প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হল পশ্চিম মেদিনীপুরেও। ‘ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশেন প্রোগ্রাম’ কর্মসূচির মাধ্যমে এই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। আপাতত, যে সব গ্রামে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার মানুষের বসবাস, সেই গ্রামগুলোকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে ৮৩৬টি গ্রামে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে ১১ লক্ষ ৩৫ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন ব্যাঙ্ক কোন এলাকায় কাজ করবে, তা চূড়ান্ত হয়েছে। পুরো কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব পেয়েছে একটি সংস্থা। তারা কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট (সিএসপি) নামে গ্রামে গ্রামে এজেন্ট নিয়োগ করছে। এজেন্টরাই গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে ল্যাপটপের মাধ্যমে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করছেন। গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে বায়োমেট্রিক এটিএম কার্ড। এই কার্ড নিয়ে গ্রাহকরা ওই এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা তুলতে পারেন আবার জমা দিতেও পারেন। তবে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা তোলা যেতে পারে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “সব গ্রামে ব্যাঙ্কের শাখা খোলা সম্ভব নয়। তবে সব মানুষের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছনো জরুরি। তাই সরকারের এই উদ্যোগ।”
সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকাও উপভোক্তারা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পান। আবার, একশো দিনের কাজ প্রকল্পের মজুরিও ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মেলে। ‘ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশেন প্রোগ্রাম’ কর্মসূচি সব গ্রামে পৌঁছলে গরিব মানুষের সুবিধে হবে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। একশো দিনের কাজ প্রকল্পের মজুরির টাকা পেতে তাঁদের আর সমস্যায় পড়তে হবে না। শ্রমিকরা গ্রামের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট থেকেই টাকা তুলতে পারবেন। অন্য দিকে, প্রতিটি কৃষক পরিবার পিছু অন্তত ১টি করে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে জেলায় প্রায় ৩ লক্ষ কৃষককে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। জেলায় কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষের কাছাকাছি। প্রত্যন্ত গ্রামে ব্যাঙ্কি পরিষেবা চালু হলে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের উপভোক্তারাও সুবিধে পাবেন। ২০১২-১৩ সালে ১৬৭টি গ্রামের ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৯৭জন, ২০১৩- ’১৪ সালে ৩৩১টি গ্রামের ৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ১৫৮ জন, ২০১৪- ’১৫ সালে ৩৩৮টি গ্রামে ৪ লক্ষ৫০ হাজার ৮৬৮ মানুষ এই পরিষেবা পাবেন বলে আশা প্রশাসনের। অর্থাৎ মোট ৮৩৬টি গ্রামে ১১ লক্ষ ৩৫ হাজার ২৩ জন এই সুবিধা পাবেন।
অবশ্য, কাজের যা গতি তাতে ওই সময়ের মধ্যে ৮৩৬টি গ্রামে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছলেও তা চালু সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রশাসনের অন্দরেই। কাজ শেষ করতে অ্যাকশন প্ল্যানও তৈরি করা হয়েছে। যেখানে কোন অর্থ বর্ষে কতগুলো গ্রামে এই পরিষেবা পৌঁছনো হবে, তার চূড়ান্ত পরিকল্পনা রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, যে সব গ্রামে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার মানুষের বসবাস, সেই গ্রামগুলোয় এই কর্মসূচির কাজ ২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে শেষ হবে। তারপর যে সব গ্রামে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ মানুষের বসবাস, সেখানে এই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার (এলডিএম) সমরেন্দ্র সন্নিগ্রাহী বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিতেই সরকারের এই উদ্যোগ। এর ফলে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ গ্রামেই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পাবেন। অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতেও পারবেন, জমাও দিতে পারবেন।” তাঁর কথায়, “সময়ের মধ্যে যাতে কাজ শেষ হয়, সে জন্য নজরদারিও চালানো হচ্ছে।” |