|
|
|
|
অভিযান অসমে |
ধৃত মাওবাদী নেতা মহেশজি ও সিরাজ
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অক্লান্ত রাভা ওরফে মহেশজি ও ঝাড়খণ্ডের ‘মেডিক্যাল ইউনিট’-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান তথা অস্ত্র-প্রশিক্ষক সিরাজ ওরফে বিজয় রাভাকে গ্রেফতার করল গুয়াহাটি পুলিশ। অসমে শাখা বিস্তারের পরে ওই দুই মাও নেতা মেঘালয়ে মাওবাদ প্রসারের কাজ করছিলেন। আজ শিলং যাওয়ার পথে, জোড়াবাটে একটি গাড়ি থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় একটি পিস্তল ও প্রচুর গুলি। ধৃত মহেশজি জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সাল থেকেই তিনি নামনি অসমে মাও আদর্শ প্রচার করছেন।
অসমের ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়াকে গত বছরই মাওবাদী অধ্যূষিত বলে মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। গোলাঘাট জেলায় মাওবাদীরা রীতিমতো পোস্টার লাগিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আলফা ও মণিপুরি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে মাওবাদীদের যোগাযোগের ঘটনাও প্রমাণিত। আজ মাওবাদীদের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করার পরে পুলিশের দাবি, মেঘালয়ে মাওবাদীদের শাখা ছড়িয়ে গিয়েছে।
আজ অসম পুলিশের আইজি এল আর বিষ্ণোই জানান, খাসি উপজাতিদের মধ্যে মাওবাদী সংগঠনের শাখা প্রসারের কাজ চলছিল জোরকদমে। ছ’টি বৈঠকের পরে, এদিন সপ্তম বৈঠকে যাওয়ার পথে গ্রেফতার হন দুই মাও নেতা। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহেশজি বাংলা, অসমীয়া, খাসি, গারো, বড়ো, হিন্দি, রাভা ভাষায় নাগাড়ে কথা বলতে পারেন। ফলে উত্তর-পূর্ব, বিশেষ করে মেঘালয়ের জঙ্গি দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং গারো ও খাসি এলাকায় মাও আদর্শ প্রচারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে ভার দিয়েছিল। বিষ্ণোই জানান, ১৯৯০-এর দশকে রাভাদের অধিকার আদায়ে সংগঠন গড়েছিলেন অক্লান্ত। ১৯৯৬ সালে গুয়াহাটি স্টেশনে ত্রিপুরার কোনও এক মাও নেতার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। ওই নেতার ‘অতি বাম’ আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অক্লান্ত তাঁকে গোয়ালপাড়ার বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে ওই মাও নেতা দেড় মাস প্রচার চালান। এরপর তাঁর সঙ্গেই ঝাড়খণ্ড যান অক্লান্ত। গুমলার জেলেঙ্গায় চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ। নতুন নামও হয়। বর্তমানে তিনি নামনি অসম থেকে মাও কেন্দ্রীয় কমিটির একমাত্র সদস্য। পুলিশ জানায়, আর এক মাও নেতা আদিত্য বরার একটি চিঠি মহেশজির কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে। সেখানে আদিত্য, মহেশজিকে উজানি ও নামনিতে সংগঠন মজবুত করার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। মহেশজি জানান, তিনি বছরে দু’বার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে ঝাড়খণ্ড যান।
অন্য দিকে, সাত বছর ধরে মাও সংগঠনে থাকা, কামরূপ বকোর বাতকুচি গ্রামের বাসিন্দা বিজয়, ঝাড়খণ্ডে মাও জঙ্গিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেন। চিকিত্সার ব্যবস্থাও করেন। সব ধরণের মারণাস্ত্র চালাতে দক্ষ বিজয়ের কাছ থেকে এদিন ২৪০ রাউন্ড কার্তুজ মিলেছে। মহেশজির কাছে ছিল স্পেনে নির্মিত একটি পিস্তল ও ছ’টি গুলি।
বিষ্ণোই জানান, ২০১০ থেকে ২০১২ সাল অবধি ডিব্রুগড়ে পুলিশের কাছ থেকে চারটি অস্ত্র লুঠ, ডিব্রু-শইখোয়া বন শিবিরে হানা দিয়ে বনরক্ষীদের পাঁচটি রাইফেল লুঠের ঘটনা এবং অম্বিকাপুর, চিলাপথার, সদিয়ায় মাও-পুলিশ গুলির লড়াই থেকে প্রমাণ হয়েছে মাওবাদীদের হাতে এখন প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে। এর মধ্যে অনেকগুলিই নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে লুঠ করা। বাকিগুলি নাগাল্যান্ড থেকে পাচার হয়ে আসা।
ইতিমধ্যে, মহেশজি অসমে মাওবাদীদের একটি কোর গ্রুপ, একটি প্রোপাগান্ডা সেল, একটি পার্টি সেল ও একটি ভলান্টিয়র্স সেল গঠন করে ফেলেছে। পুলিশের দাবি, মহেশজি ও বিজয়কে গ্রেফতার করায় রাজ্যে মাওবাদীরা বড় ধাক্কা খেল। ধৃতদের কাছ থেকে উত্তর-পূর্বের অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নিয়েও বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে। |
|
|
|
|
|