মনোরঞ্জন ২...
করিনার সাংবাদিকতা
ন্ধ্যার অন্ধকারে ভোপালের বেনজির ময়দানে গা ছমছমে পরিবেশ। শ্যুটিং শেষে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িঘর-দোকানপাট। সব শুনশান। জনমানবহীন।
আপনার নির্মীয়মাণ ছবি ‘সত্যাগ্রহ’ কি অণ্ণা হজারের গাঁধীগিরির ছায়া অবলম্বনে? প্রশ্নটা শুনেই পরিচালক প্রকাশ ঝা দৃশ্যতই বিরক্ত । “কেন যে মিডিয়া এ সব রটায়!” দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজকের প্রজন্মের প্রতিবাদ নিয়েই তৈরি হচ্ছে ‘সত্যাগ্রহ’, প্রত্যয়ের সঙ্গে জানালেন প্রকাশজি। “মূল্যবোধ থেকেই শুরু হয় সংঘর্ষ।”
ভোপালের গরমকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন করিনা কপূর। নায়িকা করিনাকে দেখার জন্য সব ভিড় জমা হয়েছে শ্যুটিং স্পটে।
এই ছবিতে করিনা কপূর এক নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক। কিন্তু তিনি কোথায়? প্রাসাদের প্রবেশপথেই দোতলা সমান দু’টো মেকআপ-ভ্যান দাঁড়িয়ে। ভোপালের গরম থেকে মুখ বাঁচাতে তিনি তখন মেকআপ ভ্যানের ‘ঠান্ডি ঠান্ডি কুল কুল’ আশ্রয়ে।
তাঁর দর্শন মিলল সারা প্রাসাদে আলো জ্বলে ওঠার পরে। দুধসাদা লিনেনের পাতলা জামা আর নীলচে জিন্স পরা করিনা মাটিতে পা দেওয়া মাত্র প্রচারমাধ্যমের সব নজর কেড়ে নিলেন। মাখনের মতো মুখ থেকে চুঁইয়ে পড়ছে গ্ল্যামার। গায়ের রঙের সঙ্গে মানানসই চুলের রং। অপরূপা করিনাকে দেখেই ফের তপ্ত হয়ে গেল রাতের ভোপাল।
গানের দৃশ্যের শ্যুটিং করতে সটান চলে গেলেন ‘তাজমহল’ প্রাসাদের বাগানে ‘খণ্ডহর’ এক রংমহলে। রংমহলের ছাদের উপরে সাদা রঙের আলোয় আলোকিত দৈত্যাকার এক ফানুস। মায়াবি আলোয় দিনের বেলা দেখা সেই পুরনো প্রাসাদকে তখন আর চেনার উপায় নেই।
শ্যুটিংয়ে ডাক পড়ার আগে সাক্ষাত্‌কার দেওয়ার সময় করিনার মেজাজ অত্যন্ত ফুরফুরে। অনেক ক্ষণ ঠান্ডায় থাকার ফল আর কী!
“প্রায় সব বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছি। বাকি ছিলেন প্রকাশজি। ইচ্ছা ছিল অনেক দিন ধরেই। চেষ্টাও করছিলাম। লেকিন মওকাই নহি মিলা।”
এত দিনে সে সুযোগ পাওয়ায় তিনি খুশি। “স্ক্রিপ্টও টপিক্যাল। ‘ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড করাপ্‌শন’। এই ছবিতে আমি এক জন রাজনৈতিক সাংবাদিক।”
জীবনে এই প্রথম কোনও ছবিতে সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করছেন করিনা। কেমন লাগছে এই চরিত্রে? করিনার একটাই আফসোস যে, এই ছবিতে চিত্রতারকার সাক্ষাত্‌কার নেওয়ার কোনও দৃশ্য নেই। থাকলে কী হত?
