|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
যদি কাগজে লেখো... |
আশিস পাঠক |
আমাদের অস্তিত্বটাই কাগুজে! না, বেচারা বাঘকে টানবেন না এখানে। সহজপাঠ বলেছে, বনে থাকে বাঘ। সে সহজ পাঠ আমরা জীবনে নিইনি। কাগজেই রেখেছি। বিশ্বভারতীর বইয়ের কাগজে, সরকারি পরিসংখ্যানের কাগজে এবং অবশ্যই খবরের কাগজে। আর সেই কাগজকেই নামভূমিকায় এনে সাফ বলে দিচ্ছেন ইয়ান স্যানসম, ‘আওয়ার ভেরি বিয়িং মাইট বি ডেসক্রাইবড অ্যাজ পেপারি’।
স্যানসম বলছেন, ‘এমন একটা মুহূর্ত ভাবুন কাগজ যখন আর নেই। তখন, কিছু কি হারিয়ে যাবে? উত্তর, সবই হারিয়ে যাবে।’ তবু যা হারিয়ে যায় তা আগলে বসে থাকার লোক স্যানসম নন। ক্রমে লুপ্ত হয়ে আসা এই কাগজ-যুগটাকে নিয়ে তাই তিনি লিখে ফেলেছেন একটা শোকগাথা, পেপার: অ্যান এলিজি (ফোর্থ এস্টেট/হার্পারকলিন্স, ইউকে)। গাথা ঠিকই, কিন্তু পদ্যে নয়, এ লেখা গদ্যে। এবং এ বই কাগজের ইতিহাস-ভূগোল নয়, উদ্যাপন। প্রি-পেপার আর ই-পেপার-এর যুগের মাঝে যে ‘এজ অব পেপার’, তারই উদ্যাপন। শুধু বই এর বেদনা-বিষয় নয়। সুপ্রভাত থেকে শুভরাত্রি, জন্ম থেকে মৃত্যু কাগজেই জড়ানো এই জীবনকে দ্বাদশ অধ্যায়ে দেখেছেন স্যানসম। সেই দৃষ্টিটা নিছক ঐতিহাসিকের মতো কাগুজে নয়, রীতিমতো রমণীয়।
গুগল ম্যাপসের এ যুগেও স্যানসম শুনিয়েছেন এডওয়ার্ড ফোর্বস স্মিলে থ্রি-র কথা, যে ভদ্রলোকের শ্রীঘরবাস হয়েছিল ২০০৬-এ। অপরাধ? ইয়েল, হার্ভার্ড আর ব্রিটিশ লাইব্রেরির সংগ্রহে ব্লেড চালিয়ে শত শত কাগুজে মানচিত্র আত্মসাৎ করা। লেখকের বক্তব্য, শুধু মানচিত্রের জন্যই এই মহাবিদ্যা অবলম্বন নয়, পুরনো কাগজের স্পর্শ আর গন্ধও এর পিছনে রয়েছে। ঠিক যেমন ‘ভিকটিমস টু দ্য বিবলিয়োম্যানিয়া!’ নামের ছোট লেখাটিতে তিনি লিখছেন, ‘অল উই নিড ইজ অ্যান ই-বুক রিডার দ্যাট অ্যাকচুয়ালি স্মেলস লাইক পেপার...’।
কাগজে ছাপা বইয়ের জন্য (লেখকের ভাষায় পি-বুক, শব্দবন্ধটি চমৎকার!) একটা মধুর বেদনা এ বইয়ের লেখকের আছে, কিন্তু শুধু সেটাই থাকলে এই ‘শোকগাথা’ বিলাপের স্তরে নেমে যেত। এ বই বরং সংলাপ, সাদা পৃষ্ঠার সঙ্গে। যে সাদা পৃষ্ঠায় শুধু কবিতা লেখা হয় না, লেখা হয় এই যুগটার স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ।
পুনশ্চ: এ বইয়ের কোনও ই-সংস্করণ নেই! |
|
|
|
|
|