সারদার সংসার

যে সয়
• সাত চড়ে রা নেই কারও। আগন্তুকরা টেবিল চাপড়ে তেড়ে গাল-মন্দ করে চলেছেন। উল্টো দিকে বসে থাকা আধিকারিকরা সবিনয় শান্ত হতে বলছেন। দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুরের সারদা গার্ডেন অফিসে এ ছিল রোজকার দৃশ্য। সুদৃশ্য বাংলোর আশায় টাকা ঢেলে আশা ভঙ্গের পর অনেকেই তখন নিত্য চোটপাট করতে চড়াও হচ্ছেন। তা ছাড়া ২০১০ সাল থেকেই পাওনাদারদের ভিড় জমছিল। এই ক্ষোভ সামলাতে গড়ে ওঠে বিশেষ বাহিনী। ১৫ জনের এই দলটির কাজ শুধু বসে বসে গালমন্দ সহ্য করা। চুপচাপ বসে থাকা, মাঝেমধ্যে দু’-একটা স্তোকবাক্য। এই সহনশীলতার ইনাম হিসেবে বাহিনীর এক-একজন মাইনে পেতেন ৪০ হাজার টাকা।

মধ্যিখানে মহারাজ
• ‘লক্ষ্মী-নারায়ণ’ কোথায় বসবেন, সেটা সবারই জানা ছিল। কিন্তু পাশেই একটি আসন থাকত ফাঁকা। মধ্য বা গভীর রাতে সেন-স্যারের ঘরে বেশির ভাগ মিটিংয়েই তাঁর পাশে থাকতেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। পাথরের মতো মুখে নিঃশব্দে শুনতেন সব। পরের দিকে সিএমডি-র বাঁদিকের চেয়ারেও এক সুবেশ তন্বীর দেখা মিলতে শুরু করে। মিডল্যান্ড পার্কের পাঁচতলায় সেন-স্যারের চেম্বার ঘিরে রাখত যে মহিলা-বলয়, তাঁদের কাছে ওটাই হয়ে ওঠে হট-সিট। সিএমডি-র সঙ্গে মিটিং করতেন, তাঁরা জানতেন দেবযানীর পরে ওটাই সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সেনানীর আসন।

নিশির ডাক
• ভরসন্ধেয় মহাকরণ, লালবাজার, পুরসভার মতো বিভিন্ন বিট থেকে সাংবাদিকরা সবে ফিরেছেন। যে যার মতো কপি লিখতে বসার আগেই ঘোষণা, ‘‘রাত ১১টার আগে বেরোনো চলবে না। সিএমডি স্যার আপনাদের নিয়ে জরুরি মিটিং করবেন।” বাংলা ও ইংরেজি দু’টি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় দলের সঙ্গে এমন বৈঠক বার দু’য়েক হয়েছে। কখনও বা কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের ডাক পড়ত খাস সিএমডি-র চেম্বারে। প্রায় মধ্যরাতের বৈঠকে নিশাচর সুদীপ্ত সেন বাংলায় রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতেন। ভাল বোনাসের আশ্বাস থেকে এক নম্বর হওয়ার সঙ্কল্প, সবই থাকত তাতে। সাংবাদিকরা তখন ধুঁকছেন।

বিসর্জন
• বছর তিনেক আগের এক দুপুরে ডিউটির সময়ে স্টিয়ারিং হাতে ঢুলছিলেন অফিসের গাড়ির এক চালক। বকুনি খেয়ে তাঁর জবাব, “কী করব কাল, ভোর রাত অবধি মাল খালাস করতে হয়েছে যে!” রহস্যভেদ হল একটু বাদেই। ক’দিন বাদেই আয়কর বিভাগের অভিযান হওয়ার কথা ছিল সংস্থার হেড অফিসে। কয়েক জন সোর্স মারফত সেই খবর পেয়েই রাতারাতি বেশ কয়েকটা কম্পিউটার সরিয়ে ফেলা হয়। তাতে সংস্থার অ্যাকাউন্টের নথি। পুলিশ জানতে পেরেছে, বাইপাসের কাছের কোনও ভেড়িতে ওই কম্পিউটারগুলির পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছিল।

জোড়া পাথর
• বছরখানেক আগে থেকেই তাঁর গলার কাছে দু’টি পাথরের কথা বলতেন সুদীপ্ত সেন। সারদার সংবাদমাধ্যম ও অন্যান্য শাখার আধিকারিকদের অনেককেই এ কথা বলতেন তিনি। কোনও সমস্যার কথা জানালে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে আশ্বাসও দিতেন সিএমডি। জানুয়ারি থেকে সংবাদমাধ্যম-সহ সারদার বিভিন্ন অফিসের মাইনে বন্ধ হয়ে যায়। মার্চের মাঝে কেউ কেউ চেকে জানুয়ারির মাইনে পেলেও, বেশির ভাগ চেকই বাউন্স করেছিল। সুদীপ্ত সিবিআইয়ের কাছে চিঠি লিখে কলকাতা ছাড়ার আগে কয়েক জন কর্মী মহিলা-বলয় অতিক্রম করে তাঁর ঘরে ঢুকে পড়ে। তাঁদের সামনে কার্যত ভেঙে পড়েন সিএমডি-স্যার। বলেন, “পারলে আমায় মেরে ফেল, বুকের দু’টো পাথর আমায় শেষ করে দিল।” কী ওই দু’টো পাথর? তদন্তে নেমে তাও খুঁজছে পুলিশ।

তথ্য: ঋজু বসু ও শুভাশিস ঘটক



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.