সারদা-কর্তার সম্পত্তি-টাকার হদিস পেতে ঘাম ছুটছে পুলিশের
সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল গড়ার পাশাপাশি ওই সংস্থার সম্পত্তি নিলাম করে অর্থ সংগ্রহের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ এখন সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে। সারদার সম্পত্তি থেকে আমানতকারীদের পুরো প্রাপ্য মেটানো হয়তো সম্ভব হবে না, সে ব্যাপারে রাজ্য প্রশাসন ওয়াকিবহাল। তবুও সংস্থার বেশ কয়েক জন শীর্ষ কর্তার গ্রেফতারের পরে সারদা-মালিক সুদীপ্ত সেনের সম্পত্তি যাতে বেহাত না হয়ে যায়, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলির ঠিকুজি-কুষ্ঠি জানতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সবার আগে সারদার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য জোগাড় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। সেই তথ্য পাওয়া গেলে তা নিলাম করে কত টাকা উঠতে পারে, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে।” এখনও পর্যন্ত তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কত, তার হিসেব সারদা-মালিক দিতে পারেননি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশের দাবি, জেরায় সুদীপ্ত কবুল করেছেন, তাঁর কোথায় কত সম্পত্তি আছে, তার খুঁটিনাটি তিনি বলতে পারবেন না। তার কারণ, সংস্থার অর্জিত টাকায় বিভিন্ন সময় অন্যের নামেও সম্পত্তি কেনা হয়েছে। গোয়েন্দারা ঠিক করেছেন, সেই সম্পত্তির হদিস পেতে সুদীপ্তকে নিয়ে ওই সব এলাকায় যাবে পুলিশ। পুলিশ জানতে পেরেছে, সুদীপ্ত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রাজ্যের বাইরেও অনেক জমি-বাড়ি আছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “যে হেতু পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সারদা গোষ্ঠীর ব্যবসা ছড়ানো ছিল, তাই অনুমান করা যেতেই পারে সেই সব শহরেও সুদীপ্ত নামে কিংবা বেনামে, অথবা সংস্থার নামে সম্পত্তি কিনেছেন। সেই তথ্য জানতেই ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ত্রিপুরা ও অসমের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, সুদীপ্তর সম্পত্তি নিয়ে দু’-তিন দিনের মধ্যেই একটি রিপোর্ট জমার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা। সেই কারণে প্রায় ৭০ জন এজেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে সারদার ব্যবসা পদ্ধতি ও সম্পত্তির হদিস পাওয়ার চেষ্টা চলছে।” সূত্রের খবর, এজেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে জেরা চলছে সুদীপ্তদেরও। ইতিমধ্যে যে সব সম্পত্তির হদিস মিলেছে, গ্রামে গ্রামে গিয়ে তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তকারীরা কথা বলবেন আমানতকারীদের সঙ্গেও।
এ ছাড়াও, সুদীপ্তর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা। গোলপার্কে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সুদীপ্তর নিজের নামে সাতটি অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছে পুলিশ। সেগুলি খোলা হয়েছিল বছর তিন-চার আগে। পুলিশ জানায়, ওই সব অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, কী হারে সেখানে টাকা জমা পড়ত ও তোলা হত, তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাকাউন্টগুলির খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছে পুলিশ। কিন্তু শুধু এই সাতটি অ্যাকাউন্টেই যে সুদীপ্তর ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন থেমে থাকেনি, সে ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত তদন্তকারী অফিসারেরা। তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছেও এ ব্যাপারে আর্জি জানানো হচ্ছে।
সিবিআইকে লেখা চিঠিতে সুদীপ্ত নিজেই কবুল করেছেন, সারদার ছাতার তলায় ১৬০টি সংস্থা ছিল। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ধরা যেতে পারে সংস্থা পিছু অন্তত একটি অ্যাকাউন্ট আছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে। এখনও পর্যন্ত ৭০টি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছি আমরা। সেগুলির হাল-হকিকত জানতে সংশ্লিষ্ট সমস্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে আর্জি জানিয়েছি।” সংস্থার অন্য কোনও কর্মী কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুদীপ্তর জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট আছে কি না, তা-ও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
কাশ্মীরে ধরা পড়ার সময় সুদীপ্তর কাছে নগদ ২০ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু এত কম টাকা হাতে নিয়ে কী ভাবে ১২-১৩ দিন ধরে দেশের একাধিক শহরে ঘুরে বেড়ালেন, তা খুঁজতে গিয়ে পুলিশ জেনেছে, বেশির ভাগ হোটেলের বিল মেটাতে তাঁর ছায়াসঙ্গী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেছেন সুদীপ্ত সেন। যে সব অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে লাখ চারেক টাকা ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। সুদীপ্তরও একাধিক ব্যাঙ্কের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ছিল। সেগুলিও ফ্রিজ করতে চাইছে পুলিশ।
তবে জেরার সময় বেশ আত্মবিশ্বাসীই দেখাচ্ছে সুদীপ্তকে। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁর কৃতকর্ম নিয়ে যত বারই সুদীপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তত বারই তিনি বলেছেন, নতুন করে কিছু বলার নেই। এমন পরিস্থিতি হবে জেনেই কলকাতা ছাড়ার আগে সজ্ঞানে চিঠি দিয়েছিলেন সিবিআইকে। সেখানেই যা বলার বলে দিয়েছেন। পুলিশ বলছে, সারদা মালিক জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি কেনার জন্য তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা নিয়েছিলেন। তাঁদের আস্থা অর্জনের পরেই ব্যবসা বাড়িয়েছেন। তবে এখনও কোনও নেতার নাম তিনি করেননি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর।
বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরার পরে সুদীপ্ত ও দেবযানীকে নিউটাউন থানায় নিয়ে আসা হয়। তার পর থেকেই ওই থানা কার্যত দুর্গে পরিণত হয়েছে। যাঁরা অভিযোগ জানাতে আসছেন, তাঁদেরই কেবল ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতে দফায় দফায় জেরার পরে সুদীপ্ত ও দেবযানীকে থানার ক্যান্টিনে তৈরি রুটি ও তরকারি দেওয়া হয়। সুদীপ্ত ওই খাবার খেলেও দেবযানী বিস্কুট ছাড়া কিছু খাননি। তাঁদের রাখা হয়েছে পৃথক লক-আপে। রাতে শোওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানের কম্বল। লক-আপের বাইরে রাখা হয়েছে একটি টেবিল ফ্যান। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সারা রাত প্রায় জেগেই কাটান দেবযানী। তবে সুদীপ্ত অনেক রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙে সাড়ে ৭টা নাগাদ। সকালে চা বিস্কুট খাইয়ে ফের তাঁদের জেরা শুরু করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তবে পুলিশ নিজে থেকে খুব বেশি প্রশ্ন তাঁদের করছে না। তাঁরা যেটুকু নিজেরা বলছেন, সেটুকুই নথিবদ্ধ করা হচ্ছে।
দিনভর জেরার মধ্যেই এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ নিউটাউন থানায় আসেন সুদীপ্তর আইনজীবী সমীর দাস। মক্কেলের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলেন তিনি। থানা থেকে বেরিয়ে সমীরবাবু বলেন, “লক-আপে নয়, সুদীপ্তর সঙ্গে থানার এক অফিসারের ঘরে বসেই নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। ওঁর শরীর ঠিকই আছে।”
পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে থাকার পরে এ দিন সারদার আর এক কর্তা মনোজ নাগেলকে সল্টলেকের এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। এক আমানতকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে নাগেলকে আরও সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.