সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন ছড়াল দার্জিলিং পাহাড়েও। শুক্রবার দার্জিলিঙের জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান আমনতকারীরা। অবিলম্বে টাকা ফেরতের দাবিতে দীর্ঘক্ষণ অফিসের সামনে অবস্থান করেন এজেন্ট ও আমানতকারীদের অনেকেই।
এ দিন দুপুরে শিলিগুড়িতে আইন অমান্য করতে গিয়ে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা মহকুমাশাসকের অফিসে ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি (সমতল) তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের নেতৃত্বে আন্দোলন হয়। অভিযোগ, কংগ্রেস সমর্থকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মহকুমাশাসকের অফিসের প্রধান দরজার সামনে গিয়ে ভাঙচুর করেন। অফিসের দরজার একটি কাঁচ এবং কাঠের গেটের অংশ ভাঙা হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের ধমক দিয়ে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা তাঁদের দূরে সরে যেতে বাধ্য করান বলে অভিযোগ। ঘটনায় মহকুমাশাসকের দফতরের পক্ষ থেকে শিলিগুড়ি থানায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। |
শিলিগুড়ির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপ দাস বলেন, “আইন অমান্য আন্দোলনকে ঘিরে মহকুমাশাসকের অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” পুলিশ ওই ঘটনায় একটি মামলা রুজু করেছে। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এ রবীন্দ্রনাথ বলেন, “ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার দাবি করেন, মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে কোনও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ ভাবে আইন অমান্য আন্দোলন হয়েছে। তিনি বলেন, “সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্য সরকারের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর সম্পর্ক স্পষ্ট হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল। বিভিন্ন জায়গায় কংগ্রেস কর্মীদের উপরে হামলা ঘটনা ঘটেছে। এটা মানা হবে না।” কংগ্রেস সমর্থকরা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও সাংসদ কুণাল ঘোষের ছবিতে জুতোর মালা পরিয়ে বিক্ষোভ দেখান। ছবিগুলি ফেলে জুতো পেটা করেন তাঁরা। শঙ্করবাবু বলেন, “মানুষ ওই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তাই কিছু সমর্থক ওই ঘটনা ঘটান বলে শুনেছি।” |
এই ঘটনার প্রতিবাদে পাল্টা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৃণমূল। দলের দার্জিলিং জেলার মহাসচিব কৃষ্ণ পাল বলেন, “কংগ্রেস ১২৫ বছরের পুরনো দল হয়ে যে ঘটনা আজ করেছে তা কেউ মেনে নেবে না। সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা শিলিগুড়িতে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে। জাতীয় নেতার ছবি ঘিরে যে আচরণ করেছে মেনে নেওয়া হবে না। এর প্রতিবাদে আন্দোলন হবে।”
তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, কংগ্রেসের একাধিক নেতাকে সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধারদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। মালদহের এক কংগ্রেস সাংসদ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সারদা গোষ্ঠীর প্রশংসা করেছিলেন বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “সারদা গোষ্ঠীর ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী নিজে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পরে এমন ঘটনা মানুষ মেনে নেবে না।” তিনি জানান, আজ, শনিবার দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে ফিরবেন। তার পরেই পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়া হবে। আগামী ২৯ এপ্রিল শহরের উন্নয়ন নিয়ে গণ কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখানেও ওই ঘটনার প্রতিবাদ হবে। এ দিন কৃষ্ণবাবু দাবি করেন, বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে যাতে দলের কেউ না থাকে সে ব্যাপারে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |
এ দিন অসমের ধুবুরিতে আমানতকারী ও এজেন্টদের একাংশ সারদা গোষ্ঠীর একটি তিন তলা বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেন বলে অভিযোগ। শিলিগুড়িতে সারদার এজেন্টদের একাংশ নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারেটের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁরা এ দিন মিছিলও করেন।
|