“থাকলে আমি তো তাঁকে ‘বিয়ে করছেন কবে’ এই প্রশ্নটি করতামই।” প্রচারমাধ্যম ফেটে পড়ল হাসিতে। “সারা জীবন আমাকে কত বার যে এই প্রশ্নটি শুনতে হয়েছে”, বলার সময় করিনার মুখে এক চিলতে দুষ্টুমিষ্টি হাসি। আইপিএল চলছে। টি-টোয়েন্টির ঢঙে প্রথম স্ট্রোকেই সীমানার বাইরে বল পাঠিয়ে দিয়েছেন করিনা।“সাক্ষাত্‌কার নিতে এলেই সারা জীবন আপনারা আমাকে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। আর তার পরেই দ্বিতীয় প্রশ্নটি হত, বিয়ের পরে ক’টি বালবাচ্চা হবে? কোনও সাংবাদিক আমাকে জীবনেও গণতন্ত্র নিয়ে কোনও প্রশ্ন করেননি। আর নতুন ভূমিকায় আমাকে কিনা ‘ডেমোক্র্যাসি’ নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে,” করিনার মুখেচোখে সিরিয়াস ভাব।
কিন্তু নতুন ভূমিকায় নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য তিনি কী করছেন? কিছু টিপস দিয়েছেন প্রকাশ ঝা। ‘সত্যাগ্রহ’ ছবিতে এক জেলায় সর্বস্তরে কী ভাবে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে, সেই সব খবরাখবর দেওয়ার জন্য সাংবাদিক হিসেবে করিনাকে চার দিকে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে।
খবর সংগ্রহ করার জন্য আমরা কত কষ্ট করি, সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে সেটা এ বার বুঝতে পারছেন কি? হেসে সম্মতি প্রকাশ করে করিনা বললেন, “সে তো বটেই। কিন্তু মনে রাখবেন, এই সাংবাদিক ফিল্ম জার্নালিস্ট নয়। সি ইজ আ সিরিয়াস জার্নালিস্ট।”
বিনোদনের সাংবাদিকদের নিয়ে হাসিমশকরা করলেও জেন-ওয়াই মহিলা সাংবাদিকদের সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি কিন্তু দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। “পোশাকপরিচ্ছদ, দর্শনে, আত্মবিশ্বাসে, কথাবার্তায় আজকের নিউজ চ্যানেলের মহিলা সাংবাদিকেরা সিনেমার নায়িকাদের মতোই স্মার্ট। আমাদের থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই তাঁরা।”
নিজের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত করিনা। “এই ছবিতে আমি এক জন আধুনিক মেয়ে। তাই প্রকাশজিকে বলেছিলাম, ‘ডোন্ট মেক মি আ বহেনজি’। খাদি-কুর্তি পরতে পারব না।” পরিচালকের কাছে তাঁর দাবি ছিল, তাঁকে আধুনিক সমসাময়িক সাংবাদিকের মতো ‘লুক’ দিতে হবে।
তেমন ‘লুক’ কি পেয়েছেন? “আমি খুশি।” বলার পরেই যোগ করেন, “পরে যে-কোনও একটি ছবিতে ‘ফিল্ম জার্নালিস্ট’-এর চরিত্রে অভিনয় আমাকে করতেই হবে।” করিনাকে এক সাংবাদিক মনে করিয়ে দিলেন, ‘বিয়ের পরে কবে অভিনয় ছাড়বেন’ এই প্রশ্নটিও আপনাকে অনেক বার আমরা অতীতে করেছি। তার কী উত্তর? করিনার স্পষ্ট জবাব, “কভি নহি। সারা জীবন অভিনয় করে যাব।”
এই ছবির সাংবাদিক হিসেবে আপনি অমিতাভ বচ্চনকে কী কী প্রশ্ন করলেন? ‘‘ছবিতে প্রচারমাধ্যম তাঁর পক্ষে। জিজ্ঞেস করেছি অনেক প্রশ্নই। অনেক নাটক আছে এই ছবিতে। অনেক রকমের চরিত্র। এখনই সব বলে দিলে ছবি দেখতে কি আর আসবেন? ‘সত্যাগ্রহ’ তো আপনাকে দেখতে হবে।” মাথা নাড়িয়ে আদুরে গলায় সাংবাদিকদের সামলান করিনা।
জীবনে তো অনেক সাংবাদিককে দেখলেন। নিজে যখন সাংবাদিকের চরিত্রে, তখন কাকে আদর্শ করে আপনি নিজেকে তৈরি করেছেন?
