নানা রাজ্যের গ্রাম-শহর থেকে যে টাকা তুলেছিল সারদা গোষ্ঠী, তার অনেকটাই চলে গিয়েছে বিদেশে। হাওয়ালা চক্রের মাধ্যমে গত তিন বছর ধরে ওই গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন টাকা পাচার করেছেন, তদন্তে নেমে এমনটাই মনে করছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার অসমের গুয়াহাটিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এফআইআর দায়ের করে সারদা-কাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে। ইডি-র তরফে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দায়ের করা মামলাগুলিও খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হবে। সংস্থার রিজিওনাল স্পেশ্যাল ডিরেক্টর কারনেল সিংহ অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সংস্থা সূত্রে খবর, গত কয়েক মাস সারদা সংস্থার কর্ণধার ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিদেশ সফর
নিয়েও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ইমিগ্রেশন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
আর্থিক অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে সুদীপ্তবাবুকে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতারের পরেই টনক নড়ে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার। সারদা গোষ্ঠীর বিপুল পরিমাণ টাকা কোথায় গেল, তা নিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়। এরপরে গুয়াহাটিতে ‘প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট ২০০২’ অনুযায়ী মামলা করা হয়েছে সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের পরে ইডি কর্তাদের ধারণা, বিপুল পরিমাণের টাকা দেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। কীভাবে সেই টাকা বিদেশে গিয়েছে এবং সুদীপ্তবাবুকে কারা এ বিষয়ে সাহায্য করেছে তা জানতে চাইছে ইডি। সে কারণে সুদীপ্তবাবুকে শীঘ্রই নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর থেকেই সারদার বিধাননগরের অফিসে অনিয়মিত ছিলেন সারদা গোষ্ঠীর সুদীপ্ত ঘনিষ্ঠ এক কর্তা। তখন তিনি বেশ কয়েক বার বিদেশে গিয়েছেন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে তাঁর যাতায়াত ছিল। সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্যাভেল কোম্পানির হয়েই ওই কর্তা বিদেশে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
তদন্তকারীদের ধারণা, সারদার শ’দেড়েক কোম্পানির বেশ কয়েকটি সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরাও ওই হাওলার সঙ্গে জড়িত। সারদা গোষ্ঠীর ‘স্পনসরশিপ’-এ যে সমস্ত অনুষ্ঠান বিদেশে হয়েছিল তার আয়োজকদের দিকেও নজর রাখছেন ইডি কর্তারা। সেই অনুষ্ঠাগুলিতে কত টাকা খরচ হয়েছিল এবং নিয়ম মেনে সেই টাকা পাঠানো হয়েছিল কিনা তাও দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে। সুদীপ্তবাবু গত কয়েক মাসে ঘনঘন গুয়াহাটি যেতেন। বেশ কয়েক জন হাওয়ালা অপারেটরকে ওই সময়ে গুয়াহাটিতে আসা-যাওয়া করতে দেখেছেন গোয়েন্দারা। তবে ইডি-র গোয়েন্দাদের বক্তব্য, তদন্ত সবে শুরু হল।
সুদীপ্ত সেন ও তাঁর সহযোগীদের জেরা, প্রয়োজনীয় নথিপত্র পরীক্ষা এবং ফরেনসিক অডিট করার পরেই অপরাধ কতটা কী ঘটেছে, তা স্পষ্ট হবে। |