ছোট একটা লেভেল ক্রসিং। কিন্তু তাকে ঘিরে অনেক বড় সমস্যা।
আন্দুলের মধ্য ঝোড়হাটে ১১ নম্বর লেভেল ক্রসিং নিয়ে অসুবিধার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দিনের পর দিন তা আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। ব্যস্ত সময়ে আরও তীব্র হচ্ছে যানজট। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই লেভেল ক্রসিংয়ে যানজট ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়। পাশেই বসে একটি বাজার। জনবহুল এলাকা। ব্যস্ত সময়ে স্কুলগাড়ি তো আটকে থাকেই, এমনকী আটকে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্সও। লেভেল ক্রসিংয়ের একটু আগে রেললাইনের নীচ দিয়ে একটি রাস্তা আছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে সেই রাস্তা দিয়ে একটি ট্রেকার যেতে গিয়ে রেলের গার্ডওয়ালে আটকে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রেলের গার্ডওয়ালটি। তখন থেকেই রেলের তরফে চারটি পোল বসিয়ে বড় গাড়ি যাওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ছোট-বড় সব গাড়িকেই অপেক্ষা করতে হয় লেভেল ক্রসিং গেট খোলার জন্য। অন্য দিকে, যেহেতু দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের ক্ষেত্রে ট্রেনের চাপ অনেক বেশি থাকে, একবার গেট বন্ধ হলে অপেক্ষা অন্তত আধ ঘণ্টা। |
অভিযোগ, অনেক সময়ে ট্রেন না থাকলেও লেভেল ক্রসিংয়ের গেট খুলতে দেরি করেন রেলের গার্ড। স্থানীয় বাসিন্দা রাজর্ষি দত্ত বলেন, “অফিসের ব্যস্ত সময়ে আধ ঘণ্টা ধরে লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে থাকতে কার ভাল লাগে বলুন? পাশে নীচের রাস্তাটাও বন্ধ করে দিয়েছে রেল। অনেক ক্ষণ ট্রেন না থাকলেও কখনও কখনও রেলের গার্ড গেটই খুলতে রাজি হন না।” এ বিষয়ে রেলের গার্ড ভাস্কর রাওয়ের বক্তব্য, “ট্রেনের চাপ তো সত্যিই বেশি থাকে। স্টেশন ম্যানেজারের কাছ থেকে সিগন্যাল না পেলে গেট খোলা তো আইনবিরুদ্ধ।”
আন্দুলের স্টেশন ম্যানেজার দিলীপকুমার দাস বলেন, “ট্রেনের চাপ থাকলে লেভেল ক্রসিংয়ের গেট খোলা রাখার অনুমতি তো দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা নিজেরাও অসুবিধা প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের তরফেও চেষ্টা থাকে যত শীঘ্র সম্ভব গেট খুলে দেওয়ার। সাধারণ মানুষের সহিষ্ণুতা ও সহযোগিতা আশা করি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্তা বলেন, “স্থানীয় মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী ওই লেভেল ক্রসিংয়ে উড়ালপুল বা আন্ডারপাসের ভাবনাচিন্তা করা যেতেই পারে। কাছাকাছি অন্যান্য স্টেশনেও উড়ালপুল তৈরির ভাবনাচিন্তা চলছে। কিন্তু ওই লেভেল ক্রসিংয়ের ক্ষেত্রে এ রকম কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা, তা রেল এবং রাজ্য সরকারের আলোচনাসাপেক্ষ বিষয়।” দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদারের কথায়, “কোনও লেভেল ক্রসিংয়ে উড়ালপুলের প্রয়োজন আছে কিনা, তার অনুরোধ পাঠায় রাজ্য সরকার। রেল প্রতি তিন বছর নিজে থেকেই লেভেল ক্রসিংগুলোয় সমীক্ষা চালায়। এই পদ্ধতি হল ‘ট্রেন ভেহিকল ইউনিট’ (টিবিইউ)। এতে নির্দিষ্ট সময়ে কতগুলি গাড়ি যায় তা দেখে একটি হিসেব তৈরি হয়। এই টিবিইউ ইউনিট যদি ১ লক্ষের উপরে হয়, তবেই সেখানে উড়ালপুল বা আন্ডারপাসের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। গতবারের এই লেভেল ক্রসিংয়ের টিবিইউ ইউনিট ছিল ৫০০০০। এ বছর মে মাসে আবার নতুন সমীক্ষা চালানো হবে।” |