বরখা দত্তের স্পিরিট আর ক্রিশ্চিয়ানা অ্যামানপো’র আত্মবিশ্বাসের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন সাংবাদিক করিনা।
এই দু’জন সম্পর্কে তাঁর ধারণা, “পিছনে বোমা বিস্ফোরণ হলেও মনে হয়, এই দু’জন তাঁদের কাজটা করে যাবেন।” তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, “দ্যাট ইজ কলড ক্যারেক্টার।”
শোনা যায়, প্রকাশজি শ্যুটিংয়ে খুব কড়াকড়ি করেন। আপনার অভিজ্ঞতা কী? “ও তো লোক দেখানোর জন্য করেন। জানেন কি, দু’হাজার স্থানীয় মানুষজন জুনিয়র শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন এই ছবিতে?” এত মানুষকে ঠিকঠাক ভাবে সামলে কী ভাবে কাজ করলেন প্রকাশজি, করিনার কাছে তা এখনও ধাঁধার মতো।
পুরো ভোপাল শহর চলে গিয়েছিল তাঁর দখলে। করিনা মনে করেন, অন্য কোনও শহরে এ ভাবে দিনের পর দিন শ্যুটিং করার কথা কল্পনাও করা যায় না। “এই শহরে প্রকাশজি যে-কোনও মন্ত্রীর মতোই প্রভাবশালী। সবাই তাঁকে খাতির করেন।”
“ভোপাল ইজ নাইস, ভোপাল ইজ লাভলি”, পারলে শতমুখে শহরের গুণকীর্তন করেন প্রকাশ ঝা।
করিনারও প্রিয় শহর ভোপাল। পটৌডি ‘খানদান’ এখানে খুব প্রসিদ্ধ। “এই শহর থেকেই শুরু হয়েছিল ওঁদের যাত্রা। আমাদের খুব শ্রদ্ধা করেন স্থানীয় মানুষজন। সেই শ্রদ্ধা আরও যেন বেড়ে গিয়েছে বিয়ের পরে।”
আসলে বিয়ের পরে পুরো জীবনটাই পাল্টে গিয়েছে করিনার। “অভি সব কুছ ঔর অচ্ছা লগতে হ্যায়”, প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন তিনি। এখানকার মানুষের রক্তেই সংস্কৃতি। মানুষজনের ভালবাসা দেখার মতো। প্রতিশ্রুতি দিলে রাখবেই। মনে হচ্ছিল শ্যুটিং করছি যেন নিজের ঘরেই।”
আর ‘সাস’ হিসেবে কেমন শর্মিলাদি?
“ব্রিলিয়ান্ট! সৌষ্ঠবে, মাধুর্যে, মর্যাদায় তাঁর তুলনা নেই। শুধু আমাদের নয়, সারা ভারতে তিনি আদরণীয়া।”
এর মধ্যেই ডাক পড়ল শ্যুটিংয়ে। তিনি উঠে গেলেন।
ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে ‘রসকে ভরে তোরে দো নয়না’। করিনার মাথা তখন অজয়ের কাঁধে। অজয়ের অঙ্গেও সাদা কুর্তা আর একই রঙের জিন্স। গানের রসে মজে অজয় প্রেমিকাকে নিয়ে চলে যান মোটা থামের আড়ালে।
চুম্বন দৃশ্যে একগাদা মানুষের সামনেও সাংবাদিক করিনা ভীষণ সাবলীল!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.