দক্ষিণ কলকাতা
বিকল্পের সন্ধানে
অধরা সেন্টার
ছরের পর বছর শুধুই পরিকল্পনা। ঢাকুরিয়ায় কমিউনিটি সেন্টার আজও তৈরি হল না।
প্রথমে ঠিক হয়েছিল ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানে শহিদ তারকেশ্বর সেন স্মৃতি উদ্যানেই তৈরি হবে এলাকার কমিউনিটি সেন্টার। সবুজ ধ্বংসের আশঙ্কায় পুর-কর্তৃপক্ষ কমিউনিটি হল তৈরির অনুমতি দেননি। পরে, ওয়ার্ড অফিসের ওপরে একটি তল নির্মাণ করে সেখানেই কমিউনিটি হল তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু বাড়িটির ভিত মজবুত না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা থেকেও পিছিয়ে আসে পুরসভা। পরে বিকল্প জায়গায় সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও অর্থাভাবে তা থমকে রয়েছে বলে পুরসভা-সূত্রে খবর।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার বলেন, “বর্তমানে এই প্রকল্পের জন্য বিকল্প জায়গা চিহ্নিত করা হলেও পুরসভার অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বিধায়ক বা সাংসদ তহবিল থেকে অর্থ সংস্থানের কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। ওয়ার্ড অফিসের যে বাড়িটি রয়েছে তার উপর পুর আইন মেনেই একটি তল নির্মাণ করার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বাড়ির ভিত মজবুত না হওয়ায় পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা অনুমতি দেননি।”
মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “উদ্যান যাতে নষ্ট না হয় সেই কারণেই পুরসভা এখানে আর কোনও নির্মাণের অনুমতি দেয়নি। যে ফাঁকা জমিটি পড়ে রয়েছে সেটি শিশু উদ্যান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে নির্মাণ করলে উদ্যানটি নষ্ট হয়ে যাবে।”
ঢাকুরিয়া এলাকায় কমিউনিটি সেন্টারের চাহিদা অনেক দিনের। বাসিন্দারা বহু দিন ধরেই স্থানীয় কাউন্সিলর এবং পুর-কর্তৃপক্ষকে এ জন্য আবেদন করছিলেন। কিন্তু পুরসভা কোনও বিকল্প জায়গা পায়নি। এখানে পুরসভারই একটি জমিতে যেখানে এলাকার ওয়ার্ড অফিস রয়েছে তার ঠিক পাশেই ফাঁকা জমি পড়ে রয়েছে। সেখানে মাঝেমধ্যে এলাকার ছেলেরা খেলাধুলো করে। এখানেই কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর সিপিআইয়ের মধুছন্দা দেব বলেন, “পুর-কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ড অফিসের উপর একটি নতুন তল নির্মাণ করে কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করতে বলেছেন। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে তাতে বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর পরেই, নির্মাণের পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়। অন্যত্র সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য সাংসদ তহবিলে সংস্থান রয়েছে বলে জানি। এই অর্থ খরচ না করলে তা ফেরত চলে যাবে।”
মধুছন্দাদেবী আরও জানান, বর্তমানে পুরসভার যে ওয়ার্ড অফিস রয়েছে সেটি দোতলা। কিন্তু ওখানে চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ করা যেতে পারে। পুরসভা-সূত্রেই জানা গিয়েছে, ল্যান্ড ইউজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রোল প্ল্যান অনুযায়ী শহরের বড়, মাঝারি এবং ছোট পার্ক বা ফাঁকা জায়গায় একটি নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে সেখানেই এই নির্মাণ করা যেতে পারে।
নিয়মানুযায়ী, ১৫০০ বর্গমিটার পর্যন্ত জায়গার ক্ষেত্রে গোটা এলাকার ১০ শতাংশে এই নির্মাণ করা যাতে পারে। ১৫০০ থেকে ৭০০০ বর্গমিটার জায়গার ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ এবং ৭০০০-এর বেশি বর্গমিটার জায়গায় তিন শতাংশ এমন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া, পার্কে কোনও নির্মাণের উচ্চতা চার মিটারের বেশি হবে না বলেও এই নিয়মে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দফতরের এক আধিকারিক জানান, ওয়ার্ড অফিসে নতুন করে কোনও তলা নির্মাণ করা যাবে না। ঢাকুরিয়া বাজারে পুরসভার যে বাড়ি রয়েছে সেখানেই তিনতলা নির্মাণ করে কমিউনিটি সেন্টার হতে পারে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.