সুদ কম, প্রচারেও খামতি স্বল্প সঞ্চয়ে, পুঁজি লুটছে ভুঁইফোঁড়রা
বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার কমাতে কমাতে তলানিতে নিয়ে গিয়েছে কেন্দ্র। এজেন্টের কমিশন নামমাত্র। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রধান আকর্ষণীয় প্রকল্প ‘কিষাণ বিকাশ পত্র’ও। তার সঙ্গে রয়েছে প্রকল্পগুলির প্রচারে রাজ্য সরকারের গা-ছাড়া মনোভাব। স্বল্প সঞ্চয়ের সঙ্গে যুক্ত এজেন্ট থেকে শুরু করে ডাকঘরের কর্তারাও মনে করছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতি ও গাফিলতির কারণেই বাড়তি সুদের লোভ দেখিয়ে গ্রামেগঞ্জে সাধারণ মানুষের টাকা লোটার সুযোগ পাচ্ছে ভুঁইফোঁড় নানা বেসরকারি সংস্থা।
জিপিও-র এক কর্তা জানান, স্বল্প সঞ্চয়ের জন্য রয়েছে মাসিক আয় প্রকল্প, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ), মেয়াদি সঞ্চয় (টাইম ডিপোজিট), জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প, প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্প ও রেকারিং ডিপোজিট স্কিম। তবে সব চেয়ে আকর্ষণীয় প্রকল্প ছিল কিষাণ বিকাশ পত্র (কেভিপি)। ২০১১ সালের পয়লা ডিসেম্বরে ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই সময় থেকেই পিপিএফ এবং প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্পে এজেন্টদের কমিশন দেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে স্বল্প সঞ্চয়ে কার্যত কোনও টাকাই জমা পড়ছে না।
যাঁদের হাত ধরে এক সময় রাজ্যে স্বল্প সঞ্চয়ে জোয়ার এসেছিল, সেই এজেন্টরা আবার অন্য কথা বলছেন। গত ৪২ বছর ধরে জিপিও-তে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের কাজ করছেন সত্যব্রত রায়। তিনি জানান, কেউ যদি এক লক্ষ টাকা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে রাখেন, তাঁর এজেন্ট কমিশন পান ৫০০ টাকা, যা কর কেটে দাঁড়ায় ৩৯০ টাকায়। অথচ একটি ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থায় কেউ লাখ টাকা রাখলে, তাঁর এজেন্টকে কমিশন দেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা।
‘রাজ্য স্মল সেভিংস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সহ-সম্পাদক অপূর্ব রায় বলেন, “আগে সরকারি ব্যাঙ্কের চেয়ে ০.৫০ থেকে ২ শতাংশ সুদ বেশি ছিল ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে। এখন ব্যাঙ্কই বেশি সুদ দিচ্ছে। ফলে ডাকঘরে স্বল্প সঞ্চয়ের আকর্ষণ কমেছে।” তিনি জানান, এ মাসের শুরুতে সব প্রকল্পেই আবার ০.১ শতাংশ করে সুদ কমানো হয়েছে।
ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির দৌরাত্ম্যে সরকারি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের যে দফারফার জোগাড়, অর্থ দফতরের পরিসংখ্যানেই তার ইঙ্গিত মিলছিল। অর্থ দফতর তার মোকাবিলায় কিছু পদক্ষেপও নিতে শুরু করে। কিন্তু তার আগেই ভুঁইফোঁড় সংস্থায় টাকা ঢেলে বিপদের পথ প্রশস্ত করে ফেলেন রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ।
স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির উপকারিতা নিয়ে কয়েক মাস আগে থেকেই প্রচারপত্র বিলির কাজ শুরু করেছিল রাজ্য সরকারের স্বল্প সঞ্চয় অধিকর্তার দফতর। সরকারি মহলের মতে, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের পক্ষে সরকারি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পই সব চেয়ে নিরাপদ। কিন্তু নিছক প্রচারপত্র বিলি ছাড়া দরিদ্র, নিরক্ষর, অনগ্রসর শ্রেণির মানুষকে অবৈধ অর্থলগ্নি সংস্থা ও সুদের কারবারিদের হাত থেকে বাঁচাতে আর কোনও সরকারি উদ্যোগ ছিল না।
স্বল্প সঞ্চয়কে উৎসাহ দেওয়ার জন্য জেলায় জেলায় অর্থ দফতরের বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। সেগুলির মাথায় থাকার কথা উপ-অধিকর্তা (স্বল্প সঞ্চয়) পদমর্যাদার এক জন করে ডব্লিউবিসিএস অফিসারের। অথচ, অর্থ দফতরের ২০১১-১২ সালের প্রশাসনিক প্রতিবেদন বলছে, রাজ্যে যেখানে ২০ জন উপ-অধিকর্তা (স্বল্প সঞ্চয়) থাকার কথা, রয়েছেন ছয় জন। একেবারে তৃণমূল স্তরে মানুষকে বুঝিয়ে স্বল্প সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার জন্য সারা রাজ্যে অর্থ দফতরের ৩৭০ জন সঞ্চয় উন্নয়ন আধিকারিক থাকার কথা। ২০১১-১২ সালে সে জায়গায় ছিলেন ৯৪ জন। এখন তাঁদের সংখ্যা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬।
এর বিরূপ ফলও মিলেছে হাতে হাতে। ২০১০-১১ সালে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরতের পর স্বল্প সঞ্চয় খাতে পশ্চিমবঙ্গের নিট আয় যেখানে ছিল ১২,১৮৯ কোটি টাকা, ২০১১-১২-এ তা কমে দাঁড়ায় ১,৬৫৮ কোটিতে। ২০১২-১৩-এ তা সামান্য বেড়ে হয়েছে ১,৭২৮ কোটি টাকা।
এত দিনে নড়ে বসেছে অর্থ দফতর। ছয় জন উপ অধিকর্তা (স্বল্প সঞ্চয়)-কে আপাতত দুটি করে জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাকি জেলাগুলিতে এক জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার জন্য জেলা শাসকদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ দফতর। একই ভাবে সঞ্চয় উন্নয়ন আধিকারিকদের বিপুল ঘাটতি সামাল দিতে ব্লক এক্সটেনসন অফিসারদের ওই বাড়তি কাজ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রতি বছর রাজ্যে বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে মানুষ টাকা রাখেন। পাশাপাশি টাকা তুলেও নেন। আমাতকারীদের পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে প্রতি বছর নিট যে টাকাটা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে জমা হয়, তার ১০০ শতাংশই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে সহজ শর্তে ঋণ দেয় কেন্দ্র। সুতরাং স্বল্প সঞ্চয় বাড়লে আর্থিক সঙ্কটে জেরবার রাজ্য সরকারও সেই সুবিধে পেতে পারতো।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.