ঘরের ছেলে নিজের শহরে গিয়ে কাটলেন তাঁর চল্লিশতম জন্মদিনের ৪০ নম্বর কেক। “এটা চল্লিশ নম্বর কেক কাটলাম। এ বার বোধহয় আমাদের থামা উচিত,” শুক্রবার মুম্বইয়ের এক থিম পার্ক-এ তাঁর অগুণতি ভক্তের উদ্দেশ্যে বললেন সচিন তেন্ডুলকর। তার পর বর্ণময় ক্রিকেজীবন নিয়ে অনেক কথা শোনালেন...
জীবনে হিরো থাকার সুবিধা...
প্রত্যেক মানুষ কারও মতো হতে চায়। সে জন্য বড় হওয়ার সময় নিজের পছন্দের এক জন হিরো থাকা ভাল। আমারও কম বয়সে এ রকম হিরো ছিল। আমি ভিভ রিচার্ডস আর সুনীল গাওস্কর দুই হিরোকে মিশিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে চাইতাম। এই প্রজন্মেরও কোনও হিরো থাকা উচিত। যেখানে যখন সম্ভব সেই হিরোর সংস্পর্শে আসার চেষ্টা করা দরকার।
কিংবদন্তি ক্রিকেটার হয়েও এত বিনয়ী থাকার রহস্য...
লোকে আমাকে যে জন্য ভালবাসে আমি সারা জীবন সে রকমই থাকতে চাই। নিজেকে পালটানোর কোনও দরকার দেখি না। আমি আজ যা তার জন্য সব কৃতিত্ব আমার বাবা-মা, ভাই-দাদা-দিদিদের। বিয়ের পর আমার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সবার কৃতিত্ব। আমার পা সব সময় মাটিতে থাকার পিছনে এরা সবাই। পিছনে একটা সঠিক টিম থাকাটা জীবনে বিরাট পার্থক্য ঘটায়। আমি ভাগ্যবান, সারা জীবন সে রকম টিম পেয়েছি।
|
শুক্রবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই |
সফল ক্রিকেটার হয়ে ওঠার মন্ত্র...
সবার আগে খেলাটাকে পাগলের মতো ভালবাসতে হবে। তার পর গোটা খেলোয়াড়জীবন ধরে শুধু প্র্যাকটিস করে যেতে হবে। প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত। সেটা কত ঘণ্টা। ক’টা বল নক করলাম। কতগুে লা ডেলিভারি করলাম এ সব মনের ভেতর এক মুহূর্তের জন্য এলে চলবে না। প্র্যাকটিসের সময় নিজের রিস্টওয়াচের দিকে তাকাবেই না। আমি ক্রিকেটার হয়ে ওঠার সময় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সন্ধে সাড়ে সাতটা প্র্যাকটিস করতাম। প্রায় দিনই কোচ আমার কিট গুছিয়ে দিয়ে বলতেন, “ক্রিকেটের পক্ষে বড্ড বেশি অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। বাড়ি যাও।”
ক্রিকেট থেকে সব কিছু পেয়েও এখনও খেলাটার ব্যাপারে এতটা মারাত্মক আবেগী থাকার কারণ...
ক্রিকেট খেলাটাকে আমি নিজের পেশা মনে করি না। এটা আমার জীবন। নেশা। আর সেই জীবনটাকে চুটিয়ে উপভোগ করার জন্য আমি সর্বদা শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করি। সর্বদা ফোকাসড থাকি। ইদানীং বয়স বাড়ায় শরীর-মনকে তাজা করার জন্য মাঝেমধ্যে কিছু সময় খেলাটার বাইরে থাকি। কিন্তু তখনও ক্রিকেট নিয়ে আবেগ এতটুকু কমে না।
ভবিষ্যতে কোচিং করানোর পরিকল্পনা প্রসঙ্গে...
ব্যাপারটা দারুণ উত্তেজক আমার কাছে। তবে যত দিন খেলব উঠতি ক্রিকেটারদের সেমিনারে বড়জোর এসে নিজের অভিজ্ঞতা শোনাতে পারি। সক্রিয় কোচিং একমাত্র অবসর নেওয়ার পরেই সম্ভব। কোচিং করানোর জন্য প্রচুর সময়, অফুরন্ত দায়বদ্ধতা দরকার। এই মুহূর্তে সেটা আমার সমস্যা।
এত বছর ধরে সাফল্যের তুঙ্গে থেকে খেলে চলার রহস্য...
ক্রিকেটের প্রতি চূড়ান্ত আবেগ। সর্বদা শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন। পরিবারের সাহায্য। প্র্যাকটিসে এক দিনের জন্যও ফাঁকি না দেওয়া। খেলাটাকে পেশা না ভেবে নিজের জীবন ভাবা। জীবনকে কখনও কারও একঘেয়ে লাগতে পারে না।
জীবনে সবচেয়ে মহার্ঘ্য সম্পদ...
আমার পরিবার। যার কোনও বিকল্প নেই। এর বাইরে আমি যেহেতু গান শুনতে প্রচণ্ড ভালবাসি, সে জন্য প্রচুর বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীর সান্নিধ্য পেয়েছি। ওঁরা সবাই আমাকে কিছু না কিছু উপহার দিয়েছেন। সেগুলো আমার কাছে অমূল্য। লতাদিদি (মঙ্গেশকর) একটা দারুণ উপহার পাঠাবেন বলেছেন। আশাজি (ভোঁসলে) ওঁর স্পেশ্যাল কিছু সামগ্রী আমাকে দিয়েছেন। সেগুলো মিউজিক রুমে সাজিয়ে রেখেছি। ওয়ের্স্টান মিউজিকে ‘ডায়ার স্ট্রেটস’ বিখ্যাত মার্ক নপফ্লার আমাকে ওঁর একটা গিটার দিয়েছেন। ‘ইউ টু’ ব্যান্ডের পুরো টিমের সই করা আর একটা গিটারও আমি উপহার পেয়েছি। এগুলো আমার কাছে দারুণ দামি। কারণ শুধু ক্রিকেট নয়, আমি গানপাগলও। |