মমতাকে চিঠি ক্যানসার রোগীদের
দোহাই দিদি, কর বাড়ুক, ধূমপানে উৎসাহ নয়
য়তো হাল্কা চালেই বলা। কিন্তু বক্তা মুখ্যমন্ত্রী এবং বলা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের সদর মহাকরণে, সংবাদমাধ্যমের সামনে। তাই ধূমপান নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উক্তি যেমন ক্যানসার রোগীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে, সেই সঙ্গে রাজনীতির কারবারিদের সমালোচনার খোরাকও জুগিয়েছে।
ভুক্তভোগী ধূমপায়ীরা এতটাই উদ্বিগ্ন যে, তিন ক্যানসার রোগী খোলা চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতাকে। চিঠির সংক্ষিপ্ত বয়ান: ‘আপনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনার তহবিল থেকে গরিব ক্যানসার রোগীদের সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। সিগারেটের উপরে বেশি কর বসানোর সিদ্ধান্ত ভাল। কিন্তু দোহাই দিদি, সিগারেটে উৎসাহ নয়! দয়া করে দেখবেন, আপনার মন্তব্যে সিগারেট-প্রেমীরা যেন কোনও ভাবেই উৎসাহিত না-হন। আমরা ভুক্তভোগী, তাই আপনাকে লিখলাম।’
ওই তিন ক্যানসার রোগী হলেন শম্ভুনাথ চক্রবর্তী, কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় আর ডালু সিংহ। মাত্রাছাড়া বিড়ি-সিগারেট খাওয়ায় ফুসফুস ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে তিন জনেরই। মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ওই কালান্তক রোগের সঙ্গে। বুধবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক টিভিতে দেখেছেন হাসপাতালের ঘরে বসেই। আর তার পর থেকেই উদ্বেগ বেড়েছে তাঁদের।
কী বলেছিলেন মমতা?
ডালু সিংহ ও শম্ভুনাথ চক্রবর্তী —নিজস্ব চিত্র
ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থা সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের জন্য বুধবার ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, সিগারেটের উপরে ১০ শতাংশ হারে কর বাড়িয়ে ১৫০ কোটি টাকা উঠবে। সাংবাদিক বৈঠকের শেষে খানিকটা হাল্কা চালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা একটু বেশি করে সিগারেট খাবেন। তা হলেই টাকাটা তাড়াতাড়ি উঠে আসবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য শুনেই তাঁকে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নেন ওই তিন ক্যানসার রোগী। চিকিৎসকদের হাত ঘুরে বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই চিঠি জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। এর মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই গুটখা ও পানমশলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। অন্য কয়েকটি রাজ্য গুটখা নিষিদ্ধ করেছে অনেক আগেই। টেলিভিশনে-সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য দেখানোতেও কড়াকড়ি চলছে। তার মধ্যে হাল্কা সুরে হলেও মহাকরণে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যে প্রমাদ গুনছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। পশ্চিমবঙ্গের তামাকজাত পদার্থ ব্যবহারের জেরে ক্যানসার-পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, সামান্য ভুলেও পরিণতি আরও খারাপ হতে পারে বলে স্বীকার করছেন তাঁরা।
ক্যানসার রোগীরা যেমন জনস্বার্থ নিয়ে উদ্বিগ্ন, রাজনীতির কারবারিরাও সরব সমালোচনায়। যেমন কংগ্রেসের মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরী। কর বসিয়ে ক্ষতিপূরণের তহবিল গড়ার জন্য মমতার ঘোষণা নিয়ে কটাক্ষ করে তাঁর বক্তব্য, মানুষ যাতে ধূমপান কমায়, সে-জন্য কর চাপানো একটা বিষয়। কিন্তু এই মমতা-মন্ত্র শুনে সাধারণ বিবেচনায় বহু মানুষ অবাক হয়েছেন। রেণুকা বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বলেন, “মমতা যে-ভাবে কর চাপিয়েছেন, তাতে প্রকারান্তরে মানুষকে আরও সিগারেট খেতে বলা হচ্ছে। লোকে যত বেশি সিগারেট খাবে, তত কর পাবে সরকার। অথচ মমতা ভুলে যাচ্ছেন, সিগারেট খেয়ে মানুষ অসুস্থ হলে স্বাস্থ্য পরিষেবায় রাজ্যের খরচই বাড়বে।”
রাজনীতির কটাক্ষের দিকে না-গিয়ে এই কথাটাই নিজেদের মতো করে, সহজ ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন হিসেবে পেশ করেছেন তিন ক্যানসার রোগী। ৫৪-৫৫ বছরের শম্ভুনাথবাবুর বাড়ি নদিয়ার চাকদহে। রেলে কাজ করেন। সিগারেট-বিড়ি ছাড়া চলত না। ২০১১ সালের অক্টোবরে ফুসফুসের ক্যানসার ধরা পড়ে। হাসপাতালে শুয়ে বললেন, “সিগারেটে কর বাড়লে বাড়ুক। তাতে কিছুটা বিক্রি কমতে পারে। কিন্তু কেউ যেন সিগারেট খেতে উৎসাহ না-দেন।” বাঁকুড়ার মির্জাপুরের বাসিন্দা, বছর সাতচল্লিশের কল্যাণবাবু এবং বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের বাসিন্দা, বছর পঞ্চান্নর ডালুবাবুরও একই কথা। কল্যাণবাবু বলেন, “টানা ১৫ বছর সিগারেট খেয়েছি। তামাক, দোক্তাও চলত। এখন আমি চাই, সিগারেটের বিক্রি বন্ধ হয়ে যাক।” ডালুবাবুর এখন কথা বলতেও কষ্ট হয়। কোনও রকমে বললেন, “খুব বিড়ি খেতাম। দিদি যেন সকলকেই বিড়ি-সিগারেট খেতে বারণ করেন।”
রাজ্যের ২০০৯-’১০ সালের ক্যানসার-নথি বলছে, শুধু কলকাতায় পুরুষ ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি (প্রায় ১৮ শতাংশ)। পশ্চিমবঙ্গে যত ক্যানসার রোগী আছেন, তাঁদের ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রেই ক্যানসারের কারণ সিগারেট-গুটখা-পানমশলার মতো তামাকজাত পদার্থ। পশ্চিমবঙ্গে পুরুষেরা যে-সব ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার প্রথমেই আছে ফুসফুসের ক্যানসার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ হল ধূমপান। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মহিলাদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে থাকায় তাঁদের মধ্যেও ফুসফুসের ক্যানসারের হার বাড়ছে। শিশু-সহ অনেকেই ‘প্যাসিভ স্মোকিং’ বা পরোক্ষ ধূমপানের জেরে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে ব্যথিত হয়েই তাঁর উদ্দেশে চিঠি লিখেছেন তিন ভুক্তভোগী।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.