মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট ও আমানতকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একই ভাবে তাঁদের আমানতকারীদেরও রাজ্য সরকারকে আর্থিক প্যাকেজ দিতে হবে। শুক্রবার সকালে এই দাবি তুলে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘণ্টাখানেক পথ অবরোধ করলেন ‘সানমার্গ সুরাহা মাইক্রো ফিনান্স’ নামে একটি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার কয়েকশো এজেন্ট। একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা বীরভূমের অতিরিক্ত জেলাশাসকের (সাধারণ) কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন। এ দিন ওই সংস্থার কোনও কর্তার সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি।
সংস্থার এজেন্টদের দাবি, ওই সংস্থার তরফে গত ৩১ ডিসেম্বর আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারপরে আরও চার মাস কেটে গেলেও একজন আমানতকারীও টাকা পাননি। ওই সংস্থার এজেন্ট সিউড়ির কামারুজ্জামান মনির অভিযোগ, “রাজ্যের বিভিন্ন থানায় এবং প্রশাসনের কাছে অনেকদিন আগে থেকেই ‘সানমার্গ সুরাহা মাইক্রো ফিনান্স’ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর দিলীপরঞ্জন নাথের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করছে না, এমনকী প্রশাসনও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” সারদা-কাণ্ডের হোতা সুদীপ্ত সেনকে রাজ্য সরকার যে ভাবে সক্রিয় হয়ে গ্রেফতার করেছে, একই ভাবে তাঁরা সানমার্গ-এর কর্তাদেরও প্রতারণার দায়ে গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন। |
এমন অবস্থায় সংস্থার অধিকাংশ এজেন্টই এখন ঘরছাড়া। সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করা সিউড়ির কেন্দুঁয়া ফকিরপাড়ার বাসিন্দা শামসুজ্জামান মনির-এর দাবি, “সারদার মতোই আমাদের সংস্থাও একটি অর্থলগ্নি সংস্থা। সিগারেটের উপরে ১০ শতাংশ কর বৃদ্ধি করে মুখ্যমন্ত্রী সারদা গোষ্ঠীর আমানতকারীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে আমাদেরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যেন অন্যান্য মাদকজাত দ্রব্যের উপরেও ১০ শতাংশ কর বৃদ্ধি করে আমাদের সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীদেরও বাঁচান।” আমানতকারীদের ভয়ে ওই সব এজেন্টদের অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। সংস্থার আর এক এজেন্ট মহম্মদবাজারের সেকেড্ডার বাসিন্দা সফর আলি বলেন, “আমানতকারীরা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আমাদের উপরে চাপ দিচ্ছেন। অনেক এজেন্টই এখন ঘরছাড়া। এই পরিস্থিতিতে আমরা চাই সারদা গোষ্ঠীর মতো মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাশেও দাঁড়ান।”
আগামী ৭ দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে কোনও সদর্থক ভূমিকা না নিলে সংস্থার এজেন্টরা রাজ্য জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার তাঁদের ন্যায্য দাবি না মানলে আগামী ৬ মে সংস্থার সমস্ত জেলার এজেন্ট মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে আমরণ অনশনে বসবেন। এ দিনের আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার কলকাতায় প্রতিবাদরত এজেন্টদের উপরে পুলিশের লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা করেছেন। অন্য দিকে, বীরভূমের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) দেবীপ্রসাদ কর্ণম জানিয়েছেন, ওই এজেন্টদের দাবির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।”
এ দিকে শুক্রবার বোলপুরে নানা ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিভিন্ন শাখা দফতর আংশিক বন্ধ ছিল। কিছু কিছু জায়গায় আমানতকারীদের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টাকা ফেরতের জন্য জমায়েত হতে দেখা গিয়েছে। আমানতকারীদের মধ্যে টাকা ফেরত নেওয়ার হিড়িক দেখা গিয়েছে বোলপুরের রবীন্দ্রবীথি বাইপাস মোড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় থাকা এমন সংস্থাগুলির নানা শাখা অফিসেও। কয়েকটি অফিস বন্ধ থাকায় অনেক আমানতকারীকেই অবশ্য খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই মিছিল বের করে সারদা-কাণ্ডে রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে এ নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলল বোলপুর শহর ও ব্লক কংগ্রেস।
এ দিনই রামপুরহাটে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টকে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ আটক করেছে। দুর্গাপুরের এ জোন টাউনশিপের বাসিন্দা রাজীব সিংহ নামে ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন ‘রিলায়েন্স লাইফ ইন্স্যুর্যান্স’ নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্মীরা। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই যুবককে আটক করেছে বলে জানিয়েছে। |