আয় নেই, শুধু বাড়ছে খরচের খতিয়ান। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভর্তুকিও। যার ফলে ধীরে ধীরে কলকাতার মেট্রো রেল অলাভজনক সংস্থা হওয়ার দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করেন রেলকর্তাদের একাংশ। মেট্রো সূত্রের খবর, বর্তমানে ১০০ টাকা আয় করতে মেট্রোর খরচ হচ্ছে ৩০০ টাকা। এক রেলকর্তার কথায়, “মেট্রোর এখন আমদানি আট আনি, খরচা রুপাইয়া।”
কেন এই হাল? মেট্রো সূত্রের খবর, গত বারো বছর মেট্রোর ভাড়া বাড়েনি। কিন্ত একের পর এক খাতে খরচ বেড়েই চলেছে। কখনও এসি রেক আনতে গিয়ে, কখনও বা নতুন সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যেই আরও দু’টি নতুন রেক আসার কথা। রয়েছে ঝাঁ-চকচকে স্টেশন, আধুনিক প্রযুক্তির গেট বসানোর খরচও। প্রতি মাসে রক্ষণাবেক্ষণেও প্রচুর টাকা খরচ করতে হয় মেট্রোকে। যার ফলে খরচ বাড়ছে। তা হলে এত দিন সমস্যা হয়নি কেন?
এক রেলকর্তার ব্যাখ্যা, প্রথম দিকে আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই খরচের হিসেব করা হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে আয় না বাড়লেও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়েছে। বেড়েছে মেট্রোর পরিধিও। ফলে সব নিয়ে একটা গোলমেলে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খালি হওয়ার জোগাড় হয়েছে মেট্রোর ভাঁড়ার। ওই রেলকর্তার কথায়, “এমনটা চলতে থাকলে অলাভজনক সংস্থার তালিকায় মেট্রোর নাম উঠতে বেশি দিন লাগবে না।” রেলকর্তাদের একটি বড় অংশ বলছেন, মেট্রোর ভাড়া না বাড়ালে এই পরিস্থিতি কোনও মতেই সামাল দেওয়া যাবে না। |
ভাড়া বাড়ানোর যৌক্তিকতা স্বীকার করে নিয়েছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, “আমিও চাই মেট্রোর ভাড়া বাড়ুক। কিন্তু সঙ্গে উন্নত পরিষেবাও দিতে হবে। তা হলে যাত্রীরাও ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে আপত্তি করবেন না।” রেলমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলেও অধীরবাবু জানান।
তা হলে টিকিটের দাম বাড়ানো হচ্ছে না কেন? রেলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ভাড়া না বাড়ানোর প্রধান কারণ রাজনীতিই। এত দিন ভোট-ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই ভাড়া বাড়াতে চায়নি রেল মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা তৃণমূল। এ বার কংগ্রেসও সেই পথেই হাঁটছে। ওই সূত্রের ব্যাখ্যা, এ রাজ্যে সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে ভাড়া বাড়ালে তার প্রভাব জনমানসে পড়তে পারে বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা।
প্রশ্ন উঠেছে, শহুরে মেট্রোর ভাড়া বাড়ালে গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কে কী প্রভাব পড়বে?
রেল সূত্রের ব্যাখ্যা, এখন মেট্রোর পরিধি বেড়ে যাওয়ায় বহু গ্রামীণ বাসিন্দাও শহরে আসতে মেট্রোয় চাপেন। তা ছাড়া, কর্মসূত্রে রোজ কলকাতায় আসা লোকের একটা বড় অংশ গ্রামের বাসিন্দা। ভাড়া বাড়ালে সেই অংশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া আঁচ করেই সাবধানী হতে চাইছেন কংগ্রেস নেতারা।
তা হলে কি অচিরেই মেট্রোর কপালে দুর্ভোগ ঘনিয়ে আসছে?
রেলবোর্ডের কর্তারা বলছেন, মেট্রো ভারতীয় রেলের একটি অংশ। আলাদা সংস্থা নয়। ফলে লাভ কমলে অন্য জোনের লভ্যাংশ থেকে তা মেটানো হবে। যদিও রেলেরই একটি অংশ বলছে, এই ভর্তুকির সংস্কৃতি না বদলালে রেলের বাকি জোনগুলিরও একই হাল হবে।
এই যুক্তি অবশ্য মেনে নিয়েছেন রেলবোর্ডের কর্তারা। তাঁদের কথায়, “রেলের ভাড়া বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। সেটা খতিয়ে দেখা চলছে। যত দিন না তা হচ্ছে, তত দিন মেট্রোকে ভর্তুকি দিতেই হবে।”
|
সিগন্যাল বিগড়ে গিয়ে ফের দুর্ভোগ পাতালে |
সিগন্যাল বিভ্রাটের জেরে ফের ভোগাল মেট্রো। শুক্রবার সন্ধ্যায় অফিসের ব্যস্ত সময়ে পরিষেবা বন্ধ না-হলেও প্রতিটি স্টেশনে প্রায় দশ-পনেরো মিনিট করে দাঁড়িয়ে থেকেছে মেট্রো। আর তাতেই বিপত্তি। কয়েকটি ট্রেন এই ভাবে থামতে থামতে যাওয়ায় পিছনের ট্রেনগুলিও দেরি করেছে। ততক্ষণে ভিড়ে ভরে গিয়েছে প্রতিটি প্ল্যাটফর্ম। ফলে দ্বিগুণ ভোগান্তি যাত্রীদের। কিছু দিন আগেই কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নতুন প্রযুক্তির সিগন্যাল ব্যবস্থা লাগানো হয়েছে। তার পরে আবার দুর্ঘটনা রুখতে আরও এক দফা উন্নত প্রযুক্তির রেডিও সিগন্যাল ব্যবস্থাও সম্প্রতি লাগানো হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও একসঙ্গে টানা এক মাসও সচল রাখা যাচ্ছে না মেট্রোকে। যখন-তখন সিগন্যাল কাজ না করায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মেট্রো। মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদন ও যতীন দাস পার্ক স্টেশনে একসঙ্গে দু’টি সিগন্যাল খারাপ হয়ে যায়। তার জেরেই শুরু হয় গোলমাল। খবর পেয়ে মেট্রোকর্মীরা মেরামতির কাজ শুরু করেন। ততক্ষণে ‘পেপার সিগন্যাল’ (হাতে হাতে) দিয়ে ট্রেন চালাতে গিয়ে দেরিতে চলতে শুরু করে মেট্রো। তবে এত টাকা খরচ করে নতুন প্রযুক্তি এনেও কেন এই অবস্থা হচ্ছে, সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেননি। |