হাই-ফাইভের জন্য হাতটা উঠেই আছে। কখনও নাতাশা গম্ভীর, কখনও জয় মেটা, যে পারছেন এক বার করে হাতে হাত মিলিয়ে যাচ্ছেন। কর্পোরেট বক্স থেকে মাঠে ঢুকতে কতক্ষণ লাগল? বড়জোর দু’তিন মিনিট। গ্যালারির দিকে দু’হাত তুলে ‘থ্যাঙ্কস’, ঠোঁটে সেই হাসি যা আজও আট থেকে আশির বুকে কাঁপন ধরাতে পারে, দেখলে কে বলবে ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’-এর ডেবিউ ইনিংসের তাঁর আজ পঁচিশ বছর হল? জেতার পর টিমকে গিয়ে বলেও ফেললেন, “থ্যাঙ্কস। মোহালিতে গিয়ে জিততে পারিনি। কলকাতায় তোমরা আমাকে সেটা ফিরিয়ে দিলে।”
বছর আটেকের কিশোরীর হাত ধরে যে লাল টি-শার্ট পরা চেহারাটা আবার এতক্ষণ ইডেন দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল, প্রাইজ সেরেমনির সময় তাঁকে কোথাও দেখা গেল না। ম্যাচ শেষ হতে না হতেই তো ইডেন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। মুখচোখে একরাশ বিষণ্ণতা। গালে টোল ফেলা হাসিটাও উধাও। কানে বাজবে বিরতির সময় তাঁর প্রার্থনা, “ব্যাটিংটা তো ভালই হল। শুধু বোলিংটা ঠিকঠাক হলেই...”। |
প্রথম জন, জুহি চাওলা। নাইট মালকিন।
দ্বিতীয় জন, প্রীতি জিন্টা। কিংস মালকিন।
পঞ্জাবে পারেননি। কিন্তু কলকাতায় ‘প্রীতি’ ম্যাচ জিতে গেলেন জুহি। জিতলেন বটে, কিন্তু শুক্রবারের জয় নাইট শিবিরের কাছে কতটা স্বস্তির? প্লে অফে যেতে গেলে আরও আটটা ম্যাচের মধ্যে সাতটায় জিততেই হবে। জুহির হাসি তাই কত দীর্ঘমেয়াদী, সন্দেহ আছে।
আর সেই কারণেই বোধহয় শুক্রবারের জুহির উচ্ছ্বাস কম, সংযম বেশি। এ বারের আইপিএলে কিছুটা কি প্রচারবিমুখও? আগের বছরগুলোর মতো ইডেনের প্রতিটা ম্যাচে আসছেন না। ম্যাচের শেষে প্রাইজ দিতে নামছেন না। এ দিনও তো গোটা ম্যাচে এক বারও টিভি ক্যামেরা ধরল না তাঁকে। ম্যাচের পর প্রযোজকদের শত অনুরোধ-উপরোধের পর ছোট্ট সাক্ষাৎকার দিতে এসেও তাঁর মুখে কতটুকুই বা কেকেআর? শুধু বলে গেলেন, “এই জয়টা আমাদের ভীষণ দরকার ছিল। মানসিক ভাবে এই জয়টা আমাদের ভাল জায়গায় এনে দেবে। তবে কাজ এখনও অনেক বাকি।”
প্রযোজক এক বার বলার চেষ্টা করলেন, জুহি চাওলা মাঠে এলেই কেকেআর জেতে। আপনি তা হলে গম্ভীরদের গুড লাক চার্ম? জুহি তাতে গললে তো? উল্টে বলে ফেললেন, “গুড লাক চার্ম যদি নিজেকে বলতে পারতাম তা হলে তো কথাই ছিল না!”
টিম কেকেআর আবার মনে করছে, যতই আরও ৮ ম্যাচে ৭ জয় দরকার হোক, কিংস ইলেভেন ম্যাচের ‘মোমেন্টাম’-টা থাকলে প্লে অফের স্বপ্নও বেঁচে থাকবে। মনবিন্দর বিসলা যেমন। নিজে অফ ফর্মের অতল গহ্বর থেকে শুক্রবার রাতে আবার জীবনে ফিরলেন। টিমকেও ফেরালেন কিছুটা। বিসলা বলছিলেন, “আমাদের এখন থেকে শুধু বিশ্বাস করতে হবে যে, প্লে অফ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বরং যা খেললাম, সেটা চললে এখনও অনেক কিছু সম্ভব।”
সত্যি সম্ভব তো? আগামী রবিবার চিপকে চেন্নাই, তার পর একে একে সহবাগের দিল্লি, সচিনের মুম্বই, শেষ পাতে আবার গেইল। আর মনে রাখা ভাল, সবাই কিংস ইলেভেন নয়। এবং আগামী প্রতিপক্ষরা যে ভাবে পেপসি আইপিএলে রোজ-রোজ ক্রুদ্ধ গর্জন শোনাচ্ছেন, তাতে নাইট-ভক্তদের ‘ডর’-ই লাগবে!
|