অ্যানেক্স নিয়ে বিক্ষোভ
ক্ষতিপূরণ দাবি অন্য সংস্থার এজেন্টদেরও
সারদা গোষ্ঠীতে টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের যেমন ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের সংস্থায় লগ্নিকারীদের পাশেও একই ভাবে পাশে দাঁড়াতে হবে রাজ্য সরকারকে, কাটোয়ায় এমনই দাবি তুললেন একটি ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার এজেন্টরা। ‘অ্যানেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন্ডিয়া লিমিটেড’ নামে ওই সংস্থার প্রায় ষাট জন এজেন্ট শুক্রবার কাটোয়ার মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে এই দাবি জানান। চিঠিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার অভিযোগও জানিয়েছেন তাঁরা। এ দিন ওই এজেন্টরা কাটোয়া থানায় বিক্ষোভ দেখান ও সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রসেনজিত্‌ মজুমদার-সহ কয়েক জন কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিন দুপুরে কয়েক জন মহিলা এজেন্ট প্রথমে কাটোয়া থানায় বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা জানান, রাজ্যে ওই সংস্থার মোট ২৪টি অফিস রয়েছে। এজেন্টের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। কাটোয়ার এজেন্টদের অভিযোগ, সংস্থার কাটোয়া শাখা কয়েক দিন আগে থেকে বন্ধ। তার পরে এজেন্টরা লগ্নিকারীদের টাকা চেয়ে কলেজপাড়ায় কাটোয়া শাখার ম্যানেজার প্রসেনজিত্‌ মণ্ডলের বাড়ি ঘেরাও করেন। পুলিশ গিয়ে ওই ম্যানেজারকে উদ্ধার করে। কিন্তু তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি বলে ক্ষোভ ওই এজেন্টদের।
কান্না ছাড়া আর কী-ই বা আছে? পথে বসেছেন এই মহিলার মতো অ্যানেক্সের বহু এজেন্ট। নিজস্ব চিত্র।
ওই ভুঁইফোঁড় সংস্থার এজেন্ট শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহম্মদ রেজাউল হকদের অভিযোগ, “পুলিশ প্রসেনজিত্‌কে ছেড়ে দেওয়ার পরেই দফতরের সমস্ত নথি নষ্ট করে সে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে।” কাটোয়া থানার পুলিশ অবশ্য জানায়, প্রসেনজিত্‌ মণ্ডলকে উদ্ধারের পরে ওই সংস্থার এজেন্টরা কোনও অভিযোগ জানাননি। তাই তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি। কাটোয়া থানায় বিক্ষোভ চলাকালীন মঙ্গলকোটের ভাটপাড়া গ্রামের জাহানারা খাতুন অভিযোগ করেন, “আমি স্বামী বিচ্ছিন্না। কোলের শিশু রয়েছে। ওই সংস্থার এজেন্টের কাজ করে কোনও মতে চালাচ্ছিলাম। গত দু’দিন ধরে লগ্নিকারীদের হুমকিতে গ্রামে থাকতে পারছি না।” কাটোয়া শহরের বিথীকা চক্রবর্তী, মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া চটির ফিরোজ শেখদেরও বক্তব্য, “লগ্নিকারীরা লক্ষ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন। তাঁরা এখন আমাদের চেপে ধরছেন। রাস্তায় বেরোতে পারছি না। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে।” ওই সংস্থার এজেন্ট, কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামের জন্মেজয় মুখোপাধ্যায় কাটোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ওই এজেন্ট অভিযোগ করেছেন, এলাকা থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা তুলে সংস্থার কর্তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশ প্রতারণা, টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ইত্যাদি ধারায় সংস্থার এমডি-র বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১৯৭৮ সালের ‘দ্য প্রাইজ চিটস্‌ অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন স্ক্যাম (ব্যানিং)’ ধারাও।”
কাটোয়া থানার সামনে এজেন্টরা। নিজস্ব চিত্র।
বর্ধমান জেলা জজ আদালতের সরকারি আইনজীবী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই আইনের ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, আর্থিক লেনদেন, এজেন্টদের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ, তার বিনিময়ে কমিশন দেওয়া ও আমানতকারীদের চড়া সুদের লোভ দেখানো ইত্যাদি নিষিদ্ধ। এই ধারা ভাঙলে, আইনের ৪ নম্বর ধারায় সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে এবং সংস্থার আধিকারিকদের সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমান হবে। এই আইনের ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, আমানত সংগ্রহকারী সংস্থার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার। যদি কোনও আর্থিক সংস্থা ‘কোম্পানি’ হিসেবে নিজেদের নথিভুক্ত করে, তবে ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংস্থার প্রত্যেক অধিকর্তাই আইনের আওতায় আসবেন।
পুলিশ জানায়, সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর, শিলিগুড়ির বাসিন্দা প্রসেনজিত্‌বাবুকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার শ্যামনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে পুলিশ তিনটি বস্তায় মোট ৭২ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে। এ দিন থানায় বিক্ষোভের পরে ওই এজেন্টরা মহকুমাশাসকের কাছে গিয়ে নিজেদের দাবি জানিয়ে চিঠি দেন। মহকুমাশাসক আর অর্জুন বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ওই এজেন্টদের দাবির কথা জানানো হবে।”
এ দিনই কাটোয়ার পুরসভা মোড়ে ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার রমরমা বন্ধের দাবিতে পথসভা করে কংগ্রেস। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভুঁইফোঁড় সংস্থার দৌরাত্ম্য শীঘ্র বন্ধ করতে না পারলে আরও বড় বিপদ ঘনিয়ে আসবে।” এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে লগ্নিকারীরা যাতে টাকা ফেরত পান, সেই ব্যবস্থা করার দাবিও জানান কংগ্রেস নেতারা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.