পূর্ব কলকাতা
অবহেলা সর্বত্র
বিপন্ন বনবিতান
পার্কের জলাশয়ে মাছ ভেসে উঠেছে!
দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সে খবর। পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ল জনতা। যে যেমন পারল মাছ নিয়ে গেল। সব মিলিয়ে হুলুস্থূল কাণ্ড। কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষীর পক্ষে এই জনতাকে আটকানো সম্ভব হয়নি। শেষে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনাস্থল সল্টলেকের বনবিতান।
এই ঘটনার পরে বনবিতানের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের একাংশের অভিযোগ, বনবিতানের নিরাপত্তা প্রায় নেই বললেই চলে। একাধিক বার তাঁরা বন দফতরকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। মাছ ভাসার ঘটনার পরেও বন দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা অভিযোগ জানান। কিন্তু তার পরেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
বন দফতর সূত্রের খবর, মাছ ভাসার ঘটনার পরে প্রাথমিক একটি রিপোর্ট সল্টলেক রেঞ্জ থেকে বন দফতরে পাঠানো হয়েছে। সল্টলেকের রেঞ্জ অফিসার তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মাছ মরেনি, ভেসে উঠেছিল। অনেকে জল থেকে তুলতে গিয়ে মাছ মেরে ফেলেছেন।’’ বন দফতরের অফিসারদের দাবি, জলাশয়ের নীচে একটি নিকাশি নালা রয়েছে। তাতে বড় ছিদ্র হয়ে ময়লা জল জলাশয়ে ঢুকেছে। পাশাপাশি, জলাশয়ে জলও কমে গিয়েছিল। ফলে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যায়। তাই মাছ ভেসে উঠেছিল।
প্রাতর্ভ্রমণকারীদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে বনবিতানের হাল খারাপ হয়েছে। বনবিতানের দু’টি প্রবেশপথে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। বাকি অংশের দেখভালের জন্য কেউ নেই। এর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রাতর্ভ্রমণকারী বিকাশেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘কয়েক বছরে এই অবস্থা হয়েছে। জলাশয়টি ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয়নি। সামগ্রিক রক্ষণাবেক্ষণও কমে গিয়েছে।’’ বনবিতানে প্রতি দিন অসংখ্য মানুষ আসেন। ফলে নিয়মিত সাফাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাফাইয়ের ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ।
বন দফতর সূত্রের খবর, প্রায় ৫২ একর জায়গা জুড়ে এই পার্কটি রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ একর জুড়ে জলাশয়। এই জলাশয়টি বৃষ্টির জলের উপরে নির্ভরশীল। গরমে জল কমে যায়। এ বছর জল বেশি কমেছে বলে বন দফতরের দাবি। ওই জলাশয়ে প্রায় আড়াই কুইন্টাল মাছ ছিল।
প্রশ্ন উঠেছে, জলের পরিমাণ অনুযায়ী মাছ রাখা হয়নি কেন? ঘটনার পরে মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁদের পরামর্শে বেশ কিছু মাছ জল থেকে তুলে ফেলা হয়। সল্টলেকের রেঞ্জ অফিসারের অবশ্য দাবি, মাছের পরিমাণে সমস্যা হয়নি। ময়লা জল ঢুকে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছিল।
বন দফতরের এক কর্তা জানান, বনবিতানে মোট কর্মীর সংখ্যা ৪১। এর মধ্যে নিরাপত্তারক্ষী মাত্র ৮ জন। তাঁরা ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালান। যদিও সল্টলেকের রেঞ্জ অফিসারের দাবি, কর্মী বেশি হলে ভাল হয়। কিন্তু চলতি অবস্থাতেও রক্ষণাবেক্ষণ, সাফাইয়ের কাজ নিয়মিত হয়। জলাশয়ের দিকেও খেয়াল রাখা হয় বলে তাঁর দাবি। বনমন্ত্রী হিতেন বর্মণ বলেন, ‘‘সামগ্রিক রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি। সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.