৩০ লক্ষের সাজ-প্রকল্প মার্বেল প্যালেসে
তিহ্যপূর্ণ মার্বেল প্যালেসে শুরু হয়েছে বড় মাপের সংস্কার। সেই সঙ্গে দর্শকদের আগ্রহ বাড়াতে এ বার এখানকার দ্রষ্টব্যগুলিতে লাগানো হবে পরিচয়-ফলক। সংস্কার শেষ হতে লাগবে বছর পাঁচেক। খরচ হবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। ‘রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক বাহাদুর ট্রাস্ট’-এর সদস্য দীপেন মল্লিক এ কথা জানিয়ে বলেন, “একসঙ্গে এত রকম কাজ ১৭৮ বছরের প্রাচীন এই সংগ্রহশালায় এই প্রথম।”
৪৬ মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে এই প্রাসাদে এখন বিশাল মাপের অচল একটি ফোয়ারা ফের চালুর চেষ্টা হচ্ছে। তোলা হয়েছে জলাশয়ের জল। ঘাটের বাঁধানো ১৫টি সিঁড়ির শেষ পাঁচটি ঢেকে গিয়েছিল পাঁকে। তা ছেঁচে তোলা হচ্ছে। ফল্‌স সিলিংয়ে ব্যবহৃত ব্রোঞ্জের টালি খুলে চলছে ছাদ মেরামতি। সারাই হচ্ছে কাঠের বিম।
মূল ভবনের বিভিন্ন ফাটল ধরা, ভাঙা অংশ সারানো হয়েছে। সিমেন্টের প্রাচীন কারুকাজ সারাতে সংরক্ষণবিদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন অছি পরিষদের সদস্যরা। মূল ভবনের বাইরে পড়েছে ‘প্রাইমার’-এর প্রলেপ। ১৩ বছর আগে শেষ বার রং হয়েছিল। এ বার রং দীর্ঘস্থায়ী করতে ‘আরও ভাল মানের’ রং ব্যবহার করতে চায় মল্লিক-পরিবার। প্রাসাদে রয়েছে বিশ্বখ্যাত কিছু শিল্পীর কাজ। কিন্তু প্রদর্শক না দেখালে সেগুলির গুরুত্ব বোঝার উপায় নেই। জানার উপায় নেই ‘পেন্টিং রুম’-এ প্রায় ৭০ বর্গফুটের ক্যানভাসে রুবেন্সের ‘ম্যারেজ অফ সেন্ট ক্যাথিড্রাল’ কবে, কোথায় আঁকা। একই হাল সংগ্রহশালার দেওয়ালে ঝোলানো ‘দুষ্মন্ত-শকুন্তলা’-সহ রাজা রবি বর্মার বেশ কিছু তৈলচিত্রের। পরিচয়-ফলক লাগানো হলে এ সবের উত্তর মিলবে বলে মন্তব্য করেন দীপেনবাবু।
শিল্পকর্মের সম্ভার। নিজস্ব চিত্র
মার্বেল প্যালেস দেখভালের দায়িত্ব একটি অছি পরিষদের হাতে। ঐতিহ্যপূর্ণ ভবনের তালিকাভূক্ত এ শহরের বেশ ক’টি প্রাচীন বাড়ি আইনি জটিলতা অথবা আর্থিক সঙ্কটে রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না। মার্বেল প্যালেসের সেই সমস্যা নেই। মল্লিকবাড়ি সূত্রের খবর, তাঁরা সরকারের কাছে আর্থিক কোনও সহায়তা চান না। তবে, এ শহরে বেশ ক’টি সম্পত্তি আছে তাঁদের। সেগুলির কয়েকটিতে কর-ছাড় চেয়ে কলকাতা পুরসভাকে বেশ ক’বছর আগে চিঠি দিয়েছিলেন। উত্তর মেলেনি।
বিষয়টি নিয়ে আর তদ্বির করা হয়নি পরিবারের তরফে।
১৮৩৫ সালে প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে রাজেন্দ্র মল্লিক তৈরি করান মার্বেল প্যালেস। সেকালের নামকরা বিত্তশালী, নিঃসন্তান নীলমণি মিত্র দত্তক নেন রাজেন্দ্রকে। তার তিন বছর বয়সে মারা যান নীলমণিবাবু। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ গড়ায় আদালতে। আদালত ব্যারিস্টার জেমস উইয়ার হগকে নাবালক রাজেন্দ্রর অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব দেন। তিনি এবং নীলমণিবাবুর প্রয়াত স্ত্রী হীরামণি চেয়েছিলেন, রাজেন্দ্র মল্লিকবাড়ির নাম চিরস্থায়ী করুন। তারই ফলস্বরূপ নাকি এই প্রাসাদ। আসেন পাশ্চাত্যের স্থপতি ও বাস্তুকারেরা।
ঐতিহ্যের সংস্কার
নতুন করে সেজে উঠছে শতাব্দীপ্রাচীন মার্বেল প্যালেস।
ঘরে ঘরে সচল রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন ঘড়ি। প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ, ২৫ ফুট চওড়া নাচঘরের অন্যতম আকর্ষণ কাঠের সূক্ষ্ম কারুকাজ করা ফ্রেমে ২৫ ফুট বাই ১৫ ফুট মাপের দামি কাচের আয়না। আছে পেল্লায় ঝাড়বাতি, মিনে করা বিশাল মাপের নানা ছাঁদের ফুলদানি, মার্বেলে খোদাই নিখুঁত শিল্পকর্ম। কিন্তু কবে তৈরি, কী ভাবে এল, তার হদিস নেই। ‘রেড ভেন মার্বেল রুম’-এ গোলাপ কাঠের তৈরি ১২ ফুট উঁচু রানি ভিক্টোরিয়ার মূর্তি থেকে শুরু করে কাচের খোপে রাখা রবিশঙ্করের সেতার ও জোড়া তবলা, বারান্দায় রাখা প্রায় সাত ফুট উঁচু কারুকাজ করা হুঁকো এ সবেও কোনও তথ্যও নেই। এক সময়ে পরিবারের তরফে হীরেন মল্লিক সংগৃহীত দ্রষ্টব্যের তালিকা করেছেন। বিনামূল্যে তা বিলিও হয়েছে। এখন এ সব নেই। দীপেনবাবু বলেন, “প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ করতে একটু সময় লাগবে।”
কলকাতার ‘প্রাচীনতম’ চিড়িয়াখানা তৈরি হয় এই চত্বরেই। এখনও খোলা বাগানে রয়েছে কিছু পেলিক্যান, নানা রকম হরিণ, প্রাসাদের বারান্দার খাঁচায় অস্ট্রেলিয়ার ‘স্যামন রেড রোসিলা’, ‘রেড রোসিলা’, ‘ইস্টার্ন রোসিলা’, নানা দেশের পাখি। পর্যটন দফতরের লিখিত অনুমতি নিয়ে তবেই যেতে পারেন দর্শকেরা। তা না জেনে ফটক থেকে ফিরে আসতে হয় আগ্রহীদের অনেককে। দর্শকদের সিংহ ভাগই যদিও ভিন্‌ রাজ্যের অথবা বিদেশের। দর্শক-খাতায় গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩-র ৭ মার্চ প্রায় ১৩ মাসে মাত্র ৪১৮ জনের সই। শহরবাসীদের অধিকাংশের কাছেই এখনও অদেখা এই সংগ্রহালয়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.