আসলে অহিংসতার, শান্তির পাঠ। বাধ্য ভালমানুষির পুরস্কারও আছে, বউয়ের সঙ্গে বিলাসবহুল স্যুইটে দু’দিন ছুটি কাটানোর সুযোগ। মানুষ সন্দিহান: শেষে হীন অপরাধের শাস্তি ফাইভ-স্টার যাপন! কারও মন্তব্য: এমন সাধের ‘কমফর্ট জোন’ পেলে বোমারু জঙ্গি হওয়াই ভাল! |
|
|
|
৩৬১
নতুন আর্থিক বছরে বেড়ে যত লক্ষ
পাউন্ড হল রানি এলিজাবেথের বার্ষিক বেতন।
গত বছর অবধি ছিল ৩১০ লক্ষ পাউন্ড |
২৫০০ যত কিলোমিটার জাতীয় সড়ক আছে এ রাজ্যে
৯০০০০০
প্রতি বছর ভারতে নতুন ক্যানসার
রোগীর সংখ্যা অন্তত যত জন
৩০০০০০০০
যত পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির মালকিন হয়ে
‘ইংল্যান্ডের
ধনীতম মহিলা’ হিসেবে ‘সানডে টাইম্স
রিচ লিস্ট’-এ
এক নম্বরে ব্রিটিশ গায়িকা অ্যাডেল |
৪৫০০
কলকাতা শহরে প্রতি দিন উৎপন্ন
জঞ্জালের পরিমাণ যত মেট্রিক টন। প্রতি দিন
নাগরিক পিছু ৫০০ গ্রাম জঞ্জাল তৈরি হয় |
১৪৯
সদ্য-প্রকাশিত ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের তালিকায়
ভারতের স্থান যত নম্বরে। এশিয়া-সেরা
জাপান আছে ২৯ নম্বরে
|
৩৪১০০০০০০০
দিল্লির প্রায় ৪৬০ জন ভিআইপি-র নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে বছরে যত টাকা খরচ হয় বলে
সুপ্রিম কোর্টের হলফনামায় জানাল দিল্লি পুলিশ |
৫১১০
আমেরিকায় মোট যতগুলো
বিমানবন্দর আছে।
ভারতে আছে ১৫০টি |
৩০০০০০০
‘আই অ্যাম মালালা’ বই লেখার জন্য
মালালা ইউসুফজাই-এর সঙ্গে যত মার্কিন
ডলারের চুক্তি করল মার্কিন প্রকাশন সংস্থা |
|
|
|
|
|
লেটারিং বেটারিং |
|
ডেভিড হাসি বা মাইক হাসির চেয়েও ডেঞ্জারাস হাসি |
|
|
|
|
এই ছবির সংলাপ লিখেছেন সুজন কুমার দাস, মাস্টারপাড়া, জিয়াগঞ্জ
|
|
|
|
পাশের ছবির দু’জন কী বলছে? সাদা পাতায়
লিখে পাঠান।
প্রতি ডায়লগ ২০ শব্দের মধ্যে।
ঠিকানা:
নয়া সংলাপ,
রবিবাসরীয়,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ |
|
|
|
|
|
|
|
|
|