এ বার শুধু নির্মাণ সংস্থাগুলির উপর নজরদারির জন্যই আলাদা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গড়তে বিল আনার কথা ভাবছে কেন্দ্র। এ নিয়ে কোনও অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রতিটি রাজ্যে আপিল আদালত গড়ার কথাও চিন্তাভাবনা করছে তারা। আবাসন কিংবা বাণিজ্যিক ভবন গড়ার নামে কোনও সংস্থা যেন বিনা অনুমতিতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যথেচ্ছ টাকা তুলতে না-পারে, তা নিশ্চিত করতেই কেন্দ্রের এই পরিকল্পনা বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সারদা-কাণ্ড সামনে আসার পর সারা দেশেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে আবাসন প্রকল্পের নামে সাধারণ মানুষকে চড়া সুদের লোভ দেখিয়ে টাকা তোলার বিষয়টি। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শুক্রবার লোকসভায় লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশ জুড়ে ২৭টি নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং সন্দেহজনক লগ্নি প্রকল্প বাজারে ছাড়ার অভিযোগ তারা পেয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক এবং তদন্তকারী সংস্থা। তার মধ্যে আবার ৭টির ক্ষেত্রে অভিযোগ খতিয়ে দেখছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি। অনুমতি না নিয়ে বাজার থেকে টাকা তোলার (কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম) জন্য সম্প্রতি আরও দু’টি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে যারা। তা ছাড়া মন্ত্রকের দাবি, ৮টি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।
আগামী দিনে এই সমস্যার বাড়বাড়ন্ত রুখতে কেন্দ্র কতটা মরিয়া, তা বোঝাতে গিয়েই নির্মাণ নিয়ন্ত্রকের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী নমো নারায়ণ মীনা। তিনি জানান, শুধুমাত্র নির্মাণ শিল্পের উপর নজরদারির জন্যই দ্রুত একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। পরিকল্পনা রয়েছে এ নিয়ে সংসদে বিল পেশ করার। তা ছাড়া, বেআইনি ভাবে টাকা তোলা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্মাণ সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ বা অভিযোগ থাকে, তার দ্রুত শুনানিরও বন্দোবস্ত করতে চান তাঁরা। মীনার দাবি, অর্থ মন্ত্রক চায়, এ জন্য প্রতি রাজ্যে তৈরি হোক আপিল আদালত। তাদের হাতে থাকুক পর্যাপ্ত ক্ষমতা। যাতে এ নিয়ে তৈরি হওয়া যে কোনও সমস্যা, অভিযোগ বা জটিলতা দ্রুত ও স্বচ্ছ ভাবে মিটিয়ে ফেলা যায়।
উল্লেখ্য, সারদা-কেলেঙ্কারির জেরে এ রাজ্যে পথে বসেছেন বহু সাধারণ মানুষ। ওই সংস্থায় টাকা রেখে সর্বস্ব খুইয়েছেন তাঁরা। এই প্রেক্ষাপটে সারদা গোষ্ঠীর নির্মাণ সংস্থা সারদা রিয়েলটি ইন্ডিয়াকে অবিলম্বে কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমে টাকা তোলা বন্ধ করতে বলেছে সেবি। নির্দেশ দিয়েছে তিন মাসের মধ্যে লগ্নিকারীদের টাকা ফেরানোর। তাই এই পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজারের সেবি কিংবা বিমার আইআরডিএ-র ধাঁচে এ বার শুধু নির্মাণ শিল্পের জন্য আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়ার পরিকল্পনাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। |